ড্রপশিপিং বিজনেস কি? বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি অনলাইন ব্যবসার নাম, যেখানে আপনি কোনো প্রকার বিনিয়োগ ছাড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবেন।
বিশ্বাস হচ্ছে না, ভাই? না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
কারণ ড্রপশিপিং ব্যবসা সম্পর্কে এখনও অনেকেই সঠিকভাবে জানে না। আর যারা একবার এই অনলাইন ব্যবসাটিকে বুঝে নিয়েছে, তারা আজ লক্ষ টাকার মালিক।
শুধু তাই নয়, আমি আপনাকে ডজনখানেক ব্যক্তির উদাহরণ দিতে পারব, যারা ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছে।
তবে কে কত টাকা আয় করেছে, সেটি আজকের আলোচনার বিষয় নয়। বরং তারা কী কাজ করে এত টাকা আয় করতে পেরেছে, সেই বিষয়গুলো নিয়েই আজ বিস্তারিত আলোচনা করব।
এর পাশাপাশি, ড্রপশিপিং আসলে কি এবং এই ব্যবসা করতে হলে আপনাকে কী কী বিষয় জানতে হবে। সব কিছুই আজকের আর্টিকেলে জানবেন।
তাই যদি আপনিও ড্রপশিপিং ব্যবসার মাধ্যমে আয় করতে চান, তাহলে একটু সময় নিয়ে আজকের পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
এতে Drop Shipping সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য জানতে পারবেন।
ড্রপশিপিং কি? (What is Drop Shipping in bengali)
ড্রপশিপিং হলো অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসা করার একটি পদ্ধতি, যেখানে আপনি মানুষের দৈনন্দিন পণ্যের চাহিদা মেটাবেন, কিন্তু আপনাকে কোনো পণ্য মজুদ করতে হবে না।
এর পাশাপাশি, আপনি মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা মেটাতে অন্য কোনো সোর্স থেকে সেই পণ্য সরবরাহ করবেন।
যেমন ধরুন, আপনার একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট আছে, যেখানে বিভিন্ন পণ্যের ছবি দেওয়া আছে। এখন আমি আপনার ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি পণ্য পছন্দ করলাম।
আপনি আরো পড়ুন….
- অনলাইনে ইনকাম করার ১৩টি সহজ উপায়
- ট্রেড লাইসেন্স কি? কিভাবে ট্রেড লাইসেন্স করতে হয়
- ই-কমার্স কি? কিভাবে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করবেন?
আমি সেই পণ্যটি কেনার জন্য অর্ডার করলাম। আপনি অর্ডারটি গ্রহণ করে অন্য কোনো জায়গা থেকে পণ্যটি অর্ডার করে সরাসরি আমার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলেন। মূলত এই পদ্ধতিই ড্রপশিপিং ব্যবসা।
বোঝা গেল না? তাহলে আরেকটু ব্যাখ্যা করি।
মনে করুন, আপনি মোবাইল সামগ্রীর একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করলেন, যেখানে মোবাইলের হেডফোন, কভার, চার্জার ইত্যাদির ছবি ও দাম দেওয়া আছে। এখন আমি সেই ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি হেডফোন পছন্দ করলাম এবং সেটি অর্ডার করলাম।
এরপর আপনি Daraz বা BDShop থেকে সেই হেডফোনটি অর্ডার করে আমার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবেন, যেটা আমি আপনার ওয়েবসাইটে দিয়েছিলাম।
এই পুরো প্রক্রিয়াকেই ড্রপশিপিং বলা হয়।
ড্রপশিপিং বিজনেস কি?
