আপনি যদি বাংলাদেশে বসবাস করে থাকেন, তাহলে আপনার অবশ্যই একটা বিষয় জানা থাকবে। সেটি হলো, আমাদের দেশে আগের দিন গুলোতে বাড়িতে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন করা হতো।
আর সে সময় আমরা তাদের যাবতীয় তথ্য গুলো দিয়ে নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে পারতাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এখন আর আমরা এই সুবিধা টি ভোগ করতে পারবো না।
কেননা, বাংলাদেশ সরকার এই সিন্ধান্ত পুরোপুরি ভাবে বাতিল করে দিয়েছে। আর এখন যদি কেই নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে চায়। তাহলে তাকে অবশ্যই অনলাইন এর মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধন করতে হবে।
- অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
- পুরাতন ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করার নিয়ম
- কিভাবে পুনরায় জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্র প্রিন্ট করবেন
কিন্তুু কেন এমন সিন্ধান্ত নেওয়া হলো, এবং বাড়িতে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন করলে কি কি সমস্যা হয়।
সে বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিত বলার জন্যই আজকের এই আর্টিকেল টি লেখা হয়েছে। তো আপনি যদি সে সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আজকের পুরো লেখাটি মন দিয়ে পড়ার চেস্টা করুন।
বাড়িতে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন আর থাকছে না
আপনি হয়তবা একটা বিষয় লক্ষ্য করেছেন। সেটি হলো, ২০১৯ সালের আগে থেকে যারা নতুন ভোটার নিবন্ধন করতো।
তখন নির্বাচন কমিশন এর কর্মরত ব্যক্তিরা বাড়িতে গিয়ে নতুন নতুন ভোটারদের নিবন্ধন করতো। কিন্তুু তারপর থেকে এই কার্যক্রম আর চলমান থাকেনি।
যদিওবা ভোটার নিবন্ধন আইন এর মধ্যে ষ্পষ্ট করে একটি আইন উল্লেখ আছে। যে আইনে বলা আছে যে, বাংলাদেশের যে সকল নাগরিক নতুন ভোটার হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে।
তাদের বাড়িতে গিয়ে যাবতীয় তথ্যের ভিত্তিতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তুু নানা দিক বিচার বিবেচনা করে ভবিষ্যৎ সময়ে আর এই কার্যক্রম চলমান না রাখার সিন্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।
তাছাড়া ২০২০ সালে গোটা বিশ্বজুড়ে ছিলো করোনা ভাইরাসের মহামারি। সেই সময় ঘর থেকে বের হওয়াতেও ছিলো নানা ধরনের বিধিনিষেধ।
তবে সেই করোনা মহামারীর প্রকোপ কমে গেলেও। এখন পর্যন্ত বাড়িতে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করার বিষয়ে তেমন কোনা উদ্যেগ চোখে পড়েনি।
তাছাড়া এখন একজন ব্যক্তি চাইলে অনলাইন এর মাধ্যমে খুব সহজেই নিজের ঘরে বসে ভোটার নিবন্ধন করার সুযোগ পাচ্ছে।
হয়ত এই কারণ গুলোর জন্যই বাড়িতে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন এর কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কিছু অসুবিধা
দেখুন আগের দিন গুলোতে বাড়িতে গিয়ে ভোটার তথ্য হালনাগাদ করা হলেও। এই পদ্ধতির মধ্যে নানা ধরনের অসুবিধা রয়েছে।
আর নতুন ভোটাররা যেন এই অসুবিধার মধ্যে না পড়ে। এবং তারা যেন নিজের মতো করে তাদের ভোটার নিবন্ধন করতে পারে। সে কারণে এখন অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তবে আগের দিনে বাড়িতে ভোটার নিবন্ধন এর কারণে যে সকল অসুবিধা হয়েছিলো। সেগুলো নিচে ধাপে ধাপে দেখিয়ে দেওয়া হলো। যেমন,
- সময় এর অভিযোগঃ দেখুন, যখন বাড়িতে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন করা হতো। তখন সেই ভোটার নিবন্ধন করার নির্দিষ্ট কোনো সময় নির্ধারিত ছিলো না।
- যার কারণে, এই নতুন ভোটারদের যে তালিকা করা হতো। সেটা তারা তাদের সুবিধাজনক সময়ে করতো। যার ফলে এই ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম এর সময় নিয়ে উঠেছে নানা ধরনের অভিযোগ।
- ভুতুরে ভোটারঃ যেহুতু ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নির্বাচন অফিসের কর্মরত কর্মকর্তার উপর নির্ভর করতো।
- সেহুতু এমন অনেক কর্মকর্তা তাদের টার্গেট পূরণ করার লক্ষ্য ভুয়া ভোটার নিবন্ধন করতো। যাকে বলা হয়, ভুতুরে ভোটার। এর ফলে নির্দিষ্ট ভোটারযোগ্য ব্যক্তিরা এই তালিকা থেকে বঞ্চিত থাকতো।
- তথ্য হালনাগাদ করতে সমস্যাঃ নির্বাচন কমিশন কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভোটারদের তথ্য হালনাগাদ করার প্রয়োজন হয়।
