আপনার ভোটার আইডি কার্ডে যদি কোনো ধরনের ভুল তথ্য থাকে, তাহলে সেই ভুলগুলো অবশ্যই সংশোধন করতে হবে। ভুল তথ্যের কারণে আপনার বিভিন্ন জরুরি কাজ বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে, তাই এটি সংশোধন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভুল তথ্য সংশোধন করতে হলে একটি নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হবে। বর্তমানে, এই ফি বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতির মাধ্যমে খুব সহজেই পরিশোধ করা যায়।
যদি আপনি মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে স্মার্ট আইডি বা এনআইডি সংশোধনী ফি বা জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন ফি দিতে চান, তাহলে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
আজকের এই লেখায় আমি সেই ধাপগুলো স্টেপ বাই স্টেপ তুলে ধরেছি, যাতে আপনার জন্য ফি পরিশোধের প্রক্রিয়াটি সহজ হয়।
তো চলুন, দেরি না করে সরাসরি মূল টপিকে ফিরে যাওয়া যাক।
আপনি আরোও জানতে পারবেন…
- ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে?
- ভোটার আইডি কার্ডের ছবি ও স্বাক্ষর পরিবর্তন করার নিয়ম
- অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করার নিয়ম
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি কত টাকা?
আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাকে ভোটার আইডি বা স্মার্ট কার্ডের তথ্য সংশোধন ফি প্রদান করার পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো।
তবে তার আগে আমাদের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। সেটি হলো, যখন আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন করবেন, তখন আপনাকে কত টাকা ফি দিতে হবে।
এ বিষয়টি আপনার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
যদিও ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য সংশোধন ফি বিভিন্ন ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়, তবুও এখন আমি আপনাকে ১৫% সহ যে পরিমাণ ফি দিতে হবে, সে বিষয়ে ধারণা দেবো।
এবং এখানে একটি কথা বলে রাখা উচিত:
আপনি যদি প্রথমবার তথ্য সংশোধন ফি প্রদান করেন, তাহলে আপনি কম টাকা খরচ করে তথ্য সংশোধন করে নিতে পারবেন। তবে, যদি আপনি দ্বিতীয়বার অথবা তৃতীয়বার আপনার তথ্য সংশোধন করার জন্য আবেদন করেন, তাহলে আপনার ফি এর পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
এবং এই ধাপ অনুযায়ী আপনাকে কত টাকা ফি প্রদান করতে হবে, সে সম্পর্কে যেন আপনি সঠিক তথ্য পেতে পারেন, সে কারণে আমি আপনাকে একটি তালিকা প্রদান করবো, যেখান থেকে আপনি এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেয়ে যাবেন। যেমন
তথ্য সংশোধন ফি
তথ্য সংশোধন ফি ভোটার আইডি কার্ড এর মধ্যে থাকা নির্দিষ্ট কিছু তথ্য সংশোধন এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন: নিজের নাম এর বানান ভুল, ছবি ও স্বাক্ষর পরিবর্তন, পিতা-মাতার নাম সংশোধন, স্বামী কিংবা স্ত্রীর নাম সংশোধন, ভুল ঠিকানা সংশোধন, এবং রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন ইত্যাদি।
- আপনি যদি প্রথমবার তথ্য সংশোধন ফি প্রদান করেন। তাহলে আপনার ফি হবে মাত্র ২৩০ টাকা।
- দ্বিতীয়বার তথ্য সংশোধন ফি হিসেবে আপনাকে মোট ৩৪৫ টাকা প্রদান করতে হবে।
- এবং তৃতীয়বার ৫৭৫ টাকা তথ্য সংশোধন ফি প্রদান করতে হবে।
উপরের তালিকায় আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, যখন আপনি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার তথ্য সংশোধন ফি প্রদান করবেন, তখন আপনার ফি-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
তবে, উপরোক্ত তথ্যগুলো ছাড়াও আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের মধ্যে থাকা আরো কিছু তথ্য সংশোধন করার প্রয়োজন হয়।
আর সেগুলো সংশোধন করার জন্য আপনাকে কত টাকা ফি প্রদান করতে হবে, সেগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
অন্যান্য তথ্য সংশোধন ফি
উপরের আলোচনায় আমি আপনাকে বেশ কিছু তথ্য সংশোধনের বিষয়ে জানিয়েছি এবং এই তথ্যগুলো সংশোধন করার জন্য আপনাকে কোন ধাপে কত টাকা ফি দিতে হবে, তা একটি তালিকার মাধ্যমে প্রদান করেছি।
তবে, উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলো ছাড়াও আমাদের আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংশোধন করার প্রয়োজন হতে পারে, যেমন:
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সংশোধন,
- ব্যক্তিগত পেশার পরিবর্তন,
- নিজস্ব ধর্ম,
- মোবাইল নম্বর পরিবর্তন,
- পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি।
এভাবে যদি কোনো কারণে আপনার উপরের তথ্যগুলো সংশোধন করার প্রয়োজন হয়, তবে আপনার ফি হিসেবে ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হবে।
এবং আপনি এই তথ্য সংশোধন ফি বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে প্রদান করতে পারবেন।
