আজকের দ্রুতগতির জীবনে, বিদেশ ভ্রমণ এখন আর অসাধ্য কিছু নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে দেখার ইচ্ছা অনেকেরই থাকে। আর এই ইচ্ছা পূরণে সঙ্গী হয় আমাদের পাসপোর্ট।
কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, পাসপোর্ট তৈরির সময় ভুল তথ্য লিখে ফেলা হয় অথবা পরবর্তীতে কিছু তথ্য পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। এমন পরিস্থিতিতে পাসপোর্ট সংশোধনের প্রয়োজন হয়।
আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করবো পাসপোর্ট সংশোধনের অঙ্গীকারনামা পূরণ করার নিয়ম সম্পর্কে।
আপনার যদি পাসপোর্ট সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরি। এখানে পাসপোর্ট সংশোধনের অঙ্গীকারনামা পূরণ করার নিয়ম সম্পর্কে সহজ ও সাবলীল ভাষায় আলোচনা করা হয়েছে। তথ্যগুলো সাবধানে পড়ে নিজেই সহজেই পাসপোর্ট সংশোধনের আবেদন করতে পারবেন।
পাসপোর্ট সংশোধনের অঙ্গীকারনামা কি?
আপনার পাসপোর্টে যদি ভুল তথ্য থাকে অথবা পরবর্তীতে কিছু তথ্য পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, তাহলে পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে। এই আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি, যা হলো পাসপোর্ট সংশোধনের অঙ্গীকারনামা।
এই অঙ্গীকারনামাটিতে আপনাকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে যে আপনার পাসপোর্টে কোন তথ্য পরিবর্তন করতে চান এবং কেন করতে চান। এছাড়াও, অঙ্গীকারনামায় আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যোগাযোগের তথ্য এবং পাসপোর্টের তথ্য সঠিকভাবে লিখতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ:
- যদি আপনার পাসপোর্টে ভুল বানান থাকে, তাহলে অঙ্গীকারনামায় সঠিক বানান উল্লেখ করতে হবে।
- যদি বিবাহের পর স্ত্রীর নাম যোগ করতে চান, তাহলে অঙ্গীকারনামায় বিবাহের সনদপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
পাসপোর্ট সংশোধনের অঙ্গীকারনামা ছাড়া আপনার আবেদন গ্রহণ করা হবে না। তাই, সঠিকভাবে এবং সাবধানে অঙ্গীকারনামা পূরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
কখন পাসপোর্ট সংশোধনের অঙ্গীকারনামা পূরণ করতে হবে?
আপনার পাসপোর্ট যদি নিম্নলিখিত ত্রুটিযুক্ত হয়, তাহলে পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে এবং অঙ্গীকারনামা পূরণ করতে হবে:
- নাম, জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, ঠিকানা ইত্যাদি ভুল: যদি আপনার পাসপোর্টে নাম, জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, ঠিকানা ইত্যাদি ভুল থাকে, তাহলে অবশ্যই সেগুলো সংশোধন করতে হবে। ভুল তথ্যের কারণে ভ্রমণের সময় বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন।
- পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানো: আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬ মাস আগে থেকে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন।
- পাসপোর্টে পেশা পরিবর্তন: যদি আপনার পেশা পরিবর্তন হয় এবং আপনি চান নতুন পেশাটি পাসপোর্টে উল্লেখ করতে, তাহলে পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
