যদি আপনি একজন করযোগ্য ব্যক্তি হয়ে থাকেন। এবং যদি আপনার এই আয়কর সম্পর্কে তেমন কোনো পরিস্কার ধারনা না থাকে। তাহলে অনেক সময় আপনি বেশি পরিমানে আয়কর প্রদান করলেও তা বুঝতে পারবেন না।
আর আপনি যেন আয়কর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। এবং যারা কম পরিমানে আয়কর দিতে চান। মূলত তাদের জন্য আজকের এই লেখাটি অনেক হেল্পফুল হবে।
কেন রেয়াত আয়কর বা কম আয়কর দিবেন?
আমরা সকলেই জানি যে, উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে অনেক মধ্যবিত্ত মানুষদের আয়কর দিতে হয়। আর সে কারণে আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন।
যারা মূলত অনেক কম পরিমানে আয়কর দেওয়ার কথা চিন্তা করে থাকে। কেননা, আপনি যদি কোনো চাকরিজীবী হয়ে থাকেন। এবং আপনার নাম যদি করযোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা তে যুক্ত করা হয়।
তাহলে কিন্তুু তার যে পরিমান আয়কর নির্ধারন করা হয়। সেই পরিমান আয়কর এর অর্থ তার বেতন এর উৎস থেকেই কর্তন করা হয়ে থাকে।
আপনি আরোও জানতে পারেন…
- ঘরে বসে অনলাইনে এ চালান পরিশোধ করার নিয়ম
- যেসব ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার প্রমাণ দেখাতে হবে
- অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট যাচাই করার নিয়ম
তো এখানে যদি আপনার আয়কর এর পরিমান একটু হলেও কম হয়। তাহলে কিন্তুু আপনার আর্থিক চাপ কিছুটা হলেও কমে আসবে।
আর টাকাই যেহুতু সকল সুখের মূল। তাই আপনি যদি কম আয়কর দিয়ে কিছু পরিমান টাকা আপনার কাছে সঞ্চয় করে রাখতে পারেন। তাহলে সেটা আপনার নিজের জন্যই ভালো হবে।
তাছাড়া আজকে আমি আপনাকে যে, কম আয়কর দেওয়ার উপায়টি বলবো। সেটি একবারে বৈধ একটি উপায়। তো চলুন আর দেরী না করে, আয়কর কম দেওয়ার উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
কিভাবে রেয়াত আয়কর পাওয়া যায়?
আপনি এমন অনেক ধরনের খাত দেখতে পারবেন। যে খাত গুলোতে খুব সহজেই আয়কর রেয়াত পাওয়া সম্ভব। আর এই বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অনেকেই তেমন কিছু না জানার কারণে।
আমরা অনেক সময় বেশি আয়কর দিলেও তা বুজতে পারিনা। যেমন, আমাদের অনেকের মনে একটা ভ্রান্ত ধারনা আছে।সেটি হলো, আমরা অধিকাংশ মানুষ মনে করি যে, জমি কিংবা ফ্ল্যাট অথবা এই ধরনের স্থায়ী আমানত ছাড়া।
আর অন্য কোনো খাত এর মধ্যে আয়কর রেয়াত পাওয়া যায়না। তো যারা আসলে এমনটা মনে করেন, তাদের ধারনা সম্পূর্ণ ভুল।
কারন, আপনি যদি আয়কর রেয়াত পেতে চান। তাহলে আপনাকে অবশ্যই যে সকল অনুমোদিত দান এর খাত বা বিনিয়োগ এর খাত আছে।
সেই খাত গুলোতে দান কিংবা বিনিয়োগ করতে হবে। আর যখন আপনি এই কাজটি করতে পারবেন। তখন কিন্তুু আপনি আপনার ধার্য করা আয়কর থেকে মোট আয় এর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত রেয়াত পাবেন।
তবে এখানে একটা সমস্যা রয়েছে। সেটি হলো, আপনি যদি এখানে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি পরিমানে বিনিয়োগ করে থাকেন।
তাহলে কিন্তুু আপনাকে কোনো ধরনের আয়কর রেয়াত এর সুবিধা প্রদান করা হবেনা। অপরদিকে আপনার বাৎসরিক আয় এর পরিমান যদি ১৫ লাখ টাকা বা তারও কমপরিমান টাকা ইনকাম হয়।
তাহলে আপনি সেই পরিমান টাকা আয় এর বিনিময়ে যদি দান কিংবা বিনিয়োগ করে থাকেন। তবে আপনি আপনার মোট আয় থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর রেয়াত পাওয়ার সুবিধা পাবেন।
কিন্তুু যদি আপনার বাৎসরিক আয় এর পরিমান ১৫ লাখ বা তারও বেশি পরিমান টাকা ইনকাম থাকে। তাহলে আপনার এই আয়কর রেয়াত এর পরিমানে কিছুটা পরিবর্তন আসবে।
কেননা, এই পরিমান টাকা ইনকাম করলে আপনাকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর রেয়াত দেওয়া হবে।