যখন আপনি ড্রপশিপিংকে কেন্দ্র করে অনলাইনের মাধ্যমে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করবেন, তখন তাকে বলা হয় ড্রপশিপিং বিজনেস।
এতে আপনাকে কোনো পণ্য মজুদ করতে হবে না, কোনো গুদামের প্রয়োজন হবে না। অথচ আপনি অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা মেটাতে পারবেন।
তবে শুধুমাত্র পণ্যের আদান-প্রদানের মধ্যে এটি সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং এই কাজের বিনিময়ে আপনি বেশ ভালো পরিমাণে আয় করতে পারবেন।
হ্যাঁ, এটা সত্য যে বর্তমানে এখনও অনেকেই এই অনলাইন বিজনেস সম্পর্কে জানে না। কিন্তু যারা ইতিমধ্যে এই ব্যবসার খুঁটিনাটি শিখে নিয়েছে, তারা এখন ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে বেশ ভালো পরিমাণে আয় করতে সক্ষম হয়েছে।
কেন Drop Shipping বিজনেস করবেন?
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, বর্তমানে অনলাইনে এত ধরনের ব্যবসা থাকার পরেও কেন আপনি ড্রপশিপিং ব্যবসা করবেন? কী আছে এই ব্যবসায়?
দেখুন, সবার আগে একটি বিষয় জানা অত্যন্ত জরুরি। তা হলো, অনলাইনে আপনি যেকোনো ব্যবসা করেন না কেন, আপনি এখানে অনেকদিক থেকে সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
আর ড্রপশিপিং ব্যবসা তাদের মধ্যে অন্যতম। কারণ এই অনলাইন ব্যবসায় আপনি অনেক ধরনের সুবিধা পাবেন। এখন সেই সুবিধাগুলোকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
তাহলে, যদি আপনি Drop Shipping Business করেন, তবে বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। যেমন:
#১: কোনো ইনভেস্টমেন্ট নেই
হুম, আমরা সবাই জানি যে কোনো ব্যবসা শুরু করতে চাইলে প্রথমেই ইনভেস্টমেন্ট প্রয়োজন। সত্যি বলতে, এটি যে কোনো ব্যবসার মূল সূত্র।
কিন্তু ড্রপশিপিং হলো এমন এক ধরনের ব্যবসা, যেখানে কোনো প্রকার ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে না। তবুও, বিনিয়োগ ছাড়াই আপনি এই ব্যবসা থেকে আয় করতে পারবেন। ব্যাপারটা মজার, তাই না?
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, “ব্যবসা করব কিন্তু ইনভেস্ট করতে হবে না কেন?”
এর কারণ হলো, আপনাকে কোনো পণ্য কিনতে হবে না। যখন গ্রাহক আপনার কাছে কোনো পণ্যের অর্ডার করবে, তখন আপনি সেই পণ্য অন্য কোনো অনলাইন স্টোর থেকে অর্ডার করে সরাসরি গ্রাহকের ঠিকানায় পাঠাবেন।
তাই এই পদ্ধতিতে কাজ করতে হলে আপনাকে কোনো প্রকার বিনিয়োগ করতে হবে না।
#২: কোনো ঘর/জায়গা লাগবে না
ড্রপশিপিং ব্যবসার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে আপনাকে কোনো ঘর বা গুদাম ভাড়া করতে হবে না।
কারণ আপনি এখানে যেসব কাজ করবেন, সেগুলো সবই অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
সাধারণত, যখন আপনি একটি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করবেন, তখন গ্রাহকদের পণ্য মজুদ রাখার জন্য গুদামের প্রয়োজন হয়। গ্রাহক অর্ডার করলে, আপনি সেই পণ্য ডেলিভারি করবেন।
কিন্তু ড্রপশিপিং ব্যবসায় আপনাকে কোনো পণ্য মজুদ করতে হবে না, কারণ আপনি নিজের কোনো পণ্য বিক্রি করছেন না। বরং অন্য কোনো ই-কমার্স শপ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে গ্রাহকের কাছে পাঠিয়ে দেবেন।
#৩: এটি অনলাইন ব্যবসা
আমি আগেই বলেছি, “অনলাইনে ব্যবসা করলে তুলনামূলকভাবে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়।” এখন আপনি হয়তো এই কথার সাথে একমত হবেন, হয়তো না।
তবে, যদি একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে দেখবেন যে অনলাইনে ব্যবসা করলে আপনার জীবনে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। যেমন, যেসব কাজ করবেন, সেগুলো করতে আপনাকে বাইরে যেতে হবে না।
বরং আপনি ঘরে বসেই কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সামনে থেকে সবকিছু মেইনটেইন করতে পারবেন।
এছাড়া, বর্তমান যুগ হলো প্রযুক্তির যুগ। তাই যদি আপনি অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন, তাহলে খুব দ্রুত আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে পারবেন।
কিভাবে ড্রপশিপিং বিজনেস করবেন?
