ঘরে বসে অনলাইনে এ চালান পরিশোধ করার নিয়ম : আমরা অনেকেই জানিনা যে, অটোমেটেড চালান কাকে বলে। আবার আপনি এমন অনেক মানুষ কে খুজে পাবেন।
যারা এখনও জানেনা যে, এখন ঘরে বসে অনলাইনে এ চালান পরিশোধ করা যায়। আর সেই অজানা মানুষ গুলোকে জানিয়ে দেওয়ার জন্যই আজকের এই আর্টিকেল টি লেখা হয়েছে।
কারন, আজকে আমি আপনাকে ঘরে বসে অনলাইনে এ চালান পরিশোধ করার নিয়ম গুলো ধাপে ধাপে দেখিয়ে দিবো।
আপনি আরোও জানতে পারবেন…
- কিভাবে আয়কর কম দেয়া যায় সেগুলো জানুন
- টিন সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স চেক করার নিয়ম
অটোমেটেড চালান সিস্টেম বা এ চালান কি?
সবার শুরুতে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। সেটি হলো, অটোমেটেড চালান সিস্টেম বা এ চালান কি।আর যখন আপনি এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারবেন। তখন আপনার পরবর্তী আলোচনা গুলো বুঝতে সুবিধা হবে।
তো বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ধরনের সেবার ফি গুলো অনলাইনে পরিশোধ করার পদ্ধতি চালু করেছে।
যার মাধ্যমে আপনি নিজের ঘরে বসে অনলাইনে এই ধরনের চালান গুলো পরিশোধ করে দিতে পারবেন। তবে আপনি এখন সবক্ষেত্রে এই চালানের ব্যবহার করতে পারবেন না।
কেননা, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ সরকার শুধুমাত্র ভ্যাট, ট্যাক্স. পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করার জন্য এই ধরনের অনলাইন পদ্ধতির সুবিধা চালু করেছে।
এবং সময়ের সাথে সাথে আরো অনেক ক্ষেত্রে এই ধরন এর অটোমেটেড চালান পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হবে।
কেন ঘরে বসে অনলাইনে চালান পরিশোধ করবেন?
আপনি যদি ব্যাংক থেকে আপনার প্রয়োজনীয় চালান গুলো জমা দিতে যান। তাহলে আপনাকে প্রথমে দীর্ঘ লম্বা লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হবে।
তারপর বিভিন্ন ঝামেলার মাধ্যমে চালান পরিশোধ করতে হয়। তাছাড়া এই পদ্ধতি তে যদি চালান পরিশোধ করা হয়, তাহলে কিন্তুু পদ্ধতিতে আমানতকারীরা তাদের সঠিক পরিচয় দেয়না।
যার ফলে যে ব্যক্তিরা লেনদেন করে তাদের সঠিক পরিচয় সংরক্ষন করা হয়না। শুধু তাই নয়, বরং এই কারণে আমাদের বাংলাদেশ সরকার এর যে অর্থ বিভাগ আছে।
সেখানেও স্বয়ক্রিয় ভাবে এই লেনদেন করা ব্যক্তিদের তথ্য গুলো জেনে নেওয়া খুব কঠিন কাজ হয়ে পড়ে। সেজন্য জনগনের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।
যাতে করে মানুষ খুব সহজে তাদের প্রয়োজনীয় ফি গুলো পরিশোধ করতে পারে। আশা করি, উক্ত বিষয় টি সম্পর্কে আপনি পরিস্কার ধারনা পেয়ে গেছেন।
অনলাইনে এ চালান পরিশোধ করার নিয়ম | Pay A Challan Online
এতক্ষনের আলোচনা থেকে আমরা অটোমেটেড চালান সিস্টেম কি সে সম্পর্কে জানলাম। এবং কেন এই চালান পদ্ধতির প্রয়োজন তা জানতে পারলাম।
তো এবার আমাদের জানতে হবে যে, কিভাবে আপনি অনলাইনে চালান পরিশোধ করতে পারবেন।
তো বর্তমান সময়ে যদি আপনি অনলাইন থেকে এ চালান পরিশোধ করতে চান। তাহলে আপনি মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে উক্ত কাজ টি করতে পারবেন।
যেমন, আমরা এখন আর্থিক লেনদেন করার জন্য বিকাশ বা নগদ এর মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতি ব্যবহার করি। ঠিক তেমনি ভাবে আপনি এখন বিকাশ কিংবা রকেট এর মতো মোবাইল ব্যাংকিং এর সাহায্য এ চালান পরিশোধ করে দিতে পারবেন।
অথবা বর্তমান সময়ে সোনালী ব্যাংক এর অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে সুবিধা চালু করেছে। চাইলে আপনি অনলাইনে চালান পরিশোধ এর জন্য সোনালী ব্যাংকের এর পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।
কোন মাধ্যমে অনলাইনে এ চালান পরিশোধ করবো?