কম রেয়াত এর হার সম্পর্কে জানুন
যদিওবা উপরের আলোচনা তে আমি আপনাকে আয়কর রেয়াত এর বিষয় গুলো সম্পর্কে বলেছি। তবুও আপনার এই আয়কর রেয়াত এর হার সম্পর্কে আরো পরিস্কার ধারনা রাখা উচিত।
কেননা, আপনি হয়ত খুব ভালো করেই জানবেন যে, আপনি যদি ডিপিএস এর মধ্যে ৬০ হাজার টাকা রাখেন। তাহলে কিন্তুু সেই পরিমান টাকায় আপনি অবশ্যই আয়কর রেয়াত পাবেন।
কিন্তুু যদি আপনি ৬০ হাজার এর বেশি ডিপিএস করেন। তাহলে কিন্তুু আপনাকে আর এই আয়কর রেয়াত এর আওতায় আনা হবেনা।
তবে এখানেও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। সেটি হলো, আপনি যদি আপনার ডিপিএস থেকে আয়কর রেয়াত পেতে চান। তাহলে আপনাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট খাত গুলোতে দান কিংবা বিনিয়োগ করতে হবে।
আর আপনি যদি আপনার নির্ধারিত আয়কর রেয়াত পেতে চান। তাহলে আপনাকে অবশ্যই আয়কর রিটার্ন এর যে ফরম রয়েছে।
সেই ফরম এর মধ্যে আপনাকে 24D তফসিল ফরম পূরন করে। সেটি সাবমিট করতে হবে, তাহলে আপনি আয়কর এর রেয়াত সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
আয়কর রেয়াত এর হার | মোট বার্ষিক আয় এর পরিমান |
১৫ শতাংশ | যদি আপনার বাৎসরিক আয় ১৫ লাখ টাকার কম হয়। |
১০ শতাংশ | যদি আপনার বাৎসরিক আয় ১৫ লাখ টাকার বেশি হয়। |
সঞ্চয়পত্র আয়কর রেয়াত এর হিসেব করার নিয়ম
দেখুন, আপনি যদি আপনার ধার্যকৃত আয়কর এর রেয়াত পেতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে সেই আয়কর রেয়াত এর সঠিক হিসেব জানতে হবে।
আর আপনি যেন উক্ত বিষয় টি সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা নিতে পারেন। সে কারণে এবার আমি আপনাকে সেই বিষয়টি উদাহরন দিয়ে বুঝিয়ে দিবো।
মনে করুন, আপনি একজন সাধারন ব্যক্তি। এবং আপনি নির্দিষ্ট কোনো ব্যবসা কিংবা পেশার সাথে নিযুক্ত আছেন। এখন ধরে নিলাম যে, আপনি গত বছরে মোট ৮ লাখ টাকা আয় করেছেন।
আর সেই টাকা গুলো দিয়ে নিজের আর্থিক চাহিদা মেটানোর পর। মোট ২ লাখ টাকা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনে নিলেন।
এখন আপনি যদি আপনার এই আয় এবং আয়ের উপর নির্ভর করে রেয়াত পেতে চান। তাহলে আপনার যে পরিমান আয়কর আসবে। সেই পরিমান আয়কর এর তালিকা টি নিচে উল্লেখ করা হলো। যেমন,
- আপনার প্রথম ৩ লাখ টাকার উপর আয়কর এর পরিমান হবে ০ (শূন্য),
- তারপর আপনার ১ লাখ টাকার আয়কর হবে, ৫ শতাংশ। যার পরিমান হবে মোট, ৫ হাজার টাকা মাত্র।
- তার পরবর্তী ৩ লাখ টাকায় আপনার আয়কর নির্ধারিত হবে ১০ শতাংশ করে। যেখানে আপনার মোট আয়কর এর পরিমান হবে, ৩০ হাজার টাকা মাত্র।
- সবশেষে আপনার পরবর্তী ৪ লাখ টাকায় আপনার আয়কর নির্ধারিত হবে, ১৫ শতাংশ। যার পরিমান হবে ১৫ হাজার টাকা।
তো এখন যদি আমরা মোট আয়কর এর হিসেব করি। তাহলে আপনার মোট ৮ লক্ষ টাকা আয় এবং ২ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র এর কারণে।
আপনার মোট আয়কর এর পরিমান দাড়াবে, ৫০ হাজার টাকা। আশা করি, সঞ্চয়পত্র আয়কর রেয়াত এর হিসেব টি আপনি পরিস্কার ভাবে বুঝতে পেরেছেন।
আয়কর রেয়াত এর খাত সমূহ কি কি?
উপরের আলোচনা তে আমরা আয়কর রেয়াত সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জানতে পারলাম। তো এবার আমি আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো সম্পর্কে জানিয়ে দিবো।
অর্থ্যাৎ, এমন কোন ধরনের খাত রয়েছে। যে গুলোতে আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে। এবার আমি আপনাকে সেই খাত গুলোর সাথে পরিচয় করিয় দিবো।
আপনি আরোও পড়ুন…
- অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম
- টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি কর দিতে হবে?