ড্রপশিপিং ব্যবসা নিয়ে এত কিছু জানার পর এখন আপনার মনেও এই ব্যবসা করার ভুত চাপতে পারে। তো এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, কিভাবে আপনি এই ড্রপশিপিং বিজনেস শুরু করবেন।
তো এবার সে নিয়ে আলোচনা করা যাক।
যদি আপনি ড্রপশিপিং বিজনেস করতে চান, তাহলে সবার আগে আপনাকে কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। সত্যি বলতে, আপনি যদি এই বিষয়গুলোকে তেমন কোনো গুরুত্ব না দেন, তাহলে আপনি এই বিজনেস চলাকালে মাঝপথে হোঁচট খেয়ে যাবেন।
তাহলে এবার প্রশ্ন হলো, কি সেই বিষয়! যেগুলো না জানলে ড্রপশিপিং ব্যবসাতে সফলতা পাওয়া অসম্ভব?
No-1: Targeted Product
যেহেতু ড্রপশিপিং এবং ই-কমার্স এই দুটোই একই প্রক্রিয়ায় কাজ করে, সেহেতু আপনাকেও সেই কাজগুলো করতে হবে, যেগুলো একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটে করা হয়ে থাকে।
আর সবগুলো কাজের মধ্যে অন্যতম হলো, প্রোডাক্ট সিলেকশন করা। কারণ আপনি আসলে কোন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করবেন, সেটি যদি নির্বাচন করতে না পারেন, তাহলে আপনি অডিয়্যান্স টার্গেট করতে অনেক সময় ভুল করে থাকবেন।
তবে এখানে কোনো বাধাধরা নেই যে আপনাকে নির্দিষ্ট কোনো পণ্য নিয়ে বিজনেস করতে হবে। বরং আপনি যে পণ্যগুলোকে ভালো মনে করবেন, আপনি সেই পণ্যের উপর ভিত্তি করে ড্রপশিপিং বিজনেস শুরু করতে পারবেন।
যেমন, আপনি যদি চান তাহলে ইলেকট্রনিক্স পণ্য দিয়ে শুরু করতে পারেন। আবার আপনি যদি চান তাহলে মোবাইল এক্সেসরিজ নিয়েও ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। মোটকথা, এটা সম্পূর্ণ আপনার উপরেই নির্ভর করবে।
No-2: Targeted Audience
আপনি আসলে কোন পণ্য নিয়ে কাজ করবেন, যখন আপনি সেই বিষয়টি সিলেক্ট করতে পারবেন, তখন আপনার দ্বিতীয় কাজ হলো অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানো।
কারণ যতক্ষণ না আপনি আপনার টার্গেট করা অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে পারবেন, ততক্ষণ আপনি কোনো প্রকার সফলতার মুখ দেখতে পারবেন না।
এখানে টার্গেটেড অডিয়েন্স বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছি যে, আপনি যে পণ্যের উপর ভিত্তি করে ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করবেন, আসলে আপনার সেই পণ্যের কাস্টমার কে, তাদের বয়স কিরকম হবে, তারা আর্থিকভাবে কেমন স্বচ্ছল হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় টার্গেটেড অডিয়েন্স।
No-3: Promote Your Drop Shipping Business
একটা কথা চিন্তা করে দেখুন, মনে করুন যে মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক তৈরি করলো। কিন্তু এই কথাটা কাউকে জানালো না। তাহলে কি কেউ ফেসবুক ব্যবহার করবে? না, কারণ আপনি তো জানেনই না যে ফেসবুক নামে কিছু একটা আছে।