তো বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ সরকার এমন অনেক মাধ্যম সৃষ্টি করেছে। যে গুলো কে কাজে লাগিয়ে আমরা এখন এ চালান অনলাইনে পরিশোধ করতে পারবো। আর সেই মাধ্যম গুলো হলো,
- মোবাইল ব্যাংকিং (রকেট এবং বিকাশ),
- যেকোনো ধরনের ব্যাংক এর ভিসা কার্ড দিয়ে,
- ডিবিবিএল (DBBL) নেক্সাস কার্ড এর মাধ্যমে,
- সোনালী ব্যাংক একাউন্ট থেকে,
- ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট থেকে,
উপরে আপনি যে সকল মাধ্যম দেখতে পাচ্ছেন। সেগুলোর সাহায্য আপনি এখন নিজের ঘরে বসে এ চালান পরিশোধ করতে পারবেন। তবে ভবিষ্যতে আরো অনেক ধরনের মাধ্যম চালু হবে।
এ চালান লেনদেনের সময়
দেখুন, আমরা সকলেই জানি যে, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম গুলো নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলমান থাকে।
ঠিক তেমনি ভাবে আপনি যদি নিজের ঘরে বসে অনলাইনে এ চালান পরিশোধ করতে চান। তাহলেও কিন্তুু আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ে এই চালান পরিশোধ এর কাজটি করতে হবে।
আর সেজন্য সকল মানুষের লেনদেন করার একটি সময় নির্ধারন করে দেওয়া হয়েছে। সেটি হলো, আপনাকে সকাল ১০ টা থেকে শুরু করে বিকাল ৪ টার মধ্যে লেনদেন সম্পন্ন করতে হবে।
আর উক্ত সময় এর বাইরে আপনি কোনো ভাবেই এ চালান পরিশোধ করতে পারবেন না। তবে পরবর্তীতে এই সময় কে বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যাবতীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
অনলাইনে এ চালানের মাধ্যমে ই পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার নিয়ম
আমি শুরুতেই আপনাকে একটা কথা বলেছি। সেটি হলো, বর্তমান সময়ে আপনি শুধুমাত্র আপনার ট্যাক্স, ভ্যাট এবং পাসপোর্ট এর এ চালান পরিশোধ করতে পারবেন।
সে কারণে এবার আমি আপনাকে অনলাইনে এ চালানের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফি দেওয়ার পদ্ধতি গুলো দেখিয়ে দিবো। তো চলুন এবার সে সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় গুলো ধাপে ধাপে দেখে নেওয়া যাক।
প্রথম ধাপঃ যদি আপনি নিজের ঘরে বসে অনলাইনে পাসপোর্ট এ চালান পরিশোধ করতে চান। তাহলে আপনাকে সবার প্রথমে বাংলাদেশ অটোমেটেড এ চালান সিস্টেম এর মধ্যে প্রবেশ করতে হবে।
আপনি চাইলে গুগল থেকে উক্ত সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারবেন। নতুনবা এখানে ক্লিক করেও সরাসরি উক্ত সিস্টেম এর যেতে পারবেন।
দ্বিতীয় ধাপঃ তো এবার আপনাকে “পাসপোর্ট” নামক অপশন এর মধ্যে ক্লিক করতে হবে। তারপর আপনার সামনে “ই পাসপোর্ট ফি” নামের একটি অপশন আসবে।
আপনি যখন সেখানে ক্লিক করবেন। তারপর আপনার সামনে নতুন একটি উইন্ডো ওপেন হবে।
তৃতীয় ধাপঃ এবার আপনাকে আপনার পাসপোর্ট এর যাবতীয় তথ্য গুলো প্রদান করতে হবে। যেমন, আপনার পাসপোর্ট এর ধরন কি, মেয়াদ কত বছরের, কত পৃষ্ঠার পাসপোর্ট ইত্যাদি তথ্য গুলো প্রদান করতে হবে।
আর যখন আপনি এই তথ্য গুলো দিবেন। তারপর আপনাকে ভ্যাট সহো কত টাকা দিতে হবে, সেটির পরিমান দেখতে পারবেন এবং আপনাকে Ok লেখাতে ক্লিক করতে হবে।
চতুর্থ ধাপঃ তারপর আপনি আসলে যে ব্যক্তির পাসপোর্ট এর জন্য এ চালান দিতে চান। সেই ব্যক্তির ভোটার আইডি কার্ড এর নম্বর প্রদান করতে হবে।
তবে যদি আপনার কাছে জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকে। তাহলে আপনাকে আপনার জন্ম নিবন্ধন এর নম্বরটি প্রদান করতে হবে। আর তারপরে আপনাকে অনলাইন পেমেন্ট অপশন এর মধ্যে ক্লিক করতে হবে।
পঞ্চম ধাপঃ এবার আপনার সামনে বিভিন্ন ধরনের পেমেন্ট গেটওয়ে আসবে। যেমন, অনলাইন ব্যাংকিং এবং মোবাইল ব্যাংকিং আর আপনি যদি বিকাশে পেমেন্ট করতে চান, তাহলে বিকাশ সিলেক্ট করবেন।
কিংবা আপনি যদি রকেটে পেমেন্ট করতে চান, তাহলে সেটি সিলেক্ট করে দিবেন।
তারপর আপনাকে আপনার পাসপোর্ট এর নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে। এবং যখন আপনি সফল ভাবে পেমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।
তখন অবশ্যই আপনি আপনার পেমেন্ট কপিটি ডাউনলোড করে রাখবেন। যেন পরবর্তী প্রয়োজনে সেটি প্রিন্ট করে নিতে পারেন।
আপনি আরোও দেখতে পারেন…
- জন্ম নিবন্ধন যাচাই সনদ ডাউনলোড করার উপায়
- অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট যাচাই করার নিয়ম
- জন্ম তারিখ দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম
বিকাশের মাধ্যমে এ চালান পরিশোধ করার নিয়ম
বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশে বিকাশ হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা। তো কিভাবে আপনি বিকাশ থেকে অনলাইনে এ চালান পরিশোধ করতে পারবেন।
এবার আমি আপনাকে সে ধাপ গুলো দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। আর আপনি যদি বিকাশের মাধ্যমে এ চালান পরিশোধ করতে চান।
তাহলে আপনার পূর্বের মতো পেমেন্ট গেটওয়ে থেকে অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতি সিলেক্ট করে দিতে হবে।। এখন আপনি যদি বিকাশে পেমেন্ট করতে চান। তাহলে আপনাকে Mobile Banking নামক অপশনে ক্লিক করতে হবে।
তারপর নিচের দিকে বিকাশ এর আইনকন দেখতে পারবেন। আপনাকে সেই আইকন এর মধ্যে ক্লিক করতে হবে। তারপর আপনার সামনে নতুন আরেক টি পেজ ওপেন হবে। যেখানে ডানপাশে আপনি Pay With Bkash এর একটি বাটন দেখতে পারবেন।
আপনি আরোও জানতে পারবেন
- পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম
- ই পাসপোর্ট আবেদনে নামে ডট ব্যবহার করা যাবে কিনা
- লাল, নীল ও সবুজ পাসপোর্ট কাদের জন্য
আর যখন আপনি উক্ত অপশনে ক্লিক করবেন। তারপর আপনাকে আপনার বিকাশ একাউন্ট যুক্ত থাকা মোবাইল নম্বরটি দিবেন।
এখন আপনার সেই মোবাইল নম্বরে একটি ওটিপি কোড আসবে। যে ওটিপি কোডটি আপনাকে বসিয়ে দিতে হবে।
আর যখন আপনি সেই কোড টি বসিয়ে দিয়ে ভেরিফিকেশন করবেন। তারপর আপনি সফল ভাবে বিকাশ একাউন্ট থেকে এ চালান পরিশোধ করতে পারবেন।
রকেটের মাধ্যমে এ-চালান পরিশোধ করার নিয়ম
কিন্তুু আপনি যদি রকেট এর মাধ্যমে এ চালান পরিশোধ করতে চান। তাহলে আপনাকে একই পদ্ধতি ফলো করতে হবে।
সেজন্য পেমেন্ট গেটওয়ে সিলেক্ট করার সময় মোবাইল ব্যাংকিং নামক বাটনে ক্লিক করতে হবে। তারপর রকেট এর আইকনে ক্লিক করতে হবে।
আর যখন আপনি রকেট এর আইকনে ক্লিক করবেন। তারপর আপনাকে ডাচ বাংলা ব্যাংক এর অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়েতে নিয়ে যাবে।
তো এখন আপনাকে আপনার সেই মোবাইল নম্বরটি প্রদান করতে হবে। যে মোবাইল নম্বর এর মধ্যে রকেট একাউন্ট চালু করা আছে।
আর আপনি তো বেশ ভালো করেই জানবেন যে, রকেট একাউন্টে মোবাইল নম্বরের সাথে আরো একটি বেশি নম্বর যুক্ত থাকে।
তাই এখানে আপনি আপনার মোবাইল নম্বর সহো বাকি ১ টি ডিজিট মিলে মোট ১২ টি ডিজিট বসিয়ে দিবেন।
কিভাবে এ চালান যাচাই ও প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করবেন – A Challan Check or Verify
যখন আপনি সফলভাবে অনলাইনে এ চালান পরিশোধ করবেন। তারপর অবশ্যই আপনাকে সেই চালান ভেরিফিকেশন করে নিতে হবে।
তাহলে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে, আপনি সঠিক ভাবে এ চালান পরিশোধ করতে পেরেছেন। আর উক্ত কাজটি করার জন্য আপনাকে এই লিংকে ক্লিক করতে হবে। তারপর এখানে থাকা যাবতীয় তথ্য গুলো প্রদান করতে হবে।
এবং উক্ত তথ্য গুলো দেওয়ার পর যখন আপনি Verify নামক অপশন এর মধ্যে ক্লিক করবেন। তারপর আপনি আপনার এ চালান যাচাই করতে পারবেন।
এবং প্রয়োজনে আপনি আপনার চালান কপি এখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
আমাদের শেষকথা
আজকে আমি আপনাকে ঘরে বসে অনলাইনে এ চালান পরিশোধ করার নিয়ম গুলো দেখিয়ে দিয়েছি। আশা করি, উপরে উল্লেখিত ঘরে বসে অনলাইনে এ চালান পরিশোধ করার নিয়ম আপনি খুব ষ্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছেন।
তবে এরপরও যদি আপনার কোনো ধরনের সমস্যা হয়। তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। আর আপনি যদি চালান সম্পর্কিত আরো কোনো অজানা তথ্য জানতে চান। তাহলে আমাদের ওয়েব সাইটে নিয়মিত ভিজিট করবেন।
ধন্যবাদ, এতক্ষন ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।