- হারানো টিন সার্টিফিকেট বের করার নিয়ম
আর বর্তমান সময় অনুযায়ী আয়কর রেয়াত পাওয়ার মোট ২২ টি খাত রয়েছে। যেগুলোর তালিকা ও বিস্তারিত তথ্য গুলো নিচে ধাপে ধাপে দেখিয়ে দেওয়া হলো।
আয়কর রেয়াত এর জন্য অনুমোদিত বিনিয়োগ খাতসমূহ
- বাংলাদেশের সরকারের যে সকল ট্রেজারি বন্ড আছে, সেগুলো তে বিনিয়োগ।
- বাংলাদেশ এর মধ্যে থাকা ষ্টক এক্সচেন্জ এর তালিকা ভুক্ত যে সকল কোম্পানি বা শেয়ার আছে। কিংবা যে সকল ষ্টক, মিউচুয়াল ফান্ড আছে, সেগুলো তে বিনিয়োগ করা।
- সঞ্চয়পত্র ক্রয় এর জন্য বিনিয়োগ করা। ‘
- বাংলাদেশের যে কোনো ধরনের তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে। সেগুলো তে ডিপোজিট পেনশন স্কিম এর মধ্যে কমপক্ষে ৬০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা।
- বিভিন্ন ধরনের সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ড এর মধ্যে থাকা প্রদত্ত চাঁদা প্রদান।
- নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠী বা তহবিল এর মধ্যে বীমা তহবিল এর চাঁদা প্রদান।
- স্বীকৃতি পাওয়া ভবিষ্যৎ তহবিল নিয়োগকর্তার কিংবা কর্মকর্তার চাঁদা প্রদান করা।
- বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ড এর মধ্যে চাঁদা প্রদান করা।
- জীবন বীমার প্রিমিয়াম।
তো উপরে আপনি যে সকল আয়কর রেয়াত এর তালিকা দেখতে পাচ্ছেন। সেগুলো মূলত আয়কর রেয়াত এর জন্য অনুমোদিত বিনিয়োগ এর খাত সমূহ গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এর বাইরে আরো অনুমোদিত দানের খাত রয়েছে। যেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
অনুমোদিত দানের খাত
- ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা করা লক্ষ্যে নিয়োজিত জাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে অনুদান প্রদান করা।
- ঢাকার মধ্যে অবস্থিত আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল এর মধ্যে দান করা।
- এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ এর মধ্যে দান করা।
- বাংলাদেশ সরকার থেকে অনুমোদন দেওয়া যেসকল জনকল্যান মূলক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। উক্ত প্রতিষ্ঠান গুলোতে দান করা।
- ঢাকা সাভার এর মধ্যে অবস্থান করা যে পক্ষাঘাত গ্রস্থদের চিকিৎসা ও পনর্বাসন করার জন্য কেন্দ্র আছে। উক্ত কেন্দ্রের মধ্যে দান করা।
- ICDDRB তে দান করা।
- আহসানিয়া ক্যান্সার হসপিতাল এর মধ্যে দান করা।
- আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক নামের যে প্রতিষ্ঠান আছে। উক্ত প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে দান করা।
- বাংলাদেশ এর মধ্যে অবস্থান করা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ দান করা।
- বাংলাদেশ সরকার এর অনুমোদিত বা স্বীকৃতি প্রদান করা প্রতিবন্ধীদের কল্যানে স্থাপিত প্রতিষ্ঠান গুলোতে দান করা।
- বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর অনুমোদন দেওয়া দাতব্য হাসাপাতাল গুলোতে অর্থ দান করা।
- যাকাত ও তহবিলের মধ্যে দান করা।
- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে স্মৃতি রক্ষার জন্য অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান গুলোতে দান করা।
তো আপনি যদি আয়কর রেয়াত পেতে চান। তাহলে আপনাকে কোন কোন সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান গুলো তে দান করার প্রয়োজন পড়বে।
সেগুলোর তালিকা উপরে উল্লেখ করা হলো। আর আপনি যদি উক্ত প্রতিষ্ঠান গুলোতে দান করেন। তাহলে আপনাকেও আয়কর রেয়াত এর মধ্যে তালিকা ভুক্ত করা হবে।
আয়কর রেয়াত সম্পর্কে আমাদের শেষকথা
প্রিয় পাঠক, যারা ইতিমধ্যে করযোগ্য আয় করেন এবং যাদের নাম আয়কর প্রদানকারী ব্যক্তিদের তালিকা তে যুক্ত হয়েছে।
তাদের জন্য আজকের এই আলোচনা টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারন, আপনি একজন করদাতা ব্যক্তি হিসেবে কিভাবে আয়কর রেয়াত পাবেন।
তার প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে আজকে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হয়েছে। আর আপনি যদি এমন ধরনের আয়কর সম্পর্কিত অজানা তথ্য গুলো খুব সহজ ভাষায় পেতে চান।
তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করবেন। আর এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুৃন।