আপনি যদি জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করতে চান। তাহলে আপনাকে বাংলাদেশ সরকারি জন্ম ও মৃত্যু সনদ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
এবং সেই ওয়েবসাইটে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো দিয়ে। আপনি আপনার ভুল তথ্য থাকা জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে পারবেন।
তবে আপনি যদি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনার আগে থেকেই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন রেজিস্ট্রেশন করা থাকতে হবে।
আর আজকে আমি আপনাকে ধাপে ধাপে দেখিয়ে দিব, কিভাবে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করা যায়।
তো আপনি যদি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করার নিয়ম গুলো জানতে চান। তাহলে নিচের আলোচনা গুলো তে চোখ রাখুন।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম
প্রিয় পাঠক, আমরা এমন অনেক মানুষ আছি, যাদের জন্ম নিবন্ধন এর মধ্যে ভুল তথ্য রয়েছে। হয়তোবা কারো নামের বানান ভুল, কারো বয়স ভুল অথবা পিতা, মাতার নাম ভুল থাকে।
আর আপনার জন্ম নিবন্ধনে যদি ভুল তথ্য থাকে। তাহলে কিন্তু আপনি পরবর্তীতে অনেক সমস্যার মধ্যে পড়বেন।
কিন্তুু আপনি যদি আপনার সেই ভুল তথ্য থাকা জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে নেন। তবে আপনার কোন ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
আপনি আরোও দেখতে পারেন…
- জন্ম নিবন্ধন ফি কত টাকা – Birth Certificate Fees
- কিভাবে পুনরায় জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্র প্রিন্ট করবেন
- নিজেই জন্ম নিবন্ধন নম্বর ১৬ ডিজিট থেকে কিভাবে ১৭ ডিজিট করবেন
তো যাদের জন্ম নিবন্ধনে ভুল তথ্য রয়েছে, তাদের চিন্তার কোন কারণ নেই। কেননা আপনি চাইলে খুব সহজেই অনলাইনে আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে পারবেন।
কারণ আপনি যদি এই ওয়েব সাইটে bdris.gov.bd/br/correction ভিজিট করেন, তাহলে আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন এর তথ্য গুলো দিয়ে। উক্ত ওয়েবসাইটে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করতে পারবেন।
উপরের লিংকে এ যাওয়ার পর আপনার জন্মনিবন্ধনের নুম্বার এবং জন্ম তারিখ লিখে অনুসন্ধান লেখাতে ক্লিক করতে হবে।
আর যখন আপনি সঠিক ভাবে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করবেন। তখন সেই আবেদনের কপি প্রিন্ট করে আপনার ইউনিয়ন পরিষদ অথবা আপনার গ্রামের পৌরসভা কার্যালয় এর মধ্যে গিয়ে জমা দিবেন।
এবং আপনার এই আবেদন পত্রটি জমা দেওয়ার পরে। কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করে তারপর আপনার ভুল তথ্য থাকা জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে দিবে।
তবে আপনি কিভাবে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করবেন। এবার আমি আপনাকে ধাপে ধাপে সেই নিয়ম গুলো জানিয়ে দিব।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করার আগে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করে নিন যে আপনার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন আছে কিনা।
আপনাকে সহজভাবে বোঝানোর জন্য জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন এর প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে দেখানো হলো।
আর আপনি অবশ্যই এই নিয়ম গুলো অনুসরণ করে আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করার চেষ্টা করবেন।
ধাপ ১- জন্ম নিবন্ধন ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন
দেখুন, আপনি যেহেতু অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করবেন। সেহেতু অবশ্যই আপনার কাছে একটি মোবাইল অথবা কম্পিউটার থাকলে হবে।
তারপরে আপনাকে সেই ডিভাইসে ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে বাংলাদেশ জন্ম ও মৃত্যু সনদ এর অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে হবে।
আর আপনি চাইলে সরাসরি এখানে ক্লিক bdris.gov.bd করে সেই ওয়েবসাইট এর মধ্যে প্রবেশ করতে পারবেন।
নতুবা আপনি যদি গুগলের মধ্যে bdris.gov.bd লিখে সার্চ করেন। তাহলেও আপনি এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবেন। তো যখন আপনি এই ওয়েবসাইটের মধ্যে প্রবেশ করবেন। তখন আপনি বিভিন্ন অপশন দেখতে পারবেন।
তবে এই অপশন গুলোর মধ্যে যেখানে জন্ম নিবন্ধন থেকে “জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন আবেদন” লেখা থাকবে আপনি সেই অপশন এর মধ্যে ক্লিক করবেন।
এবং এরপরে আপনি নতুন একটি পেজে প্রবেশ করবেন। তবে উপরের দেওয়া লিংকে ক্লিক করলে আপনি সরাসরি সেই পেজে চলে যাবেন।
ধাপ ২- নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে জন্ম নিবন্ধন তথ্য বের করুন
তো এই নতুন পেজ এর মধ্যে আপনার সামনে দুইটি ফাঁকা বক্স আসবে। এখানে প্রথম ফাঁকা বক্স এর মধ্যে আপনার জন্ম সনদ এর ১৭ ডিজিটের নম্বরটি বসিয়ে দিবেন।
তার ঠিক নিচেই আপনি জন্ম তারিখ এর একটি ফাঁকা বক্স দেখতে পারবেন। এখন আপনার জন্ম সনদে যে জন্ম তারিখ রয়েছে সেটি এখানে বসিয়ে দিবেন। তার সাথে নিচে আপনি ক্যাপসা থাকবে ঐগুলা লিখতে হবে সঠিকভাবে।
আর তারপর আপনি “অনুসন্ধান” নামক বাটন এর মধ্যে ক্লিক করবেন। আর এই বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথেই আপনি একটু নিচে আপনার পিতা ও মাতার নাম দেখতে পারবেন।
যদি এখানে আপনার তথ্য গুলো সঠিক দেখায়। তাহলে আপনি সবার ডান পাশে “নির্বাচন করুন” নামক বাটনের মধ্যে ক্লিক করবেন। আর তারপরে আপনি পুনরায় নতুন একটি পেজে প্রবেশ করবেন।
ধাপ ৩- নিবন্ধন কার্যালয় বাছাই করুন
এবার আপনার সামনে ছোটখাটো একটি ফরম চলে আসবে। যেখানে আপনার নিবন্ধন কার্যালয় এর ঠিকানা গুলো সঠিক ভাবে উল্লেখ করতে হবে।
আর এই ফরম এর মধ্যে সবার প্রথমেই দেশ হিসাবে বাংলাদেশ সিলেক্ট করবেন। এরপরে আপনার বিভাগ সিলেক্ট করবেন। সেই সাথে আপনার জেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা অফিস এই যাবতীয় তথ্য গুলো একবারে নির্ভুল ভাবে দিবেন।
কেননা এখানে যদি আপনি ভুল তথ্য দেন। তাহলে আপনি কোন ভাবেই আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করতে পারবেন না।
তো যখন আপনি এই ফর্ম এর মধ্যে আপনার নিবন্ধন কার্যালয় এর ঠিকানা গুলো নির্ভুল ভাবে প্রদান করবেন। তখন আপনাকে পরবর্তী নামক অপশনের মধ্যে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ ৪- সংশোধনের তথ্য বাছাই করুন
এবার আপনি যে নতুন পেজের মধ্যে প্রবেশ করবেন, সেটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এবার আপনাকে উল্লেখ করতে হবে যে, আপনি আসলে কি কারনে আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে চাচ্ছেন।
তাই এখানে যে সকল তথ্য গুলো দিবেন, সে গুলো সর্তকতার সহিত দেয়ার চেষ্টা করবেন।
আর এই নতুন পেজের মধ্যে আপনি সবার উপরেই “বিষয়” নামের একটি অপশন দেখতে পারবেন। এই অপশন এর ডান পাশে “নির্বাচন করুন” নামক ড্রপডাউন থেকে।
আপনার আসলে কি কারনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে হচ্ছে তা উল্লেখ করে দিবেন। যেমন, আপনি যদি আপনার নাম ইংরেজিতে করতে চান।
