সাধারণ প্রভিডেন্ট ফান্ড বা জিপিএফ এর টাকা কি হালাল?

আমার ওয়েবসাইটে পাবলিশ করা গত আর্টিকেলে আমি আপনাদের জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছিলাম। এবং সেই আর্টিকেলের মধ্যে আপনার অনেকেই একটি বিষয় কমেন্ট করে জানতে চেয়েছেন। সেটি হলো, সাধারণ প্রভিডেন্ট ফান্ড বা জিপিএফ এর টাকা হালাল নাকি হারাম। 

তো আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমি আপনাদের এই বিষয় টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। এবং আপনি যদি আজকের পুরো আর্টিকেল টি মনোযোগ দিয়ে পড়েন। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে, জিপিএফ এর টাকা কি হালাল নাকি হারাম। তাই আর দেরি না করে চলুন সরাসরি মূল আলোচনা তে ফিরে যাওয়া যাক। 

 

জিপিএফ কি?

আজকে আমরা অবশ্যই জিপিএফ এর টাকা হালাল নাকি হারাম সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। তবে তার আগে আমাদের জিপিএফ কি সে সম্পর্কে একটু ধারণা নেওয়া উচিত। যাতে করে আপনার পরবর্তী আলোচনা গুলো বুঝতে সুবিধা হয়। 

সহজ কথা বলতে গেলে জিপিএফ হলো একটি শব্দ সংক্ষেপ। এবং এর পূর্ণরূপ হলো, General Provident Fund. যার অর্থ হল, আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে যেসব সরকারি চাকরিজীবী রয়েছে। যারা মূলত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। তাদের জন্য ভবিষ্যতের সঞ্চয়কৃত তহবিল এর নাম হল, জিপিএফ।

যেখানে একজন সরকারি কর্মচারী হওয়ার ফলে আপনার মোট বেতন থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ কর্তন করে নেয়া হবে। এবং সেই কর্তন করে নেওয়া অর্থ আপনার জিপিএফ ফান্ড এর মধ্যে দিয়ে জমা হবে। এবং পরবর্তী সময়ে যখন আপনি উক্ত চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত হবেন। তখন আপনার সঞ্চয়কৃত অর্থের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ সহ আসল টাকা ফেরত দেওয়া হবে। মূলত এই বিশেষ পদ্ধতি কে বলা হয়ে থাকে, জিপিএফ। 

 

প্রভিডেন্ট ফান্ড কি?

আমরা যে ফান্ড কে প্রভিডেন্ট ফান্ড হিসেবে চিনি। তাকে বলা হয়ে থাকে, সাধারন ফান্ড। যার মূল উদ্দেশ্য হলো বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে যে সকল সরকারি কর্মচারী রয়েছে। তাদের মোট যে পরিমাণ অর্থ বেতন দেওয়া হয়। সেখান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কর্তন করে নেওয়া হবে এবং তার যে অর্থ কর্তন করা হবে। সেটি নির্দিষ্ট একটি ফান্ড এর মধ্যে জমা হয়ে থাকবে। 

এবং পরবর্তী সময়ে সেই জমাকৃত অর্থের উপর ভিত্তি করে কিছু পরিমাণ সুদ প্রদান করা হবে। আর এই সুদের টাকা সহ আসল টাকা তখনই প্রদান করা হবে। যখন সেই সরকারি কর্মচারী ব্যক্তি তার নির্দিষ্ট চাকরি থেকে অবসর নিবেন। সে কারণে এই ধরনের ফান্ড নিয়ে বলা হয়ে থাকে সরকারি কর্মচারীর ভবিষ্যৎ তহবিল। 

 

জিপিএফ এর সুবিধা কি?

উপরের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, জিপিএফ ফান্ড কি এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড বলতে কী বোঝায়। তো এই বিষয় গুলো জানার পাশাপাশি এবার আমাদের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। সেটি হল, জিপিএফ এর সুবিধা গুলো কি কি। 

অর্থাৎ আপনি যদি একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে থাকেন। এবং আপনি যদি জিপিএফ ফান্ড এর মধ্যে আপনার বেতনের কিছু পরিমাণ অর্থ জমা করে রাখেন। তাহলে আপনি যে সকল সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। সেই সুবিধা গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।

  1. সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, আপনি যদি জিপিএফ ফান্ড এর মধ্যে টাকা জমা করে রাখেন। তাহলে আপনার জিপিএফ সুদ এর পরিমাণ চক্রাকারে বৃদ্ধি পাবে। 
  2. এবং পরবর্তী সময়ে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে। আপনি সুদ সহ আসল টাকা ফেরত নিতে পারবেন। 
  3. আপনি সরকারি চাকরি পাওয়ার সাথে সাথে জিপিএফ এর মধ্যে আপনার ভবিষ্যৎ তহবিল জমা করে রাখতে পারবেন। 
  4. একজন পুরুষ ব্যক্তি হিসেবে যখন আপনি জিপিএফ এর মধ্যে অর্থ সঞ্চয় করবেন। তারপর বিবাহ করার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয় ভাবে আপনার স্ত্রী সেই জিপিএফ এর নমিনি হিসেবে নিযুক্ত হয়ে যাবে। 
  5. এছাড়াও জিপিএফ এর মধ্যে আপনার জমাকৃত অর্থের উপর ভিত্তি করে মোট ১৩% পর্যন্ত সুদ প্রদান করা হবে। 
  6. যখন আপনার বয়স ৫২ বছর হবে, তখন আপনি জিপিএফ থেকে আপনার প্রয়োজনীয় অর্থ উত্তোলন করে নিতে পারবেন। 
  7. সরাসরি অফিসের মধ্যে আবেদন করার মাধ্যমে আপনি আপনার জিপিএফ অগ্রীম উত্তলন করে নিতে পারবেন। 
  8. চাকরি শেষে যখন আপনি অবসরপ্রাপ্ত হবেন। তখন আপনি জিপিএফ থেকে মোটা অংকের টাকা পাবেন যাওয়া। আর পরবর্তী সময়ে আপনি সেই টাকা বিভিন্ন কাজে ব্যয় করতে পারবেন। 