- বিবাহের পর স্ত্রীর নাম যোগ করা: বিবাহের পর যদি আপনি চান আপনার স্ত্রীর নাম পাসপোর্টে যোগ করতে, তাহলে পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
- طلاقের পর স্ত্রীর নাম অপসারণ করা: তালাকের পর যদি আপনি চান আপনার স্ত্রীর নাম পাসপোর্ট থেকে অপসারণ করতে, তাহলে পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
- পাসপোর্টে নতুন পাতা যোগ করা: যদি আপনার পাসপোর্টে পাতা শেষ হয়ে যায় এবং নতুন পাতা যোগ করতে চান, তাহলে পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
উল্লেখ্য যে, এছাড়াও আরও কিছু কারণে পাসপোর্ট সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। তাই, আপনার যদি মনে হয় যে আপনার পাসপোর্ট সংশোধন করা প্রয়োজন, তাহলে নিকটতম পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করে জেনে নিন।
পাসপোর্ট তথ্য সংশোধনী অঙ্গীকারনামা
২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পাসপোর্ট অফিস থেকে তথ্য সংশোধন এর একটি বিশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এবং সেই প্রজ্ঞাপণ এর মধ্যে ষ্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান সময়ে পাসপোর্ট সংশোধন করা যাবে। এবং এই সংশোধন এর কাজটি আপনি জাতীয় পরিচয় পত্র এবং জন্ম নিবন্ধন সনদ এর সাহায্য করতে পারবেন।
কিন্তুু আপনি যদি আপনার পাসপোর্ট এর মধ্যে থাকা কোনো ধরনের তথ্য সংশোধন করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে অনলাইন থেকে আবেদন করতে হবে।
কিন্তুু যখন আপনি অনলাইনে আপনার পাসপোর্ট এর তথ্য সংশোধন করবেন। তখন আবারও একটি লিখিত আবেদন করতে হবে। সেই সাথে আপনাকে একটি অঙ্গীকারনামা প্রদান করতে হবে।
এবং আপনারা যাতে করে অঙ্গীকারনামা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারেন। সে কারণে পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে একটি নমুনা অঙ্গীকারনামা প্রকাশ করা হয়েছে।
আপনি আরোও জনাতে পারবেন…
- ই পাসপোর্ট আবেদনের পূর্ব প্রস্তুতি
- পাসপোর্ট রিনিউ করার পর পুরাতন পাসপোর্ট কি করবেন?
- পাসপোর্ট কি? ই পাসপোর্টের সুবিধা কি
আর উক্ত নমুনা টি আপনি চাইলে সরাসরি পাসপোর্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। অথবা আপনি আপনার নিকটে থাকা কম্পিউটার এর দোকান থেকে উক্ত নমুনা ফরম টি সংগ্রহ করতে পারবেন।
পাসপোর্ট সংশোধনী অঙ্গীকারনামা ফরম
আমি উপরের আলোচনা তে আপনাকে বলেছি যে, আপনি যখন পাসপোর্ট সংশোধন করবেন। তখন আপনাকে একটি অঙ্গীকারনামা প্রদান করতে হবে।
যেখানে আপনার যাবতীয় তথ্য গুলো উল্লেখ করা থাকবে। যেমন, আপনার নিজের নাম, পিতা ও মাতার নাম, ধর্ম, জাতীয়তা ইত্যাদি।
আর নিচে আমি উক্ত অঙ্গীকারনামার ফরম এর পিকচার দিয়েছি। আপনি চাইলে এখান থেকেও উক্ত পাসপোর্ট সংশোধনী অঙ্গীকারনামা ফরম টি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
তো আপনি যেন অনলাইন থেকে পাসপোর্ট সংশোধনী অঙ্গীকারনামা ফরম ডাউলোড করতে পারেন। সে কারনে আমি উক্ত ফরম টি উপরে আপলোড করে দিয়েছি।
প্রয়োজন হলে আপনি উক্ত ফরমটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
কিভাবে পূরণ করবেন পাসপোর্ট সংশোধনী অঙ্গীকারনামা
