বর্তমান সময়ে আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে অনেক কিছু জানি। তবে যদি আপনি নিজেকে একজন দক্ষ মার্কেটার হিসেবে গড়ে তুলতে চান, তাহলে অবশ্যই অন্যান্য মার্কেটিং পদ্ধতিগুলো সম্পর্কেও জানতে হবে।
এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো টেলিমার্কেটিং, যা একটি বিক্রয় কৌশল। এখানে একজন বিক্রয় প্রতিনিধি বা টেলি সেলসপার্সন সম্ভাব্য গ্রাহকদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে, পণ্য বা পরিষেবা সম্পর্কে জানায় এবং বিক্রয় সম্পন্ন করার চেষ্টা করে।
এই পদ্ধতি নতুন গ্রাহক আকর্ষণ, বিদ্যমান গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য কার্যকর।
আজকের আলোচনায় আমরা জানব— টেলিমার্কেটিং কি (Telemarketing কি) বা টেলিমার্কেটিং কাকে বলে, টেলে মার্কেটিং এর কাজ কি এবং কিভাবে টেলিমার্কেটিং করতে হয়।
বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেল পড়ুন।
আপনি আরোও দেখতে পারেন…
- অনলাইন মার্কেটিং কি? কিভাবে অনলাইনে মার্কেটিং করতে হয় ?
- ইমেইল মার্কেটিং কি ? কিভাবে ইমেইল মার্কেটিং করবেন ?
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি ? কিভাবে এবং কেন করবেন
টেলিমার্কেটিং কি? (What is Telemarketing in Bengali)
সবার আগে আমাদের জানতে হবে— টেলিমার্কেটিং কি? কারণ, এই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকলে পরবর্তী আলোচনাগুলো বুঝতে সহজ হবে।
সরল ভাষায় বললে, টেলিমার্কেটিং হলো একটি বিক্রয় কৌশল, যেখানে একজন বিক্রেতা বা টেলি সেলসপার্সন টেলিফোনের মাধ্যমে সরাসরি সম্ভাব্য ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এই প্রক্রিয়ায় ক্রেতাদের কাছে বিভিন্ন পণ্যের তথ্য প্রদান করা হয় এবং তাদের আগ্রহ তৈরি করা হয় নির্দিষ্ট পণ্য কেনার প্রতি।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে—
“এটি তো ডিজিটাল মার্কেটিং মাধ্যমেও করা সম্ভব! তাহলে একে আলাদা করে টেলিমার্কেটিং কেন বলা হয়?”
এই প্রশ্নের উত্তর সহজ— টেলিমার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অংশ নয়। কারণ, এটি সম্পূর্ণরূপে টেলিফোন-ভিত্তিক একটি বিক্রয় কৌশল, যেখানে বিক্রেতা সরাসরি ফোন কলের মাধ্যমে ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যেহেতু এই প্রক্রিয়াটি টেলিফোনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, তাই একে ‘টেলিমার্কেটিং’ বলা হয়।
টেলি মার্কেটিং এর কাজ কি?
উপরের আলোচনায় আমরা জেনেছি টেলিমার্কেটিং কি। এবার আসুন, এই প্রক্রিয়াটি কীভাবে কাজ করে তা বিস্তারিতভাবে বুঝে নিই।
টেলিমার্কেটিং-এর কাজ মূলত ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে পণ্য বা পরিষেবা সম্পর্কে তথ্য দেওয়া এবং বিক্রয় নিশ্চিত করা।
এটি অন্যান্য মার্কেটিং কৌশলের মতোই একটি বিক্রয় পদ্ধতি, তবে এখানে সরাসরি ফোন কলের মাধ্যমে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা হয়।
টেলিমার্কেটিং কিভাবে কাজ করে?
