৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক

বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে যে সকল মানুষ করযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এবং যাদের ইনকাম ৫ লাখ টাকার বেশি, তাদের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র ক্রয় এর দিক থেকে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু যে সকল মানুষের আয় এর পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার কম, তাদের ক্ষেত্রে কম মূল্যের সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার সময় কোন ধরনের টিন সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন হবে না।

তবে এর বাইরেও সঞ্চয়পত্র ক্রয় এবং আয়কর রিটার্ন সম্পর্কে যে সকল বিষয় রয়েছে। আজকে আমি উক্ত বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তো চলুন আর দেরি না করে সরাসরি মূল আলোচনা তে ফিরে যাওয়া যাক।

 

৫ লক্ষ টাকা বা তার কম সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে কিনা?

আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন। যারা আসলে জানতে চান যে, ৫ লক্ষ টাকা বা তার কম সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার সময় টিন সার্টিফিকেট এর দরকার হবে কিনা। তো যারা আসলে এই বিষয় টি সম্পর্কে জানতে চান। তাদের বলে রাখি যে, আপনার পাঁচ লক্ষ টাকা বা তার কম সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার সময় কোন ধরনের টিন সার্টিফিকেট এর দরকার হবে না।

যদিও বা আগের দিন গুলো তে টিন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু ২০২২ সালের মূল্য ও সংযোজন কর এর নতুন নিয়ম অনুযায়ী। আপনার সঞ্চয়পত্র ক্রয় এর পরিমাণ যদি পাঁচ লক্ষ টাকার কম হয়। সেক্ষেত্রে আপনার জন্য টিন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক নয়।

তবে বর্তমান সময়ে নিয়ম অনুযায়ী যদি আপনার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার পরিমাণ 5 লক্ষ টাকার বেশি হয়। তাহলে কিন্তু আপনাকে বাধ্যতামূলক আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এবং সে ক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট এর দরকার হবে।

কিন্তু এখানে একটা কথা বলে রাখা উচিত। সেটি হল, আমরা অনেকেই টিন সার্টিফিকেট কে ঝামেলা মনে করি। তো যারা আসলে টিন সার্টিফিকেট ঝামেলা মনে করেন। তাদের বলে রাখি যে, এটা আপনার জন্যই ভালো। 

কেননা আপনি যখন আপনার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার সময় টিন সার্টিফিকেট জমা দিবেন। তখন আপনার আয়কর থেকে 10% কর্তন করা হবে। কিন্তু আপনি যদি টিন সার্টিফিকেট জমা না দেন। সে ক্ষেত্রে আপনার আয়কর থেকে ১৫% কর্তন করা হবে। যার পরিমাণ তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি। 

কেন সঞ্চয়পত্র আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে?

যদিও বা আগের দিন গুলো তে সঞ্চয়পত্র আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক ছিল না। কিন্তু বর্তমান সময়ে সেটি বাধ্যতামূল করা হয়েছে। আর সে কারণে আমরা অনেকেই জানতে চাই যে, কেন সঞ্চয়পত্র আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর আপনি যদি এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে শুনুন…… 

বিগত অর্থ বছর গুলো তে ব্যাপক সংখ্যক টিন সার্টিফিকেট এর রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৭৫ লক্ষ ১০ হাজার। কিন্তু সেই তুলনায় খুব কম পরিমাণে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া হয়েছে। এবং এই আয়কর এর পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্যই রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এছাড়াও আমাদের অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, আমাদের বাংলাদেশের অধিকাংশ টিন সার্টিফিকেট ধারী ব্যক্তিরা রিটার্ন জমা দিতে আগ্রহী নয়। আর এই অবস্থাকে পরিবর্তন করার জন্যই মূলত এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যেখানে বাধ্যতামূলক আয়কর রিটার্ন দাখিল করার কথা বলা হয়েছে। 

তো কি কারনে সঞ্চয়পত্র আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আশা করি, আপনি এই বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়ে গেছেন। 

৫ লক্ষ টাকার আলাদা আলাদা ২ টি সঞ্চয়পত্র ক্রয়

আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা আসলে একটি বিষয় সম্পর্কে জানতে চান। সেটি হল, একজন ব্যক্তি যদি আলাদা ভাবে দুইটি করে পাঁচ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে। তাহলে কি সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে কিনা।

আর আপনি যদি এই বিষয় টি সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আমি আপনাকে বলব যে, অবশ্যই এই পরিস্থিতি তে আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। কেননা আপনার ৫ লক্ষ টাকার আলাদা দুটি সঞ্চয়পত্রের মধ্যে শুধুমাত্র আপনার নাম উল্লেখ করা থাকবে। আর যেহেতু এখানে আপনার নাম উল্লেখ করা থাকবে। সেহেতু অবশ্যই আপনাকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।

জাল বা নকল নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিলের শাস্তি কি?