যখন আপনি উপরে উল্লেখ করা পাসপোর্ট সংশোধনী অঙ্গীকারনামা ফরম ডাউনলোড করবেন। তারপরে আপনার মনে প্রশ্ন জাগবে যে, কিভাবে পাসপোর্ট সংশোধনী অঙ্গীকারনামা ফরম পূরণ করবেন।
তো আপনি চাইলে খুব সহজে উক্ত ফরমটি পূরণ করতে পারবেন।
- সেজন্য সবার প্রথমে আপনাকে আপনার নাম উল্লেখ করে দিতে হবে।
- এরপর আপনার পিতার নাম এবং মাতার নাম প্রদান করতে হবে।
- উক্ত তথ্য গুলো দেওয়ার পরে আপনি আপনার নিজস্ব ধর্ম উল্লেখ করে দিবেন।
- আপনি যদি অপ্রাপ্ত বয়স্কদের পাসপোর্ট সংশোধন করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে উক্ত ফরম এর মধ্যে সেই জন্ম নিবন্ধন সনদ এর মধ্যে থাকা ১৭ ডিজিট এর নম্বরটি প্রদান করবেন।
- এরপরে আপনাকে আপনার পাসপোর্ট এর মধ্যে যে নম্বর রয়েছে। সেটি আপনি সঠিকভাবে প্রদান করবেন।
- এবং তারপর আপনাকে আপনার পাসপোর্ট ইস্যু করার তারিখ উল্লেখ করে দিতে হবে।
তো আপনি যখন পাসপোর্ট সংশোধনী অঙ্গীকারনামা ফরম এর মধ্যে উপরের তথ্য গুলো প্রদান করবেন। তারপরে আপনাকে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করতে হবে।
অর্থ্যৎ, আপনি কোন ধরনের তথ্য গুলোর সংশোধন করতে চান। তা আপনাকে সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে। এখন আপনার পাসপোর্ট এর মধ্যে কোন তথ্য গুলো তে ভুল আছে। তার আপনাকে সেই ফরম এর বাম পাশের অংশে উল্লেখ করে দিতে হবে।
যেমন, আপনার নিজের নাম, পিতার / মাতার নাম, জন্ম তারিখ। এবং তার ঠিক ডানপাশে সেই ভুল তথ্যের সংশোধনী তথ্য গুলো উল্লেখ করে দিতে হবে।
Image Credit: Eservicesbd
আর এই পদ্ধতি অনুসরন করে, আপনি খুব সহজেই পাসপোর্ট সংশোধনী অঙ্গীকারনামা ফরম পূরণ করতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন, যখন আপনি পাসপোর্ট এর সংশোধন করবেন। তখন আপনার প্রদান করা তথ্য গুলো তে যেন পুনরায় কোনো ধরনের ভুল না হয়।
অনলাইনে পাসপোর্ট সংশোধন করার উপায় কি?
যখন আমাদের পাসপোর্ট পাওয়ার পর সেই পাসপোর্ট এর মধ্যে থাকা তথ্য গুলো তে ভুল থাকে। তখন অবশ্যই আপনাকে সেই ভুল তথ্য থাকা পাসপোর্ট সংশোধন করে নিতে হবে।
আর সেই সময়ে আমরা অনেকেই জানতে চাই যে, অনলাইনে কি পাসপোর্ট সংশোধন করা যায় কিনা। আর যদি যায়, তাহলে অনলাইনে পাসপোর্ট সংশোধন করার উপায় কি।
আর এখন আমি আপনাকে একটা কথা বলবো। সেটি হলো, আপনার নিকট এমআরপি পাসপোর্ট আছে নাকি ই পাসপোর্ট আছে সেটা বড় কথা নয়।
আপনি আরও পড়তে পারেন…
- বাচ্চাদের ই পাসপোর্ট করার নিয়ম
- ই-পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য আপনার যা জানা প্রয়োজন
- অনলাইন ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম
সবেচেয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনি যখন আপনার পাসপোর্ট সংশোধন করবেন। তখন অবশ্যই আপনাকে অনলাইন থেকে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য সঠিকভাবে আবেদন করতে হবে।
এবং যখন আপনি আপনার পাসপোর্ট রিনিউ করবেন। তখন আপনাকে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র এর মধ্যে থাকা যাবতীয় তথ্য গুলো নির্ভূলভাবে প্রদান করতে হবে।
আর যেহুতু আপনি আপনার পুরাতন পাসপোর্ট সংশোধন করবেন। সেহুতু আপনার আগের পাসপোর্ট এর মধ্যে যে তথ্য গুলো আছে। সেই তথ্য গুলো দেয়ার প্রয়োজন পড়বে।
পাসপোর্ট সংশোধন করার জন্য কি কি লাগে?