ঠিক একইভাবে এবার আপনার দিক থেকে চিন্তা করে দেখুন। আপনি সদ্য নতুন একটা ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করলেন। কিন্তু আপনি বাদে অন্য মানুষগুলো জানতে পারলো যে, আপনার কোনো বিজনেস আছে।
তাহলে কিন্তু আপনি কোনো প্রকার বেনিফিট পাবেন না।
আর একথা তো মিথ্যা নয় যে প্রচারেই প্রসার। কারণ আপনি টিভি চালু করলেই দেখতে পারবেন যে, বিশ্বের কত নামীদামী ব্র্যান্ডগুলো কিভাবে তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে।
ঠিক একইভাবে আপনাকেও আপনার ব্যবসার প্রচার করতে হবে।
এরফলে যারা আপনার টার্গেটেড কাস্টমার, তারা আপনার ব্যবসা সম্পর্কে জানতে পারবে এবং আপনার কাছ থেকে পণ্য নেয়ার জন্য আগ্রহী হবে।
ড্রপশিপিং ব্যবসা করতে কি কি লাগে?
এবার আমরা একটি নতুন টপিক সম্পর্কে জানতে পারবো। হয়তো এতক্ষণ ধরে আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনিও ড্রপশিপিং বিজনেস করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে যেতে পারেন।
আর এই সময়ে আপনার মনে একটি প্রশ্ন জেগে থাকতে পারে যে, উক্ত বিজনেসটি করার জন্য কি কি জিনিসের প্রয়োজন হয়।
তো যদি আপনি ড্রপশিপিং বিজনেস করতে চান, তাহলে আপনার বেশ কিছু জিনিসের প্রয়োজন পড়বে। যেমন,
#L-1: Device & Other’s
দেখুন, যেহেতু এটি একটি অনলাইন বিজনেস, তাই এখানে আপনি যা করবেন তার সবকিছু আপনাকে অনলাইনের মাধ্যমে করতে হবে। আর অনলাইনে কাজ করার জন্য প্রয়োজন হলো উপযুক্ত ডিভাইস।
ঘরে বসে কাজ করার জন্য আপনার হাতে কোনো ল্যাপটপ/পিসি/মোবাইল থাকতে হবে। এই ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে আপনি ঘরে বসে যাবতীয় কাজগুলো করতে পারবেন।
এর পাশাপাশি সেই ডিভাইসে অবশ্যই পর্যাপ্ত ইন্টারনেট কানেকশন থাকতে হবে। কেননা, আপনি যা করবেন, তা সবকিছু ইন্টারনেট কানেকশনের মাধ্যমে করতে হবে। অন্যথায় আপনি এই বিজনেসের কোনো কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন না।
#L-2: Business Websites
ড্রপশিপিং ব্যবসা করার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ওয়েবসাইট। যদি আপনি অনলাইনে এই ব্যবসার সাথে নিজেকে যুক্ত করতে চান, তাহলে সবার আগে আপনাকে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে।
আর এই ওয়েবসাইট থেকে আপনার অনলাইন বিজনেসের যাবতীয় কাজগুলো পরিচালনা করতে হবে।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, “আমি তো ড্রপশিপিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে বিজনেস করবো, তো আমার জন্য ওয়েবসাইটের দরকার পড়বে কেন?“
দেখুন, যখন আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকবে, তখন আপনি সেই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পণ্যের ছবি এবং দাম লিখে দিয়ে একটি অনলাইন শপের মতো সাজিয়ে নিতে পারবেন। এরপর কাস্টমার আপনার ওয়েবসাইটে আসবে এবং বিভিন্ন পণ্য দেখবে।
যখন তাদের কোনো পণ্য ভালো লাগবে, তখন তারা আপনার ওয়েবসাইটে এসে অর্ডার করবে।
- ডোমেইন কি?
- হোস্টিং কি?
- ওয়েব ডিজাইন কি?