ধরুন, আপনার একটি কোম্পানি আছে, যেখানে আপনি নির্দিষ্ট কিছু পণ্য বিক্রি করেন। এখন আপনি চান টেলিমার্কেটিং-এর মাধ্যমে আপনার পণ্যগুলোর বিক্রি বাড়াতে।
✅ প্রথমে, আপনি সম্ভাব্য গ্রাহকদের তালিকা তৈরি করবেন।
✅ এরপর, আপনি তাদের ফোন করে পণ্য বা পরিষেবার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানাবেন।
✅ আপনি তাদের পণ্যের উপকারিতা, দাম এবং অন্যান্য সুবিধা সম্পর্কে বোঝাবেন।
✅ যদি গ্রাহক আগ্রহী হন, তাহলে তিনি পণ্যটি কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
✅ তবে যদি তিনি তৎক্ষণাৎ না কেনেন, তবুও তিনি আপনার কোম্পানি এবং পণ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন, যা ভবিষ্যতে কেনার সম্ভাবনা তৈরি করবে।
এইভাবেই টেলিমার্কেটিং-এর মাধ্যমে নতুন গ্রাহক আকর্ষণ, বিদ্যমান গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি এবং পণ্যের বিক্রি নিশ্চিত করা হয়।
টেলিমার্কেটিং প্রথম কবে চালু হয়?
Telemarketing কি সেটি জানার পাশাপাশি আমাদের আরো একটি বিষয় জেনে নিতে হবে।
টেলিমার্কেটিং-এর ইতিহাস জানাটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কীভাবে শুরু হয়েছিল তা বুঝলে এর বিকাশ ও বর্তমান অবস্থার ধারণা পাওয়া যাবে।
সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, ১৯৭০ সালে প্রথম টেলিমার্কেটিং-এর যাত্রা শুরু হয়। তখনকার সময়ে বিশ্ব এতটা উন্নত ছিল না, তাই কোম্পানিগুলোর জন্য পণ্য প্রচারের অন্যতম মাধ্যম ছিল টেলিফোনের মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ।
প্রথমদিকে, এটি সীমিত পরিসরে ব্যবহৃত হলেও রেকর্ডিং প্রযুক্তির সংযোজনের ফলে টেলিমার্কেটিং আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এতে নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হয়, যা কোম্পানিগুলোর জন্য আরও কার্যকর বিপণন কৌশলে পরিণত হয়।
বিশেষ করে, ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে টেলিমার্কেটিং-এর উন্নত কৌশল ও প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়, যা একে আরও কার্যকর করে তোলে। ফলে, কোম্পানির মালিকরা এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিক্রয় কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেন, যার জনপ্রিয়তা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
২০২৩ সালের তথ্যমতে, টেলিমার্কেটিং শিল্পের বাজার মূল্য প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা প্রমাণ করে এটি এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিপণন কৌশল।
কিভাবে টেলিমার্কেটিং করতে হয়?
যেমন অন্যান্য মার্কেটিং কৌশলের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়, তেমনি টেলিমার্কেটিং-এর ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
টেলিমার্কেটিংয়ে সফলতা পেতে হলে আপনাকে নতুন নতুন আইডিয়া বের করার চেষ্টা করতে হবে। যত বেশি সৃজনশীল হতে পারবেন, ততই বেশি সফল হতে পারবেন।
এখন, আপনি যাতে টেলিমার্কেটিংয়ে সফল হতে পারেন, সে জন্য আমি কিছু কার্যকরী নিয়ম শেয়ার করছি, যা আপনি অনুসরণ করে এই কাজটি করতে পারবেন। যেমন
০১ – ক্রেতা বাছাই করা
টেলিমার্কেটিং করতে চাইলে প্রথমে আপনাকে আপনার প্রোডাক্টের লক্ষ্যবস্তু গ্রাহক বাছাই করতে হবে।
অর্থাৎ, আপনার কাছে যে পণ্য রয়েছে, সেগুলো কোন ধরনের গ্রাহক কেনার সম্ভাবনা রাখে, তা নির্ধারণ করা জরুরি।
গ্রাহক বাছাইয়ের সময় আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে, যেমন—
- গ্রাহকের অবস্থান
- বয়স
- ক্রয়ক্ষমতা
এই বৈশিষ্ট্যগুলো যাচাই করতে পারলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যে, কোন গ্রাহক আপনার পণ্যটি কিনতে আগ্রহী হতে পারে। এবং যত বেশি আপনি সঠিক গ্রাহক নির্বাচন করতে পারবেন, তত বেশি সফলতা পেতে পারবেন।
একারণে, প্রথমেই আপনাকে আপনার প্রোডাক্টের জন্য সঠিক গ্রাহক নির্বাচন করতে হবে।