কোনো কারণে যদি আপনার Audit Statement of Account এর মধ্যে Chartered Accountant এর স্বাক্ষর জাল বা নকল হয়। তাহলে আপনার জেল সহো নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ জরিমানা হতে পারে। অথবা অনেক সময় আপনি উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার কমপক্ষে ০৩ মাস থেকে ০৩ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। আবার আপনার অর্থদন্ড হিসেবে প্রায় ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। 

আর উক্ত অর্থ আইন টি ২০১৫ এর আয়কর অধ্যাদেশের ধারা 165A এর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। আর এটি হলো নতুন একটি ধারা, যেটিকে পুনরায় 165AA এর মধ্যে সংযোজন করা হয়েছে। তাই আপনি কখনই আপনার জাল বা নকল নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিল করার চেস্টা করবেন না। 

আয়কর রিটার্ন জমার প্রয়োজনীয়তা কি?

আমরা অনেকেই জানতে চাই যে, আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কি। তো এটি আসলে খুব প্রয়োজন একটি বিষয়। কেননা যখন আপনি আয়কর রিটার্ন জমা দিবেন। 

তখন আপনার বার্ষিক আয় এবং বার্ষিক ব্যয় সহো সকল সম্পদের হিসেব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে জমা থাকবে। এবং আপনি যদি এই আয়কর রিটার্ন দাখিল না করেন। সেক্ষেত্রে উপ-কর কমিশনের কর্তৃক আপনার জরিমানা আরোপ করার সম্ভাবনা থাকবে। যেটি বাংলাদেশ কর আইন এর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। 

কোন সময়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়?

আয়কর সম্পর্কে অন্যান্য বিষয় গুলো জানার পাশাপাশি আমাদের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। সেটি হল, কোন সময় আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয় তা জেনে নেওয়াটা আমাদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

তো এই আয়কর রিটার্ন দেওয়ার সময় হল প্রতি বছর জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের 30 তারিখ পর্যন্ত। মূলত এই তিন মাসের মধ্যে আপনি আপনার আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। কিন্তু কোন কারণে যদি আপনি এই সময়ের মধ্যে আপনার আয়কর রিটার্ন জমা দিতে না পারেন। তাহলে চিন্তিত হওয়ার কোন দরকার নেই। 

বরং যখন আপনি উক্ত সময়ের মধ্যে আয়কর জমা দিতে পারবেন না। তখন আপনাকে উপ কর কমিশনার এর নিকট সময় বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। কিন্তু এই আবেদন করার সময় আপনি আসলে কি কারনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারেন নি, তা উল্লেখ করে দিতে হবে। 

আয়কর সনদ কাকে বলে?

আপনি যদি চলতি বছর প্রথম করদাতা ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। তাহলে অবশ্যই আপনাকে আয়কর সনদ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। 

কেননা এই আয়কর সনদ হল যখন আপনি আয়কর রিটার্ন জমা দিবেন। তখন আপনার আয়কর রিটার্ন এর যাবতীয় তথ্য গুলো যাচাই-বাছাই শেষে যখন মূল্যায়ন করা হবে। তখন উপ কর কমিশনার কর্তৃক আপনাকে এক ধরনের সনদ প্রদান করা হবে। মূলত এই সনদ কে বলা হয়ে থাকে, আয়কর সনদ। 

 

আয়কর রিটার্ন সম্পর্কে আমাদের শেষ কথা 

আমাদের এই ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। আর সেই ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে আজকে আমি আলোচনা করেছি আয়কর রিটার্ন সম্পর্কে। যেখানে ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

তো আশা করি, আজকের আলোচিত বিষয় গুলো সম্পর্কে আপনি পরিস্কার ধারনা নিতে পেরেছেন। আর আপনি যদি এই ধরনের অজানা বিষয় গুলো সহজ ভাষায় জানতে চান। তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করবেন। ধন্যবাদ, এতক্ষন ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top