আমরা সকলেই একটা বিষয় বেশ ভালো করেই জানি। সেটি হলো, একজন ব্যক্তি যখন আন্তর্জাতিক ভ্রমন এর কথা ভাববে।
তখন সেই ব্যক্তির যাবতীয় পরিচয় ও জাতীয়তার বাহক হিসেবে পাসপোর্ট এর প্রয়োজন হয়। কেননা একটি পাসপোর্ট এর মধ্যে একজন ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ ইত্যাদি সব কিছু উল্লেখ করা থাকে।
তাই পাসপোর্ট কে এক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র হিসেবে ধরা হয়। আর সে কারণে যখন আপনি আপনার দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা করবেন।
তখন আপনাকে অবশ্যই আপনার দেশের নির্দিষ্ট আইন মেনে আপনার পাসপোর্ট ইস্যু করার প্রয়োজন হবে। যার মাধ্যমে আপনি আপনার প্রয়োজনে এক দেশ থেকে অন্য আরেকটি দেশে ভ্রমন করতে পারবেন।
পৃথিবীতে কিভাবে পাসপোর্ট এর ধারনা এসেছিলো?
আমরা পাসপোর্ট সম্পর্কে অনেক কিছু জানলেও। এই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কিভাবে পাসপোর্ট এর ধারনা এসেছিলো। তার সঠিক ইতিহাস অনেকেই জানিনা।
আর আপনিও যদি পাসপোর্ট এর ইতিহাস সম্পর্কে না জানেন। তাহলে জেনে নিন, পাসপোর্ট আবিস্কার এর সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে।
আপনি আরোও দেখতে পারেন…
- পাসপোর্ট সংশোধনের অঙ্গীকারনামা পূরণ করার নিয়ম
- ই পাসপোর্ট আবেদনের পূর্ব প্রস্তুতি | E Passport korte ki ki lage
- বাচ্চাদের ই পাসপোর্ট করার নিয়ম
দেখুন, যদি আপনি পাসপোর্ট এর সবচেয়ে পুরাতন ইতিহাস ঘেটে দেখেন। তাহলে লক্ষ্য করতে পারবেন যে, প্রায় ৪৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই পাসপোর্ট এর প্রথম ধারনা পাওয়া গেছিলো।
কেননা, সেই সময় তো রাজা বাদশার আমল ছিলো। আর তখন যদি কোন রাজ্য থেকে একজন রাজা অন্য একটি রাজ্যের মধ্যে ভ্রমন করতে যেত।
তখন সেই রাজ্যর রাজাকে আগে থেকেই চিঠির মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া হতো। যে, রাজা যদি তার রাজ্য ভ্রমন করতে যায়।
তাহলে যেন সেই রাজার কোন ধরনের সমস্যা না হয়। আর এখান থেকেই কিন্তুু পাসপোর্ট এর প্রথম ধারনা তৈরি হয়েছিলো।
এছাড়াও আপনি যদি চানক্য এর শাস্ত্র এর দিকে লক্ষ্য করেন। তাহলে আপনি সেই শাস্ত্র এর ৩৪ নম্বর অধ্যায় এর মধ্যে দেখতে পারবেন।
সেখানে ষ্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছে যে, কোন একটি রাজ্যের মধ্যে অন্য কোন ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে প্রবশে করতে পারবে না।
বাংলাদেশে পাসপোর্ট ব্যবহার এর ইতিহাস
আমরা এতক্ষন ধরে পাসপোর্ট এর পুরাতন ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারলাম। তো এবার আমাদের জানতে হবে যে, আমাদের বাংলাদেশের মধ্যে কিভাবে পাসপোর্ট এর ব্যবহার শুরু হয়েছিলো।
তো আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে সর্বপ্রথম পাসপোর্ট ব্যবহার করা শুরু হয়, ১৯৭৩ সালের শুরুর দিকে।
মূলত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর যখন আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করতে পেরেছিলো। তারপর আমাদের বাংলাদেশ এর রাষ্ট্রপতির নির্দেশে ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখ থেকে পাসপোর্ট ব্যবহার করা শুরু হয়।