০২ – ক্রেতার সাথে কথোপকথন সংক্ষিপ্ত ও বিশ্লেষণ
টেলিমার্কেটিং করার সময় আপনার প্রধান কাজ হবে সাবলীলভাবে আপনার পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাকে জানানো। কিন্তু এই সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
যেমন—
- আপনার কথার ভঙ্গি অবশ্যই মাধুর্যপূর্ণ হতে হবে।
- সাবলীলভাবে কথা বলুন, যাতে ক্রেতা সহজেই বুঝতে পারে।
- কথা সংক্ষিপ্ত ও পরিষ্কার রাখুন।
- অহেতুক কথা বলা এড়িয়ে চলুন।
- ক্রেতাদের বিরক্ত করবেন না।
- প্রোডাক্টের সুবিধাগুলো সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরুন।
এছাড়া, ক্রেতাদের সময় মূল্যবান, তাই তাদের বিরক্ত না করে আপনার বক্তব্য পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে হবে। কথার শুরুতেই আপনি কেন কল করেছেন তা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিন।
০৩ – গ্রাহকদের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করুন
টেলিমার্কেটিংয়ে সফল হতে হলে, আপনাকে ক্রেতার পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা নিতে হবে।
আপনি যখন তাদের কাছে আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত বলবেন, তখন বিচক্ষণতার সাথে অনুমান করুন যে তারা আপনার প্রোডাক্টে আগ্রহী কিনা।
এছাড়া, আপনি তাদের যা বলছেন, সেটি শুনতে তারা আগ্রহী কি না, সেটা বুঝতে চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, টেলিমার্কেটিংয়ের মূল লক্ষ্য হলো, কখনোই ক্রেতাকে বিরক্ত না করা।
০৪ – ক্রেতাদের আকৃষ্ট করুন
প্রথমবার যখন আপনি কোনো ক্রেতাকে কল দেবেন, তখন তাদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানার চেষ্টা করবেন।
সেই তথ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ক্রেতার নাম ও অবস্থান।
কারণ, যখন আপনি কল দেওয়ার পর ক্রেতার নাম ধরে সম্বোধন করবেন, তখন আপনার কথার প্রতি ক্রেতার একটি আলাদা আগ্রহ তৈরি হবে।
এর পাশাপাশি, আপনি যদি ক্রেতার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেন, তাহলে তাদের অবস্থানভেদে প্রোডাক্টের বাড়তি সুবিধা উল্লেখ করতে পারবেন।
আপনার মূল কাজ হলো টেলি মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনার প্রোডাক্ট বা কোম্পানির প্রচার করা এবং একইসাথে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেল বৃদ্ধি করা।
০৫ – মার্কেটিংয়ের ফলাফল যাচাই করুন
এটি হলো টেলি মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। যেখানে আপনি আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে ক্রেতাদের কল দেবেন।
এরপর ক্রেতারা আপনার মার্কেটিংয়ের পর কেমন সাড়া দিচ্ছেন, তা যাচাই করতে পারবেন।
এই কাজটি করার জন্য প্রথমে আপনাকে মোট কল দেওয়ার সংখ্যা জানতে হবে। এরপর সেই সংখ্যার ভিত্তিতে আপনার প্রোডাক্ট সেলের হার যাচাই করতে হবে।
যখন আপনি এই বিশ্লেষণ করবেন, তখন আপনার ইনপুট অনুযায়ী কতটুকু আউটপুট পাচ্ছেন, তা সহজেই বুঝতে পারবেন।
টেলিমার্কেটিংয়ের উদাহরণ
যখন আপনি আপনার প্রোডাক্ট সেল করার জন্য কোনো ধরনের মার্কেটিং করতে চাইবেন, তখন আপনাকে একটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
সেটি হলো, গোটা বিশ্বের মধ্যে আর কোন কোন কোম্পানি আপনার মতো মার্কেটিংয়ের কাজ করেছে। এর পাশাপাশি, ওই মার্কেটিং করে তারা কতটুকু সফলতা পেয়েছে, সেটিও আপনাকে জানতে হবে।
যদি আপনি গোটা বিশ্বের মধ্যে লক্ষ্য করে দেখেন, তাহলে আপনি অনেক কোম্পানির নাম জানতে পারবেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের টেলিমার্কেটিংয়ের সাথে যুক্ত আছে।
এবং সেই কোম্পানিগুলোর নাম নিচে উল্লেখ করা হলো:
- SCIENCE Technologies
- Helpware
- Simply Contact
- SupportYourApp
- Unity Communications
- Intelegencia
- XACT
- Remote CoWorker
- Valoris Center