তাহলে অবশ্যই আপনি নাম “ইংরেজি তে” নামক অপশনের মধ্যে ক্লিক করবেন।
আর এই বিষয়টি সিলেক্ট করার পরে তার ঠিক নিচে আপনি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার আরও অনেক অপশন দেখতে পারবেন।
যেমন, আপনার দেশের নাম, ডাকঘর এর নাম, গ্রাম পাড়া বা মহল্লা, বাসা, সড়ক ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য গুলো সঠিকভাবে প্রদান করবেন।
তবে মনে রাখবেন, এখানে প্রদান করা তথ্য গুলো তে যেন কোন ধরনের ভুল না হয়।
ধাপ ৫- সংশোধিত তথ্য ও সংশোধনের কারণ দিন
এর পরবর্তী ধাপে আপনাকে জন্ম নিবন্ধন এর তথ্য সংশোধন করার কারণ টি উল্লেখ করতে হবে। আর এখানে অবশ্যই আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ এর তথ্য গুলো “ভুলভাবে লিখিবদ্ধ হয়েছে” – এটি সিলেক্ট করে দিবেন।
এর পাশাপাশি আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদের মধ্যে যে জন্ম তারিখ রয়েছে। তার বছর, দিন এবং মাস গুলো সঠিকভাবে উল্লেখ করে দিবেন।
ধাপ ৬- ঠিকানা লিখুন
এবার আপনি আপনার ঠিকানা দেওয়ার বিরাট একটা ফর্ম দেখতে পারবেন। যেখানে আপনার জন্ম স্থানের ঠিকানা গুলো উল্লেখ করতে হবে।
এর পাশাপাশি আপনার স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা এই যাবতীয় তথ্য গুলো সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে। আর এখানে আপনাকে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। সেটি হল, আপনার জন্ম নিবন্ধন এর মধ্যে ইতি মধ্যেই ভুল তথ্য রয়েছে।
এবং আপনি সেই তথ্য সংশোধন করার জন্য আবেদন করছেন। কিন্তু আবেদন করার সময় যদি আপনি পুনরায় আপনার তথ্য গুলো ভুল করেন।
তাহলে কিন্তু পরবর্তী সময়ে আবার আপনার সেই জন্ম নিবন্ধন সনদে ভুল তথ্য আসবে। তাই অবশ্যই এখানে দেওয়া তথ্য গুলো বারবার চেক করবেন, যেন কোন ভাবেই ভুল না হয়।
ধাপ ৭- অনলাইনে আবেদন জমা ও প্রমাণপত্র আপলোড
যখন আপনি উপরের ধাপগুলো সঠিক ভাবে অনুসরণ করতে পারবেন। তখন আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন এর কাজের ৯০% কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।
তো এর পরবর্তী ধাপে আপনাকে আপনার যোগাযোগ নম্বর টি প্রদান করতে হবে।
আর এখানে একটি বিষয় লক্ষ্য করতে পারবেন। সেটি হল, আপনি আসলে কার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে চাচ্ছেন সেটা সঠিকভাবে উল্লেখ করে দিবেন।
যেমন, আপনি যদি আপনার নিজের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনি “নিজের” অপশনটি সিলেক্ট করবেন।
কিন্তু আপনি যদি আপনার সন্তানের জন্য জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করেন। তাহলে অবশ্যই আপনাকে “মাতা পিতা অভিভাবক” অপশন এর মধ্যে ক্লিক করতে হবে।
ধাপঃ ৮- পেমেন্ট ও আবেদন জমা
আর এখানে থাকা ফাঁকা বক্স গুলো তে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো দেওয়ার পরে। একটু নিচের দিকে আসলেই আপনি সংযোজন নামের একটি অপশন দেখতে পারবেন।
আর যখন আপনি এই অপশনের মধ্যে ক্লিক করবেন। তখন আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট গুলোর স্ক্যান কপি এখানে যুক্ত করে দিবেন।
আর সবার নিচে আপনি পেমেন্ট অপশন দেখতে পারবেন। আর এই অপশন এর মধ্যে আপনি ”ফি আদায়” এর মধ্যে সিলেক্ট করবেন। এবং সবশেষে আপনি ”সাবমিট” বাটনে ক্লিক করবেন।
ধাপঃ ৯- জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন পত্র প্রিন্ট
যখন আপনি উপরের নিয়ম গুলো অনুসরণ করে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন অনলাইন আবেদন করবেন। তখন আপনাকে একটি এপ্লিকেশন আইডি দেওয়া হবে।