বিকাশের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি (NID Fee) প্রদান
এতক্ষণ ধরে আপনি ভোটার আইডি কার্ডের মধ্যে থাকা তথ্য সংশোধন ফি নিয়ে বিস্তারিত জানলাম।
তবে এবার আমি আলোচনা করবো, আপনি কিভাবে বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এনআইডি তে থাকা ভুল তথ্য সংশোধনী ফি প্রদান করবেন।
যদিও আপনি চাইলে অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে এই ফি পরিশোধ করতে পারবেন, তবে বিকাশের অধিক ব্যবহারকারী থাকার কারণে, এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম।
প্রথমে আমি আপনাকে বিকাশের মাধ্যমে তথ্য সংশোধন ফি প্রদান করার পদ্ধতি গুলো দেখিয়ে দেবো। আর সেজন্য আপনাকে নিচের পদ্ধতিগুলো ফলো করতে হবে, যেমন:
- সবার প্রথমে আপনার মোবাইলের নেট কানেকশন চালু করে সরাসরি আপনার Bkash Apps এর মধ্যে লগ ইন করুন।
- এবার আপনি “Pay Bill” নামের একটি অপশন দেখতে পারবেন, আপনাকে সেখানে ক্লিক করতে হবে।
- উপরের অপশনে ক্লিক করার পর “সরকারি ফি বা “Govt. Fees” নামের অপশনে ক্লিক করুন।
- এরপর আপনাকে “Nid Service” অপশনটির উপর ক্লিক করতে হবে।
- এখন আপনাকে আবেদন এর ধরন (Application Type) নামক অপশনে ক্লিক করতে হবে।
এখন আপনি বিভিন্ন প্রকারের আবেদন এর ধরন দেখতে পাবেন। এখানে আপনি আসলে যে তথ্য সংশোধন করার জন্য ফি প্রদান করবেন, সেটি সিলেক্ট করুন।
তারপর নিচের অপশনে আপনি “NID Number” দেওয়ার একটি ফাঁকা বক্স দেখতে পাবেন। সেখানে আপনার এনআইডি কার্ডের নম্বরটি নির্ভুলভাবে বসিয়ে দিন।
যখন আপনি উপরের ধাপগুলো সঠিকভাবে ফলো করবেন, তারপর আপনাকে আপনার বিকাশের পিন নম্বরটি প্রদান করতে হবে।
এবং পিন নম্বর দেওয়ার পরে, আপনি সফলভাবে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন ফি বিকাশে পেমেন্ট করতে পারবেন।
রকেটের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফি পরিশোধ
বিকাশের পাশাপাশি, যদি আপনার রকেট মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থাকে, তাহলে আপনি আপনার রকেট একাউন্ট থেকে ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য সংশোধন ফি পরিশোধ করতে পারবেন।
তবে সেজন্য আপনাকে নিচের পদ্ধতিগুলো ফলো করতে হবে, যেমন:
- প্রথমে আপনি আপনার রকেট একাউন্টে লগ ইন করে “Bill Pay” নামক অপশনে ক্লিক করুন।
- এখন আপনাকে Biller Number খুঁজে নিতে হবে। সেজন্য আপনি 1000 লিখে সার্চ করুন।
- উপরের নম্বরটি লিখে সার্চ করার পর যদি আপনি EC Bangladesh লেখা দেখতে পান, তাহলে সেখানে ক্লিক করে দিন।
- এবার আপনাকে আপনার এনআইডি নাম্বার দিতে হবে। তারপর আপনি যে ধরনের তথ্য সংশোধন করতে চান, সেটি সিলেক্ট করুন।
- যদি আপনার নিজের পেমেন্ট করেন, তাহলে আপনি “Self” কিন্তু যদি অন্যের পেমেন্ট করেন তাহলে “Other” এর মধ্যে ক্লিক করুন।
- সবশেষে, যার আইডি সংশধোন করবেন তার মোবাইল নুম্বারটি দিন। আর অবশ্যয় ইংরেজিতে লিখতে হবে।
এখানে অনেকেই “Application Type (Details)” এর বক্স কোন লেখা সিলেক্ট করবে বোঝতে পারে না। সে জন্য আমি বিস্তারিত বলি।
- NID Info Correction
- Other Info Correction
- Both Info Correction
- Duplicate Regular
- Duplicate Urgent
যদি আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম, পিতা-মাতার নাম, স্বামী-স্ত্রীর নাম, বয়স বা ঠিকানা সংশোধন করতে চান, তবে আবেদনের ধরণ হবে (1), যা তথ্য সংশোধনের জন্য নির্ধারিত। তাই, Application Type-এ 1 নির্বাচন করুন।
এখন আপনি নিচে Validate বাটনে ক্লিক করুন এবং আপনার রকেট একাউন্টের পিন নম্বর প্রেস করে লেখুন। তার পর আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন ফি পরিশোধ সম্পন্ন করুন।
যখন আপনি উপরের ধাপগুলো সঠিকভাবে ফলো করবেন, তখন আপনি সফলভাবে রকেটের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি প্রদান করতে পারবেন।
OK ওয়ালেটের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফি পরিশোধ
বিকাশ ও রকেট মোবাইল ব্যাংকিং ছাড়াও আপনি Ok Wallet এর মাধ্যমেও এই তথ্য সংশোধন ফি পরিশোধ করে দিতে পারবেন।
মূলত এটি হলো, One Bank Limited এর নিজস্ব ওয়ালেট। তো যদি আপনার নিকট এই ওকে ওয়ালেট থাকে। তাহলে আপনি খুব সহজেই সেই ওয়ালেট এর মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র এর সংশোধনী ফি পরিশোধ করে দিতে পারবেন।
আমাদের শেষকথা
এই আর্টিকেলটি বিশেষভাবে তাদের জন্য উপকার হবে যারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন ফি পরিশোধ করতে চান।
এখানে, ধাপে ধাপে দেখানো হয়েছে কিভাবে আপনার আইডির তথ্য সংশোধন ফি মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে জমা দেবেন। আশা করি এই ব্লগের তথ্য আপনাকে একটু হলেও সহজ করে দিবে।
যদি আপনি ভোটার আইডি সম্পর্কে এমন অজানা বিষয়গুলো সহজ ভাষায় জানতে চান, তাহলে আমার এই ব্লগ সাইট নিয়মিত ভিজিট করবেন।