যদিও উল্লিখিত কোম্পানিগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের, তবে এবার আমি আপনাকে আমাদের বাংলাদেশের কিছু টেলিমার্কেটিং কোম্পানির সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো, যারা দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের টেলিমার্কেটিংয়ের সাথে যুক্ত আছে।
এবং সেই কোম্পানিগুলোর নাম নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ASL BPO
- Quantanite
- SkyTech Solutions
- Ignite Tech Solutions
- 360-supports
- TeleConsult Group (TCG)
- Impel Service & Solutions Limited (ISSL)
- Call Point Business Solutions
- RPSI Limited: TECH-TEAM
উপরের তালিকায় আপনি যেসব কোম্পানির নাম দেখতে পাচ্ছেন, এগুলো হলো বাংলাদেশের মধ্যে থাকা টেলিমার্কেটিং কোম্পানি, যারা দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের মার্কেটিংয়ের সাথে যুক্ত আছে।
আপনার জন্য আরোও আছে…
- পিন্টারেস্ট মার্কেটিং কি ? কিভাবে পিন্টারেস্ট মার্কেটিং করবেন ?
- ইউটিউব মার্কেটিং কি ? কিভাবে ইউটিউব মার্কেটিং করবেন ?
- Linkedin কি? কেন লিংকডইন মার্কেটিং করবেন?
টেলি মার্কেটিং এর সুবিধা গুলো কি কি?
যেহুতু আজকের আলোচনা থেকে আমরা Telemarketing ki সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। সেহুতু এবার আমাদের আরো একটি বিষয় জেনে নিতে হবে।
সেটি হলো, টেলি মার্কেটিং এর সুবিধা গুলো কি। এর কারণ হলো, যখন আপনি টেলি মার্কেটিং করবেন। তখন আপনি বিভিন্ন দিক থেকে সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
আর এবার আমি আপনাকে সেই টেলি মার্কেটিং এর সুবিধা গুলো সম্পর্কে বলবো। যেগুলো নিচে ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হলো।
ক্রেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়
আপনি যখন টেলিমার্কেটিং করবেন, তখন আপনি ক্রেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। যার ফলে আপনি উক্ত মার্কেটিং এর মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে পারবেন।
সেই সাথে আপনার প্রোডাক্ট ব্যবহার করার ফলে তারা কোনো সমস্যায় পড়েছে কিনা তা জেনে নিতে পারবেন। এর পাশাপাশি কোনো একটি প্রোডাক্ট সম্পর্কে ক্রেতাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে।
আপনি টেলি মার্কেটিং করার মাধ্যমে সেই প্রশ্ন গুলো সরাসরি শুনতে পারবেন। আর প্রয়োজনে তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদান করতে পারবেন।
টেলি মার্কেটিং অনেক দ্রুত ও কার্যকরী মাধ্যম
সত্যি বলতে যখন আপনি টেলিমার্কেটিং করবেন। তখন আপনি আপনার মার্কেটিং করার কাজ গুলো খুব দ্রুততার সাথে করতে পারবেন।
কেননা, আপনি একই সময়ে একাধিক ক্রেতার সাথে কথা বলতে পারবেন।
যার ফলে আপনার কোম্পানির প্রচার করার কাজটিও অনেক দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হবে। এছাড়াও আপনার কোম্পানির প্রোডাক্ট বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।
টেলি মার্কেটিং অন্যান্য মার্কেটিংয়ের তুলনায় সস্তা
অনেকেই হয়তবা মনে করবেন যে, টেলিমার্কেটিং করতে অনেক বেশি টাকার দরকার হয়। তো যদি আপনি এমনটা মনে করে থাকেন, তাহলে আপনার ধারনা সম্পূর্ণ ভুল।
কেননা, আপনি খুব কম পরিমান অর্থ ব্যয় করে টেলিমার্কেটিং এর কাজ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে একটি কল সেন্টার যুক্ত করতে হবে। আর সেই কল সেন্টারে কিছু অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর প্রয়োজন হবে।
যাদের মাধ্যমে আপনি টেলিমার্কেটিং এর কাজটি পরিচালনা করতে পারবেন। আর উক্ত কাজ গুলো করতে আপনার খুব বেশি টাকা খরচ করার প্রয়োজন পড়বে না।
তো এগুলো হলো টেলি মার্কেটিং এর সুবিধা। আর যদি আপনি আপনার ব্যবসার প্রচার ও প্রসার এর ক্ষেত্রে এই সুবিধা গুলো পেতে চান।
তাহলে আপনাকে অবশ্যই টেলি মার্কেটিং করতে হবে।
টেলি মার্কেটিং এর অসুবিধা কি?