#L-3: Creativity & Improvement
দেখুন, আপনি যেখানেই কাজ করুন না কেন, উক্ত কাজে অবশ্যই আপনার মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি থাকতে হবে। যদি আপনি সেই ক্রিয়েটিভিটিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে আপনি সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পারবেন।
অন্যথায় আপনাকেও ব্যর্থতার ঝুলি বহন করতে হবে।
ঠিক তেমনিভাবে যখন আপনি ড্রপশিপিং ব্যবসায় যুক্ত হবেন, তখন আপনাকে ক্রিয়েটিভ কিছু করতে হবে। আপনাকে এমন কিছু করতে হবে যা অন্যরা এখনও করতে পারেনি।
যেমন, সবার আগে আপনাকে কাস্টমারদের টার্গেট করতে হবে। এখন আপনি কিভাবে কাস্টমারকে টার্গেট করবেন, সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার উপর।
আবার কোন কাস্টমারের কি কি পণ্যের প্রতি চাহিদা বেশি, সেগুলো আপনাকে নিজের ক্রিয়েটিভিটিকে কাজে লাগিয়ে খুঁজে নিতে হবে।
কিভাবে ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করবেন?
অবশ্য এই বিষয়টি নিয়ে আমি উপরের দিকে ছোট্ট করে আলোচনা করেছি। তাই এবার সেই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, যেন Drop Shipping ব্যবসা নিয়ে আপনার কোনো ধরনের সমস্যা না থাকে।
তো যখন আপনি এই অনলাইন বিজনেসের শুরুর ধাপগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন, যেমন Product Selection, Audience ইত্যাদি কাজগুলো সম্পন্ন করবেন, তখন আপনার পরবর্তী ধাপ হবে একটি আকর্ষণীয় ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করা।
হ্যাঁ, কারণ এই বিজনেসের যে কাজগুলো করা হবে, তার সবগুলো কাজ এই ওয়েবসাইট থেকে পরিচালনা করতে হবে।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, ভাই আমি তো ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারি না। তাহলে আমি কিভাবে ড্রপশিপিং ওয়েবসাইট তৈরি করবো?
তো যদি আপনার ভেতরে ড্রপশিপিং বিজনেস করার একান্ত আগ্রহ থাকে, তাহলে আপনার সামনে যতই সমস্যা আসুক না কেন, আপনি তুফান গতিতে সেই সমস্যা গুলোর সমাধান করতে পারবেন।
আর বর্তমানে খুব সহজেই যেকোনো টাইপের ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব। যদি আপনার অর্থ ব্যয় করার মতো সামর্থ্য থাকে।
তাহলে আপনি কোনো অভিজ্ঞ ওয়েব ডিজাইনারকে দিয়ে একটি Professional Drop Shipping Website তৈরি করে নিতে পারবেন।
অথবা আপনি যদি ফ্রীতে একটি আকর্ষণীয় ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান, তাহলে আপনার সামনে অনেকগুলো পথ খোলা থাকবে। আপনি চাইলে যেকোনো একটি পথ অবলম্বন করতে পারবেন।
সেজন্য আপনাকে সরাসরি Google-এ গিয়ে সার্চ করতে হবে “Best Free Website Making Platform”। তাহলে আপনার সামনে এমন ডজন খানেক প্লাটফর্মের লিস্ট চলে আসবে, যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই আকর্ষণীয় ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারবেন।
ড্রপশিপিং ব্যবসা করে ইনকাম করার উপায়