আর এই আইডি কোড টি অবশ্যই আপনি আপনার কাছে সংগ্রহ করে রাখবেন। কেননা পরবর্তী সময়ে এই কোডটির প্রয়োজন হবে।
তো আবেদন সম্পন্ন করার পরে আপনি অবশ্যই আপনার অনলাইন আবেদন কপি টি প্রিন্ট করে নিবেন।
আর যখন আপনি প্রিন্ট করবেন, তখন সেটি নিয়ে আপনি আপনার ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন অথবা আপনার এলাকার পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে জমা দিবেন।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত টাকা লাগে?
দেখুন, বর্তমান সময়ে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত টাকা লাগে। সেই টাকার পরিমাণ বাংলাদেশ সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রকাশ করেছে।
তবে এই নীতিমালা অনুযায়ী যে, পরিমাণ টাকা ব্যয় হওয়ার কথা তার থেকে একটু বেশি টাকা ব্যয় করার দরকার হয়।
কারণ যখন আপনি জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে যাবেন। তখন কিন্তু আপনাকে অনেক ধরনের বাড়তি খরচ করতে হবে।
আর এই বাড়তি খরচ গুলো মিলে একটি জন্ম নিবন্ধন সংশোধন এর কাজ করতে সর্বমোট ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়।
তবে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একটি জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি পরিমাণ ফি দিতে হয়। সেই জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফি এর তালিকা টি নিচে উল্লেখ করে দেওয়া হলো।
যেন আপনি এই বিষয় টি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারেন।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফি
একটি জন্ম নিবন্ধন সংশোধন এর অনেক কারণ হয়। তো জন্ম নিবন্ধন এর কোন কারণ গুলোর জন্য সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কেমন সংশোধন ফি ধরা হয়েছে। তা আপনি নিচের তালিকা থেকে দেখে নিতে পারবেন। যেমন,
- আপনি যদি কোন তথ্য সংশোধন করার জন্য করতে চান। তাহলে আপনার ১০০ টাকা ফি ধরা হবে।
- তবে যদি আপনি জন্ম তারিখ ছাড়া, আপনার পিতার নাম মাতার নাম, ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য সংশোধন করতে চান। তাহলে আপনার ৫০ টাকা ফি ধরা হবে।
- বাংলা জন্ম নিবন্ধন অথবা ইংরেজি জন্ম নিবন্ধন এর ক্ষেত্রে আপনি যখন সেই মূল সনদ এর কপি সংগ্রহ করবেন। তখন আপনাকে কোন ধরনের ফি দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
- যদি কোন কারনে আপনার বাংলা অথবা ইংরেজি জন্ম নিবন্ধন এর নকল কপি প্রয়োজন হয়। তাহলে আপনাকে ৫০ টাকা ফি দিতে হবে।
দেখুন, আমাদের বাংলাদেশ সরকার জনগণের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে যে ফি নির্ধারণ করেছে তা আপনি উপরে দেখতে পাচ্ছেন।
তবে এই ধরনের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন কাজ গুলো করার সময় আপনাকে আরো বাড়তি কিছু টাকা ব্যয় করতে হবে। যা আমি উপরের আলোচনাতেই বলেছি।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আমরা উপরের আলোচনা থেকে জানতে পেরেছি কিভাবে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করতে হয়। তো যখন আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করবেন।
তখন কিন্তু আপনার বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এর দরকার হবে। আর আপনার ক্ষেত্রে আসলে কি কি কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে। সেটা আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন এর কারণ এর উপর নির্ভর করবে।
সে কারণে এবার আমি আপনাকে একটি তালিকা প্রদান করব। যেখান থেকে আপনি জেনে নিতে পারবেন. কোন ধরনের জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দরকার হয়।
নাম জন্মতারিখ ও পিতা-মাতার নাম সংশোধন
- জাতীয় পরিচয় পত্র,
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ,
- টীকা কার্ড অথবা হাসপাতালের সনদ,
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি,
- পিতা অথবা মাতার জন্ম নিবন্ধন এর কপি,
- পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি,
স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন বা সংশোধন
- স্থায়ী ঠিকানার হালনাগাদ কর পরিশোধ এর রশিদ,
- চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলর এর প্রত্যয়ন পত্র,
বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন বা সংশোধন
- আপনার ইউটিলিটি বিলের কপি অথবা বিদ্যুৎ বিলের কপি,
তো আপনি যদি জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করতে চান। তাহলে আপনার নিকট কোন কারণের জন্য কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হবে তার তালিকা উপরে উল্লেখ করেছি।
আর যখন আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করবেন। তখন অবশ্যই এই কাগজ পত্র গুলো আপনার সাথে রাখবেন।তাহলে আপনি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার নিয়ম
আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন। যাদের জন্ম নিবন্ধন সনদের মধ্যে বয়স ভুল রয়েছে। তো আপনি চাইলে খুব সহজেই অনলাইনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন আবেদন করতে পারবেন।
সেজন্য আপনাকে আজকের দেখানো পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করতে হবে। এবং আপনি যখন আপনার জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন আবেদন করবেন।
তখন আপনার নিকট বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকতে হবে। যেমন. আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স, টিকার কার্ড ইত্যাদি।
এই কাগজ পত্র গুলোর সাহায্য আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার আবেদন করতে পারবেন। তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা উচিত।
সেটি হল, আপনি যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার জন্য আবেদন করেন। তাহলে পরবর্তী ১৫ কার্যদিবস এর মধ্যেই আপনার এই আবেদন টি অনুমোদিত হবে।
জন্ম নিবন্ধন নাম সংশোধন করার নিয়ম
আপনি যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন এর মধ্যে থাকা নাম সংশোধন করতে চান। তাহলে আপনার বেশ কিছু ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন পড়বে।
যেমন, টিকার কার্ড, জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স, পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন এর কপি।
আর এই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলোর সাহায্য আপনি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন নাম সংশোধন করার আবেদন করতে পারবেন।
যখন আপনি অনলাইনে আবেদন করবেন, তার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যেই আপনার এই আবেদন টি অনুমোদিত হবে।
জন্ম নিবন্ধনে ইংরেজি তথ্য সংযোজন
আপনারা যারা অনেক আগেই জন্ম নিবন্ধন করেছিলেন। তাদের জন্ম নিবন্ধন গুলো হাতে লেখা বাংলা ভাষায় ছিল।
কিন্তু বর্তমান সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতি এর প্রভাবে এখন ইংরেজিতে জন্ম নিবন্ধন রেজিস্ট্রেশন করা হয়।
আর আপনার হাতে যদি বাংলা জন্ম নিবন্ধন থাকে। তাহলে আপনি খুব সহজেই ইংরেজি জন্ম নিবন্ধন এর জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
সেজন্য আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশ জন্ম ও মৃত্যু সনদ এর মূল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে যাবতীয় তথ্য গুলো দিতে হবে।
এবং তারপরে আপনি যখন অনলাইনে আবেদন করবেন তখন কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই করে আপনাকে ইংরেজি জন্ম নিবন্ধন সনদ কপি প্রদান করবে।
জন্ম নিবন্ধনে পিতা/মাতার নাম সংশোধন
আমরা অনেক সময় জন্ম নিবন্ধনে পিতা অথবা মাতার নাম সংশোধন করতে চাই। তো আপনি যদি এই কাজটি করতে চান। তাহলে আপনার খুব বেশি কাগজ পত্রের প্রয়োজন হবে না।
সে ক্ষেত্রে আপনার কাছে যদি শিক্ষা সনদের কপি থাকে। তাহলে সেটা খুব সহজেই সংশোধন করা সম্ভব হবে।
এর পাশাপাশি যেহেতু আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধনের পিতা মাতার নাম সংশোধন করতে চান। সেহুতু অবশ্যই আপনার পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি প্রমাণপত্র হিসাবে দিতে হবে।
তাহলে আপনি খুব সহজেই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনে পিতা, মাতার নাম সংশোধন আবেদন করতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন আবেদন প্রক্রিয়া (ভিডিও)
কিভাবে আপনি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করবেন। সেই নিয়ম গুলো নিয়ে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
তবে আলোচিত এই আলোচনা গুলো যদি আপনার বুঝতে সমস্যা হয়। তাহলে আপনি নিচের ভিডিওটি দেখে খুব সহজেই জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন অবস্থা
আপনি যখন আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য অনলাইনে আবেদন করবেন। তখন আপনার এই আবেদন টি কতটুকু কার্যকর হয়েছে।
আপনার কাজ গুলো কতটুকু অগ্রসর হয়েছে তা আপনি অনলাইন থেকে দেখে নিতে পারবেন।
আর যদি আপনি এই বিষয়টি অনলাইন থেকে দেখতে চান। তাহলে আপনাকে এখানে ক্লিক করতে হবে। তো যখন আপনি এই লিঙ্ক এর মধ্যে ক্লিক করবেন।
তখন আপনি নতুন একটি ওয়েবসাইট এর মধ্যে প্রবেশ করবেন। আর এখানে আপনি জন্ম নিবন্ধন ”আবেদন এর ধরন হিসেবে” অবশ্যই জন্ম ”নিবন্ধন সংশোধন” অপশন এর মধ্যে ক্লিক করবেন।
এরপরে অনলাইনে আবেদন করার সময় আপনাকে যে অ্যাপ্লিকেশন আইডি দেওয়া হয়েছিল সেটি এখানে প্রদান করবেন।
এবং তার নিচে আপনি আপনার জন্ম সনদের মধ্যে থাকা জন্ম তারিখ টি উল্লেখ করবেন।
আর সবশেষে আপনি ”দেখুন” নামক বাটন এর মধ্যে ক্লিক করার সাথে সাথেই। আপনি আপনার অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন এর বর্তমান অবস্থা দেখতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর
আমার জন্ম নিবন্ধনে নামের বানান ভুল, আমি কি সঠিক বানান দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র করতে পারব?
এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। কারণ আপনার জন্ম নিবন্ধন এর মধ্যে যে নাম, বয়স থাকবে। সে অনুযায়ী আপনাকে জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য গুলো দিতে হবে। কিন্তু আপনি যদি ভুল তথ্য দেন। তাহলে কিন্তু পরবর্তী সময়ে আপনাকে অনেক ঝামেলার মধ্যে পড়তে হবে। তাই অবশ্যই আপনি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের যে সকল তথ্য জমা দিবেন। সেগুলো যেন আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদের সাথে মিল থাকে।
পাসপোর্ট দিয়ে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করা যাবে?
অবশ্যই, আপনি আপনার পাসপোর্ট দিয়ে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করতে পারবেন। কেননা আপনি আপনার পাসপোর্ট এর মধ্যে থাকা তথ্য গুলো কে প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন কতবার সংশোধন করা যায়?
উত্তরঃ জন্ম নিবন্ধন কতবার সংশোধন করা যায়। যারা এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান তাদের বলে রাখি, একটি জন্ম নিবন্ধন এর সনদ মোট চার (০৪) বার পর্যন্ত সংশোধন করার সুযোগ রয়েছে।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত টাকা লাগে?
উত্তরঃ জন্ম নিবন্ধনের বিভিন্ন সংশোধনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ফি দেয়ার প্রয়োজন হয়। যদিও বল সরকারি ভাবে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ফি ধরা হয়।
কিন্তু আপনি যদি যখন জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করবেন। তখন আপনার বেশ কিছু টাকা বাড়তি খরচ করতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফরম কোথায় জমা দিতে হবে?
উত্তরঃ আপনি যখন জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য অনলাইনে আবেদন করবেন।
তখন সেই অনলাইন কপি প্রিন্ট করে নিয়ে আপনার গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশন কার্যালয় এর মধ্যে গিয়ে এই অনলাইন কপিটি জমা দিবেন।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন অনলাইন আবেদন করেছি বর্তমান অবস্থা কিভাবে জানব?
উত্তরঃ জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের অনলাইন আবেদন করার পরে। আপনার সেই আবেদন টি কতটুকু কার্যকর হয়েছে। তা আপনি অনলাইন থেকে জেনে নিতে পারবেন।
আর সেজন্য আপনাকে এখানে ক্লিক করতে হবে। এখানে ক্লিক করার পরে আপনার জন্ম নিবন্ধন এর ধরন, এপ্লিকেশন আইডি এবং জন্ম তারিখ উল্লেখ করার পরে।
আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন এর সংশোধনের বর্তমান অবস্থা দেখতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে?
উত্তরঃ একটি জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে সর্বোচ্চ ৭ দিন থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় ব্যয় করতে হয়।
জন্ম নিবন্ধন কিভাবে সংশোধন করব?
উত্তরঃ (https://bdris.gov.bd/br/correction) এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পরে আপনাকে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে হবে।
আর সেই তথ্য গুলো প্রদান করার মাধ্যমে আপনি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করতে পারবেন। তবে যখন আপনি অনলাইনে আবেদন করবেন।
তখন অবশ্যই অনলাইন কপি প্রিন্ট করে নিবেন। সেই সাথে আপনাকে যে অ্যাপ্লিকেশন আইডি দেওয়া হবে। সেটি আপনি আপনার কাছে সংগ্রহ করে রাখবেন।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য কি কি কাগজ লাগে?
উত্তরঃ বিভিন্ন কারণে একটি জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রের দরকার হয়।
যেমন, পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্র এর কপি, চেয়ারম্যান অথবা কাউন্সিলর এর প্রত্যায়ন পত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জাতীয় পরিচয় পত্র, ছবি ইত্যাদির প্রয়োজন হয়।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন নিয়ে আমাদের শেষ কথা
আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে, আমি আপনাদের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন অনলাইন আবেদন করার নিয়ম গুলো সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
তো যারা আসলে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করতে চান। তাদের জন্য আজকের এই আলোচনা টি অনেক বেশি হেল্পফুল হবে।
তবে এরপরও যদি আপনার অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করতে কোন ধরনের সমস্যা হয়। তাহলে অবশ্যই সেই সমস্যা টি নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।
আর এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো খুব সহজভাবে জানতে চাইলে। আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করবেন। কারণ আমরা প্রতিনিয়ত এই ধরনের অজানা বিষয় গুলো কে জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি।
তাই আমাদের সাথে থাকুন, নতুন কিছু জানার জন্য। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।