যখন আপনি টেলিমার্কেটিং করবেন, তখন সুবিধার পাশাপাশি বেশ কিছু অসুবিধা লক্ষ্য করতে পারবেন। আর আমাদের সেই অসুবিধাগুলোর সম্পর্কে অবশ্যই সঠিক ধারণা রাখা উচিত।
টেলিমার্কেটিং-এর কিছু অসুবিধা নিচে উল্লেখ করা হলো:
০১ – গ্রাহকদের বিরক্তি
সত্যি বলতে, সবসময় সব মানুষের মনমানসিকতা ভালো থাকে না। এখন, আপনি যদি খারাপ পরিস্থিতিতে থাকা মানুষকে কল দিয়ে আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে বলেন, তবে সেটা তাদের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আরেকটি বিষয় হলো, অনেক মানুষ আছেন, যারা টেলিমার্কেটারদের সাথে কথা বলতে চান না। যার ফলে, এটি আপনার জন্যও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
০২- জটিলতা ও সময়সাপেক্ষ কার্যক্রম
একটি সাধারণ বিষয় ভেবে দেখুন—সবার প্রথমে আপনাকে আপনার টার্গেট করা কাস্টমারদের খুঁজে নিতে হবে। তারপর তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতে হবে এবং কল দিয়ে কথা বলতে হবে।
এই প্রাথমিক কাজগুলো করতে আপনার প্রচুর সময় ব্যয় হবে। এছাড়াও, কল সেন্টার সেটআপ করা, সেখানে দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেওয়া ইত্যাদি কাজের ক্ষেত্রেও আপনাকে অনেক সময় ব্যয় করতে হবে।
০৩- ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা
শুরুর দিকে আপনি হয়ত ছোট পরিসরে টেলিমার্কেটিং করতে পারবেন, তবে যখন আপনার ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি পাবে, তখন আপনাকে কল সেন্টার আরও প্রসারিত করতে হবে।
সেইসাথে, সেখানে আরো দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে এবং তাদের বেতন বাড়ানোর ঝামেলা থাকবে। এর ফলে, প্রথমদিকে টেলিমার্কেটিংয়ে খুব বেশি খরচ না হলেও, পরবর্তীতে আপনাকে আরও বেশি অর্থ খরচ করতে হবে।
অতএব, টেলিমার্কেটিং-এর ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেড়ে যাবে।
০৪ – কাস্টমারদের থেকে প্রতিক্রিয়া না পাওয়া
টেলিমার্কেটিং করার সময় আপনি যত কল করবেন, তার মধ্যে অনেক কল গ্রাহকরা রিসিভ করবেন না। আবার, অনেক কাস্টমার কল রিসিভ করার পরও কোনো প্রতিক্রিয়া দিবেন না।
এর ফলে, আপনি যে সময় ও অর্থ ব্যয় করে মার্কেটিং করেছেন, সেখান থেকে কোনো বেনিফিট পাবেন না।
কল সেন্টার ও টেলি মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য কি
কল সেন্টার এবং টেলিমার্কেটিং, দুটোই টেলিফোন ব্যবহার করে গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করার একটি উপায়। তবে, তাদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে।
কল সেন্টার হলো একটি কেন্দ্র যেখানে গ্রাহক সেবা, বিক্রয় বা অন্যান্য উদ্দেশ্যে টেলিফোন কল পরিচালিত হয়। কল সেন্টারগুলি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা দ্বারা পরিচালিত হতে পারে, ছোট থেকে বড়।
অন্যদিকে, টেলিমার্কেটিং হলো একটি বিক্রয় কৌশল, যেখানে একজন বিক্রয় প্রতিনিধি বা টেলি সেলসপার্সন সম্ভাব্য গ্রাহকদের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করে।