এবার আমরা মূল টপিকে ফিরে আসবো। আপনি এতোক্ষণ ধরে ড্রপশিপিং সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনে গেছেন।
কিন্তু এই বিজনেস করে আপনি কিভাবে ইনকাম করতে পারবেন এবং কত টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারবেন, সে বিষয়ে কথা বলা যাক। যার জন্য আপনি অধীর আগ্রহে বসে আছেন।
তো, আপনি আসলে কত টাকা ইনকাম করতে পারবেন, সেটি বোঝার জন্য আপনাকে কিছু উদাহরণ দিতে হবে।
দেখুন, আপনি যে ড্রপশিপিং ওয়েবসাইটটি তৈরি করবেন, ধরে নিলাম আপনি মোবাইলের যাবতীয় যন্ত্রাংশ নিয়ে বিজনেস করছেন। তো আমি আপনার ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি হেডফোন অর্ডার করলাম, যার বাজেট হলো ৫০০/-।
এখন আপনি সেই হেডফোন অন্য কোনো Online Shop থেকে ৪০০/- দিয়ে কিনে আমাকে ডেলিভারি দিলেন। তো এই কাজের বিনিময়ে আপনার একটি হেডফোন সেল করে ১০০/- ইনকাম করতে পারলেন।
ঠিক এইভাবে, আপনি যে পণ্যগুলো আপনার কাস্টমারকে সেল করবেন, সেই পণ্যের বাজার দর থেকে আপনি একটু বেশি পরিমাণে চার্জ নিবেন। মূলত এখান থেকেই আপনি ইনকাম করতে পারবেন।
আপনি আরও দেখতে পারেন:
- ফেসবুক থেকে ইনকাম করার উপায়
- মাইক্রো নিস ব্লগ কি? কিভাবে মাইক্রো নিস ব্লগ থেকে ইনকাম করবেন?
- সার্ভে কি? সার্ভে করে আয় করার উপায়
এখন আপনি দিন শেষে কত টাকা ইনকাম করতে পারবেন, তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আসলে আপনি কি পরিমাণ পণ্য সেল করতে পারবেন তার উপর। আপনি যত বেশি পণ্য বিক্রি করতে পারবেন, আপনার কমিশন ঠিক ততোই বৃদ্ধি পাবে।
ড্রপশিপিং বিজনেস এর সুবিধা
যদি আপনি এই বিজনেসে নিজেকে যুক্ত করেন, তাহলে আপনি অনেক ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। যেমন:
- কম মূলধন দিয়ে শুরু: ড্রপশিপিং বিজনেস খুব কম মূলধন দিয়ে শুরু করা যায়। অর্থাৎ, আপনি যদি বাড়িতে অযথা বেকার বসে না থেকে কিছু একটা করতে চান, তাহলে আপনার জন্য উপযুক্ত হবে এই বিজনেস দিয়েই ক্যারিয়ার গড়া।
- বেশি মুনাফার সুযোগ: এই বিজনেসে কম মূলধন দিয়ে শুরু করা হলেও এখান থেকে আপনি বেশ ভালো পরিমাণে ইনকাম করতে পারবেন। অর্থাৎ, আপনি কম মূলধন দিয়েও বেশি পরিমাণে মুনাফা লাভ করতে সক্ষম হবেন।
- ঝুঁকির কমতা: এই বিজনেসে লস খাওয়ার ঝুঁকি অনেক কম থাকে। যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে, আপনি এই ব্যবসা থেকে তেমন ইনকাম আসছে না, তাহলে আপনি যখন ইচ্ছা তখনই এই বিজনেস থেকে ফিরে আসতে পারবেন।
- জায়গার প্রয়োজন নেই: এই বিজনেস আপনি যেকোনো জায়গা থেকে করতে পারবেন। আপনার কাছে শুধু একটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার আর ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই আপনি ড্রপশিপিং বিজনেস শুরু করতে পারবেন।
- সহজ পরিচালনা: সবচেয়ে বড় কথা হলো, আপনাকে এই বিজনেস করার জন্য তেমন মাথা খাটানোর প্রয়োজন পড়বে না। কারণ, এখানে আপনাকে কোনো পণ্যের গুদাম লাগবে না এবং গুদামঘর পরিচালনাও করতে হবে না।