মূলত আপনি যখন আপনার কোনো পাসপোর্ট সংশোধন করবেন। তখন আপনার নিকট বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর দরকার হবে। আর সেই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো হলোঃ
- আপনার নিজস্ব জাতীয় পরিচয়পত্র বা আপনার নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ এর দরকার হবে।
- তবে বয়সভেদে কিংবা সনদভেদে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ এর প্রয়োজন হতে পারে।
- কিন্তুু আপনি যদি বিদেশে থেকে দুতাবাস এর মাধ্যমে পাসপোর্ট সংশোধন করার জন্য আবেদন করেন। তাহলে আপনার নিকট, Job ID Card / Student ID Card / Driving License এর প্রয়োজন হবে।
- আপনাকে অবশ্যই একটি লিখিত আবেদন করতে হবে।
- সেই সাথে আপনাকে একটি অঙ্গীকারনামা পূরণ করতে হবে।
- সবশেষে আপনার নিকট যদি কোনো পুরাতন পাসপোর্ট থাকে। তাহলে সেই পুরাতন পাসপোর্ট এর কপি প্রদান করতে হবে।
তো আপনি যদি আপনার পাসপোর্ট এর সংশোধন করতে চান। তাহলে আপনার যে সকল ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হবে।
সেই ডকুমেন্টস গুলোর তালিকা উপরে দেওয়া হলো। আর যখন আপনি আপনার পাসপোর্ট সংশোধন করতে চাইবেন। তখন অবশ্যই এই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো আপনার সাথে রাখবেন।
পাসপোর্ট সংশোধন অঙ্গীকারনামা নিয়ে কিছুকথা
যখন আপনি আপনার পাসপোর্ট সংশোধন করবেন। তখন আপনার নিকট কোন কোন কাগজ পত্র এর দরকার হবে।
এবং কিভাবে আপনি আপনার পাসপোর্ট সংশোধন অঙ্গীকারনামা পূরণ করবেন। আজকের লেখাতে সেই বিষয় গুলো কে খুব সহজ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরোও জনাতে পড়তে পারেন…
- হারানো পাসপোর্ট ফিরে পাওয়ার উপায়
- ১০ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্ট কারা পাবেন এবং কারা পাবেন না?
- সরকারি চাকরিজীবিদের ই পাসপোর্ট করার নিয়ম
তবে এরপরও যদি আপনার পাসপোর্ট সংশোধন অঙ্গীকারনামা ফরম পূরণ করতে কোন ধরনের সমস্যা হয়।
তাহলে আপনি নিচের কমেন্ট সেকশনে একটি কমেন্ট করে জানিয় দিবেন। তাহলে আমি আপনার সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবো।
আর এতক্ষন ধরে আমাদের পাশে থাকার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অনেক অনেক ধন্যবাদ। নতুন কিছু জানতে হলে আমাদের সাথে থাকুন।
পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য লিখিত দিতে হবে।লিখিতটা কী?ফরম নাকি খালি পেজে দরখাস্ত?
ফরম আছে। আপনাকে ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে।
আমার পাসপোর্ট মেয়াদ শেষ তারমানে রিনিউ করতে হবে আর আমার নামের NID: SHAIKH MD. SALEH SHAHRIAR
PASSPORT: SHAIKH MOHAMMAD SALEH SHAHRIAR
দেওয়া এখন আমি আইবি কার্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি কি করতে হবে আর কত টাকা খরচ হতে পারে।
আবেদন ফরমে আপনার ভূল এবং সঠিক নাম উল্লেখ করে দিবেন।