টেলিমার্কেটিংয়ের লক্ষ্য হলো নতুন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা, বিদ্যমান গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক গড়তে সহায়তা করা এবং প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করা।
আপনি আরোও দেখে নিন…
- সিপিএ মার্কেটিং কি ? বাংলাই সিপিএ মার্কেটিং শিখুন পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন
- বাংলাদেশে অনলাইনে টাকা ইনকাম করার উপায়
- নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কি | কিভাবে Network Marketing করবেন
FAQs
টেলিসেল অর্থ কি
টেলিসেল অর্থ হল টেলিফোন ব্যবহার করে বিক্রয় করা। এটি একটি কার্যকর কেনাকাটার কৌশল হতে পারে যা নতুন গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে এবং বিদ্যমান গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।
টেলিসেলস কি কল সেন্টার
টেলিসেলস কল সেন্টার এর একটি অংশ হতে পারে। একটি কল সেন্টারে, টেলিসেলস প্রতিনিধিরা নতুন গ্রাহকদের আকর্ষণ করার জন্য বা বিদ্যমান গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য টেলিফোন ব্যবহার করে।
কল সেন্টার এজেন্ট এর কাজ কি
কল সেন্টার এজেন্টদের বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়, যার মধ্যে রয়েছে: গ্রাহকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, গ্রাহকদের সমস্যা সমাধান করা, বিক্রয় প্রক্রিয়া পরিচালনা করা এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা।
একজন ভালো টেলিমার্কেটিং কি করতে হয়
একজন ভালো টেলিমার্কেটিং এজেন্টের যা দক্ষতা এবং গুণাবলী থাকা উচিত: যোগাযোগ দক্ষতা, সম্পর্ক গড়ে তোলার দক্ষতা, প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার দক্ষতা, চাপের মধ্যে কাজ করার দক্ষতা।
একজন ভালো টেলিমার্কেটিং এজেন্টের সফল হওয়ার জন্য এই দক্ষতা এবং গুণাবলী অপরিহার্য।
টেলিমার্কেটিং প্রথম কবে চালু হয়
টেলিমার্কেটিং প্রথম 1960 চালু হয়েছিল। এটি তখন থেকে একটি জনপ্রিয় কেনাকাটা করার কৌশল হয়ে উঠেছে।
টেলি মার্কেটিং কি সহজ কথায়
টেলি মার্কেটিং হল একটি কেনাকাটা কৌশল যেখানে একজন বিক্রয় প্রতিনিধি টেলিফোন ব্যবহার করে গ্রাহকদের সাথে কথা বলে তাদের পণ্য কেনার জন্য রাজি করার চেষ্টা করে।
টেলি মার্কেটিং নিয়ে আমাদের কিছু কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আলোচনায় আমি আপনাকে টেলিমার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দিয়েছি। তবুও যদি আপনার টেলিমার্কেটিং সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকে, তবে আপনার প্রশ্নটি নিচে কমেন্টে লিখুন।
এই আর্টিকেলের টিপসগুলো অনুসরণ করে, আপনি আপনার মার্কেটিং আরও কার্যকর করতে পারবেন এবং আপনার ব্যবসার জন্য আরো বেশি গ্রাহককে আকৃষ্ট করতে পারবেন।
আর এতক্ষণ ধরে infoportalbd.com এর সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
Article Information Source from Wikipedia.com