তো বর্তমান সময়ে একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে আপনি যদি জিপিএফ ফান্ডের মধ্যে ভবিষ্যৎ তহবিল জমা করে রাখেন। তাহলে আপনি যে সকল সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। সেই সুবিধা গুলো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। 

 

জিপিএফ এর সুবিধা আছে কি?

আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা আসলে জানতে চান যে জিপিএফ এর সুবিধা আছে কি না। তো যারা আসলে এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান, তাদের বলে রাখি যে, অবশ্যই জিপিএফ এর বিভিন্ন রকমের সুবিধা রয়েছে। কেননা আপনি কোন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি করার সাথে সাথেই জিপিএফ এর মধ্যে। আপনার মোট বেতনের কিছু পরিমাণ অর্থ ভবিষ্যতে হবে জমা করে রাখতে পারবেন। 

এবং এই স্বল্প পরিমাণ অর্থ জিপিএফ নামক ফান্ড এর মধ্যে জমা হওয়ার পরে। আপনার অর্থের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ প্রদান করা হবে। আর যখন আপনি সেই সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রাপ্ত বলে নির্ধারিত হবেন। তখন আপনি আপনার জিপিএফ ফান্ড এর মধ্যে মোট জমাকৃত অর্থ সহ সুদ পাবেন। 

আর চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে যখন আপনার বয়স বেশি হয়ে যাবে। তখন আপনি আপনার জিপিএফ ফান্ডের মধ্যে জমাকৃত অর্থ উত্তোলন করে বিভিন্ন কাজে ব্যয় করতে পারবেন। মূলত এই সুবিধা গুলোই আপনি জিপিএফ নামক সাধারণ প্রভিডেন্ট ফান্ড এর মধ্যে ভোগ করতে পারবেন। 

 

সরকারি চাকরিজীবিদের যে জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড (জিপিএফ) আছে, সেখানে টাকা রাখলে সুদ হবে কি না?

স্বাভাবিক ভাবে বর্তমান সময়ে যে নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। সেই নিয়ম অনুযায়ী আপনি যদি একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে থাকেন। তাহলে আপনার মোট বেতন থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ কর্তন করে নেওয়া হবে। এবং সে গুলো আপনার ভবিষ্যৎ তহবিল অর্থাৎ জিপিএফ এর মধ্যে জমা করে রাখা হবে। 

আর যখন আপনার এই ভবিষ্যৎ তহবিল অর্থাৎ জিপিএফ এর মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা হবে। তখন সরকার কর্তৃক সেই মোট জমাকৃত অর্থের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ প্রদান করা হবে। 

 

প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা সুদ হিসেবে গণ্য হবে কি না?

আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা আসলে জানতে চান যে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা সুদ হিসেবে গণ্য করা হবে কিনা। তো যারা আসলে এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তাদের স্পষ্ট করে বলে রাখি যে, এটি অবশ্যই সুদ হিসেবে গণ্য হবে। 

কেননা এখানে স্পষ্ট করেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, আপনার জমাকৃত মোট অর্থের উপর ভিত্তি করে ১৩ শতাংশ সুদ প্রদান করা হবে। আর যেহেতু এটা বলাই রয়েছে, সেহেতু এখানে প্রশ্ন করার আর অবকাশ নেই যে, প্রভিডেন্ট ফান্ড এর টাকা সুদ হিসেবে গণ্য হবে কিনা। 

 

সাধারণ প্রভিডেন্ট ফান্ড বা জিপিএফ এর টাকা কি হালাল?

তো এবার আসা যাক মূল বিষয়ে। অর্থাৎ আমরা অনেকে জানতে চাই যে, সাধারণ প্রভিডেন্ট ফান্ড বা জিপিএফ এর টাকা কি হালাল নাকি হারাম। আর আপনারা যারা এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তাদের বলে রাখি যে, প্রতিটা ধর্মেই সুদের টাকা হারাম হিসাবে গণ্য করা হয়। 

আর জিপিএফ এর মধ্যে আপনার জমাকৃত  টাকা থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ প্রদান করা হবে। এবং আপনি যদি সেই সুদসহ আসল টাকা গ্রহণ করেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সেই টাকা গুলো হারাম হিসেবে গণ্য করা হবে। 

 

আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা 

প্রিয় পাঠক, আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমি আপনাদের একটি বিষয় জানিয়ে দিয়েছি। সেটি হলো, সাধারণ প্রভিডেন্ট ফান্ড বা জিপিএফ এর টাকা হালাল নাকি হারাম। আশা করি, আপনি এ বিষয় টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়ে গেছেন। 

তবে আজকের আলোচিত আলোচনা সম্পর্কে যদি আপনার কোন ধরনের দ্বিমত থাকে কিংবা আপনি কোন কিছু জানিয়ে দিতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনার বলা কথাটি নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।

আর আপনি যদি এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো সবার আগে পেতে চান। তাহলে অবশ্যই আমাদের সাথে থাকার চেষ্টা করবেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top