এবং সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে পাসপোর্ট ব্যবহার করা চলমান রয়েছে। এবং প্রযুুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশে এখন ই পাসপোর্ট ব্যবহার করা হচ্ছে।
আর আমাদের বাংলাদেশে পাসপোর্ট ব্যবহার এর পূর্বের ইতিহাস থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মোট ৩ ধরনের পাসপোর্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
চলুন, এবার তাহলে সেই ৩ প্রকারের পাসপোর্ট গুলো সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
হাতে লেখা পাসপোর্ট বাংলাদেশ
দেখুন, সবার প্রথমে আমাদের দেশে যে পাসপোর্ট গুলো ব্যবহার করা হতো। সেগুলো মূলত হাতে লেখা পাসপোর্ট ছিলো।
অর্থ্যাৎ, কোন একটি পাসপোর্ট এর মধ্যে যতোগুলো প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করা হতো। তার সবকিছুই সেই সময়ে হাতে লিখে দেওয়া হতো।
আর আপনি জানলে অবাক হয়ে যাবেন। কারণ, এই ধরনের হাতে লেখা পাসপোর্ট এর মধ্যে যখন পাসপোর্টধারী ব্যক্তির ছবি যুক্ত করা হতো।
তখন সেই ছবি গুলো পাসপোর্ট এর মধ্যে স্বচ্ছ টেপ দিয়ে আটকিয়ে দেওয়া হতো। আর সেই সময়ে এই ধরনের পাসপোর্ট কে বৈধ বলা হতো।
এমআরপি পাসপোর্ট বাংলাদেশ
শুরুর দিকে হাতে লেখা পাসপোর্ট ব্যবহার করা হলেও। তার পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশে মেশিন রিডায়েবল পাসপোর্ট ব্যবহার করা শুরু হয়েছিলো।
যে পাসপোর্ট এর যাবতীয় তথ্য গুলো মেশিনের মাধ্যমে রিড করা সম্ভব হয়েছিলো। তবে ২০১০ সালেই এই ধরনের এমআরপি পাসপোর্ট ব্যবহার করা হলেও। হাতে লেখা পাসপোর্ট এর প্রচলন ছিলো, ২০১৫ সাল পর্যন্ত।
কিন্তুু এই ধরনের এমআরপি পাসপোর্ট গুলো পরবর্তী সময়ে আর বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেনি।
কারন, আমাদের দেশের মধ্যে এমআরপি পাসপোর্ট এর ব্যবহার শুরু হওয়ার কয়েকবছর পরেই ই পাসপোর্ট এর ব্যবহার শুরু হয়েছিলো।
ই পাসপোর্ট বাংলাদেশ
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে যে পাসপোর্ট এর ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। সেই পাসপোর্ট গুলো কে বলা হয়, ই পাসপোর্ট।
মূলত এই ধরনের পাসপোর্ট এর মধ্যে ছোট চিপযু্ক্ত মাইক্রোপ্রসেসর লাগানো থাকে। যার কারণে, এই পাসপোর্ট গুলোতে একজন ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য গুলো খুব সহজেই শনাক্ত করা যায়।
কেননা, আমরা যেমন আমাদের মেমোরি কার্ড এর মধ্যে বিভিন্ন ফাইল জমা করে রেখে দেই। ঠিক সেভাবে ই পাসপোর্ট এর মধ্যে একজন ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য গুলো জমা হয়ে থাকে।
আর পরবর্তী সময়ে সেই জমা থাকা তথ্য গুলোর মাধ্যমে। কোন একজন ব্যক্তি একদেশ থেকে অন্য আরেকটি দেশে ভ্রমন করতে পারবে।
বাংলাদেশে কত ধরনের পাসপোর্ট ব্যবহার করা হয়?
আমরা সকলেই একটা বিষয় বেশ ভালো করেই জানি। সেটি হলো, আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে এখন ই পাসপোর্ট ব্যবহার করা হয়।
কিন্তুু আপনি কি জানেন যে, আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে মোট কত গুলো রঙ্গ এর পাসপোর্ট ব্যবহার করা হয়? –
হয়তবা আমাদের মধ্যে অনেকেই এই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না। তাই চলুন এবার সে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
পাসপোর্ট কত ধরনের হয়?