- কিন্তুু এভাবে বাড়িতে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন করার কারণে এই কাজটি করা খুব কঠিন হয়ে পড়ছিলো। এবং প্রত্যেকটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য হালনাগাদ করার ব্যাপারটি ছিলো অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
- জাতীয় পরিচয় পত্রে তথ্যর ভুলঃ এটি ছিলো স্বাভাবিক একটা সমস্যা, যা অনেকের সাথে হয়েছে। কেননা, বাড়িতে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন করার সময় আমরা সবকিছু ঠিকমতো প্রদান করলেও।
- সেই কর্মকর্তার গাফিলাতির কারণে আমাদের ভোটার আইডিতে নানা ধরনের ভুল তথ্য আসতো।
- যেমন, কারো নামে ভুল, কারো পিতার মাতার নাম ভুল, বয়স ভুল ইত্যাদি। যার কারণে ভোটার হওয়া ব্যক্তিদের অনেক ঝামেলার মধ্যে পড়তে হতো।
তো যখন বাড়িতে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন করা হতো। তখন যে সকল অসুবিধা লক্ষ্য করা যেতো। সেই সব অসুবিধা গুলোর তালিকা উপরে উল্লেখ করা হলো।
আর হয়তবা এই সকল অসুবিধার কারণে এখন আর বাড়িতে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া চলমান না রাখার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন
যেহুতু গোটা বিশ্ব এখন অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়েছে। সেহুতু আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এখন আর বাড়িতে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয়না।
কারণ, এখন একজন নতুন ভোটার চাইলে নিজের ঘরে বসে অনলাইনে তার ভোটার নিবন্ধন করতে পারছে।
আর সে কারণে এখন ভোটার নিবন্ধন এর সময় নিয়ে ততোটা ভাবতে হয়না। কারণ, একটি বাড়িতে গিয়ে তাদের ভোটার নিবন্ধন করতে অনেক সময় এর প্রয়োজন হতো।
কিন্তুু এখন অনলাইন ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কারণে এই বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয়না।
তাছাড়া যেহুতু এই পদ্ধতির মাধ্যমে ভোটার নিজে থেকে তার যাবতীয় তথ্য গুলো প্রদান করে। সেহুতু এই প্রক্রিয়াতে একজন ভোটারের ভুল তথ্য দেওয়ার সম্ভাবনা কয়েক গুন কমে গেছে।
আর উক্ত প্রক্রিয়া এর ফলে ভোটার নিবন্ধন করতে যে বাড়তি খরচ করার প্রয়োজন হতো। সেই খরচ করার এখন আর কোনো ধরনের দরকার হবেনা।
অনলাইনে ভোটার নিবন্ধনের সুবিধাসমূহ
যদি বাড়িতে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন না করে অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন করা হয়। তাহলে সবদিক থেকে বেশ কিছু সুবিধা লক্ষ্য করা যাবে।
আর অনলাইনে নতুন ভোটার নিবন্ধন করার ফলে আপনি যে সকল সুবিধা লক্ষ্য করতে পারবেন। সেই সুবিধা গুলোর তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলো। যেমন,
- সময় এর অপচয় রোধঃ এটা তো খুব সহজেই বোঝা যায় যে, একজন ব্যক্তি যদি বাড়িতে গিয়ে নতুন ভোটারদের নিবন্ধন করে।
- তাহলে একজন মানুষের পক্ষে সেই কাজ টি করতে অনেক বেশি সময় এর প্রয়োজন হবে। কিন্তুু এই নিবন্ধন এর কাজটি যদি প্রতিটা মানুষ অনলাইন থেকে করতে পারে। তাহলে সেই বাড়তি সময় ব্যয় করার প্রয়োজন পড়বে না।
- ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকেঃ এই অনলাইন পদ্ধতিতে নিবন্ধন করার সুবিধা পরে। এখন আর ভোটার তথ্য এর মধ্যে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
- কারণ, এই পদ্ধতি তে যে তথ্য গুলো দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেগুলো একজন ভোটার যথেষ্ট যাচাই করে দিতে পারে।
- বায়োমেট্রিক পদ্ধতিঃ এখন একজন ভোটার চাইলে তার ভোটার নিবন্ধন করে বায়োমেট্রিক তথ্য দেওয়ার পর। সে তাৎক্ষনিক ভাবে তার জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড করে নিতে পারে।
- আর এই বিশেষ সুবিধা টি পাওয়া গেছে অনলাইন ভোটার নিবন্ধন শুরু হওয়ার পর থেকে।
তো বর্তমান সময়ে অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন করার পর যে সকল সুবিধা পাওয়া গেছে। সেই সুবিধা গুলোর তালিকা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
আশা করি, এই সুবিধা গুলো সম্পর্কে আপনি পরিস্কার ধারনা পেয়ে গেছেন।
আমাদের শেষকথা
প্রিয় পাঠক, বর্তমান সময়ে অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন করার কারণে যে সকল সুবিধা পাওয়া যায়। এবং বাড়িতে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন করাতে কি কি অসুবিধা হয়েছিলো।
সেগুলোই আজকের আর্টিকেলে উল্লেখ করা হয়েছে। তো আপনি যদি ভোটার সংক্রান্ত এই ধরনের অজানা বিষয় গুলো সবার আগে পেতে চান।
তাহলে আমাদের সাথে থাকার চেস্টা করবেন। আর ধন্যবাদ, এতক্ষন ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।