ড্রপশিপিং বিজনেস এর অসুবিধা
এই অনলাইন বিজনেসের অনেক রকম সুবিধার পাশাপাশি আপনি বেশ কিছু অসুবিধাও দেখতে পারবেন, যেগুলো সম্পর্কেও আপনার জেনে নেয়া উচিত, যেন পরবর্তীতে আপনি কোনো প্রকার সমস্যাতে না পড়েন।
তো ড্রপশিপিং ব্যবসা করার সময় আপনি বেশ কিছু অসুবিধা লক্ষ্য করতে পারবেন, যেমন:
- প্রতিযোগিতা: যেহেতু এই বিজনেস করতে হলে খুব কম মূলধন প্রয়োজন হয়, তাই অনেকেই এই বিজনেসে যুক্ত হয়ে পড়ে। যার ফলে এই বিজনেস করার সময় আপনাকে প্রচুর পরিমাণে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে এবং এই প্রতিযোগিতায় আপনাকে টিকে থাকতে হবে।
- কম মুনাফা: এই বিজনেস শুরু করার পর পুনরায় এই বিজনেস বন্ধ করার মূল কারণ হলো, অনেক কম মুনাফা পাওয়া। আপনি পরিশ্রম করে অনেক সময় কম মুনাফা লাভ করতে পারবেন, যা আপনার হতাশার মূল কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
- লোকসানের ঝুঁকি: যেহেতু আপনি নিজের কোনো পণ্য সেল করবেন না, সেহেতু কোনো কাস্টমার আপনার কাছ থেকে পণ্য কিনলে যদি তাদের ভালো না লাগে এবং পুনরায় সেই পণ্যটি আপনার কাছে ব্যাক করে, তাহলে এর লোকসান আপনাকেই গুনতে হবে।
Pro Tips For Drop Shipping Business
এটি হল মূলত আপনার জন্য বোনাস টিপ। আপনি যখন এই বিজনেস শুরু করবেন কিংবা ইতিমধ্যে এই বিজনেস শুরু করে দিয়েছেন, তাহলে এবার আলোচিত টিপসগুলো আপনার অনেক উপকারে আসবে। যেমন:
TIPS-1: আপনি এই বিজনেস করার জন্য যে ওয়েবসাইট তৈরি করবেন, সেই ওয়েবসাইটটি যেন একেবারে প্রফেশনাল হয়। এর ডিজাইন থেকে শুরু করে ডোমেইন, হোস্টিং এ যেন কোনো প্রকার সমস্যা না হয়।
TIPS-2: আপনার ওয়েবসাইটে যেসব পণ্যের ছবি রাখবেন, চেষ্টা করবেন সেই ছবি যেন আকর্ষণীয় হয়। যেন কাস্টমাররা সেই পণ্যের ছবি দেখার পর সেটি কিনতে আগ্রহী হয়।
TIPS-3: এই বিজনেস শুরু করার পর আপনাকে লাগাতার প্রমোট/প্রচার করতে হবে। আর এই কাজের জন্য আপনি বর্তমানে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা সোশ্যাল মিডিয়া গুলোকে বেছে নিতে পারেন।
TIPS-4: আপনি যে পণ্য নিয়ে ড্রপশিপিং ব্যবসা করবেন, আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, ওই পণ্যটি নিয়ে আর কোথায়-কোথায় ই-কমার্স ওয়েবসাইট আছে কিনা। আপনি তাদের সাথে কথা বলুন, সেই পণ্যগুলো আপনাকে আরও কম রেটে দেয়ার জন্য অনুরোধ করুন।
আমাদের শেষকথা
আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনার ড্রপশিপিং বিজনেস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়ে গেছেন। এরপরও যদি আপনার ড্রপশিপিং ব্যবসা সম্পর্কে আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন।
তবে সবশেষে এটাই বলবো যে, জীবনে ঝুঁকি নিতে শিখুন; তাহলেই আপনি সফলতার স্তানে যেতে পারবেন।
নিয়মিত অনলাইন ইনকাম নিয়ে আরও পোস্ট পড়তে আমাদের Infoportalbd ব্লগ ভিজিট করুন।
Article Source: https://yappobd.com/ , https://www.shiprocket.in/ , https://en.wikipedia.org/