সবার আগে আমাদের জানতে হবে যে, পাসপোর্ট কত ধরনের হয়। কেননা, বর্তমান সময়ে আমরা মোট ০৩ ধরনের পাসপোর্ট দেখতে পারববো।
তবে এই সবগুলোই কিন্তুু ই পাসপোর্ট হিসেবে পরিচিত হলেও। উক্ত পাসপোর্ট এর রঙ্গের দিক থেকে অনেক ভিন্নতা লক্ষ্য করতে পারবেন।
আর এবার আমি আপনাকে ধাপে ধাপে সেই সব রঙ্গের পাসপোর্ট সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা দিবো।
লাল পাসপোর্ট কাদের জন্য?
দেখুন, অনেক সময় আমরা লাল কালারের পাসপোর্ট দেখতে পাই। কিন্তুু আপনি কি জানেন, এই ধরনের লাল পাসপোর্ট কাদের জন্য প্রদান করা হয়?
– আর যদি আপনি সে বিষয়ে না জেনে থাকেন। তাহলে শুনে নিন, যে কাদের জন্য লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করা হয়।
এই ধরনের লাল পাসপোর্ট সাধারনত অনেক উচ্চতর কর্মকর্তাদের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
যেমন, আমাদের দেশের মধ্যে যে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভায় কর্মরত ব্যক্তি, প্রধানমন্ত্রী বা তাদের পুত্র সন্তানদের জন্য এই ধরনের লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আপনার জন্য আরোও লেখা…
- ই পাসপোর্ট কি | ই পাসপোর্টের সুবিধা কি
- ই পাসপোর্ট কত দিনে পাওয়া যায় | e passport কতদিন পর পাওয়া যায়
- ই পাসপোর্ট অনলাইন চেক । ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম
তবে সাধারন জনগন এর জন্য এই ধরনের লাল কালারের পাসপোর্ট ব্যবহার করা হয়না। আশা করি, লাল পাসপোর্ট কাদের জন্য ব্যবহার করা হয়।
আপনি সে বিয়য়ে একবারে সঠিক ধারনা পেয়ে গেছেন। কিন্তুু আপনি কি জানেন, এই ধরনের লাল পাসপোর্ট এর বিশেষ কিছু সুবিধা আছে?
হুমম, যারা মূলত এই ধরনের লাল কালারের পাসপোর্ট ব্যবহার করে। তাদের জন্য অন্য কোন দেশে ভ্রমন করার সময় কোন ধরনের ভিসার প্রয়োজন হয়না।
কারন, তারা যখন তাদের প্রয়োজনে অন্য কোন দেশে ভ্রমন করেন। তখন তারা অন অ্যারাইভাল ভিসা সংগ্রহ করতে পারেন।
নীল পাসপোর্ট কাদের জন্য?
এবার আসা যাক নীল পাসপোর্ট এর প্রসঙ্গে। মূলত আপনার কাছে যদি নীল কালারের পাসপোর্ট থাকে।
তাহলে আপনি সেই পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের প্রায় ৩০ টির বেশি দেশে কোন প্রকার ভিসা ছাড়াই ভ্রমন করতে পারবেন।
তবে এই ধরনের নীল কালারের পাসপোর্ট গুলো শুধুমাত্র তাদেরকে প্রদান করা হয়। যারা বর্তমান সময়ে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।
তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা উচিত। আর সে কথাটি হলো, এই ধরনের নীল কালারের পাসপোর্ট দিয়ে আপনি শুধুমাত্র সরকারি কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।
কিন্তু আপনার ব্যক্তিগত কাজের জন্য এই ধরনের নীল কালারের পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন না।
সবুজ পাসপোর্ট কাদের জন্য?
এই পৃথিবীর একমাত্র দেশ ইসরাইল ছাড়া এই ধরনের নীল পাসপোর্ট গুলো সব দেশেই বৈধ হিসেবে গন্য করা হয়ে থাকে।
আর এই ধরনের সবুজ কালার এর পাসপোর্ট গুলো সব ধরনের মানুষের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আপনি আরোও জানতে পারবেন…
- বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে ভিসা ছাড়া যাওয়া যায়
- পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ওমানের ভিসা চেক করার নিয়ম
- জন্ম নিবন্ধন প্রতিলিপির জন্য আবেদন করার নিয়ম
অর্থ্যাৎ, আমাদের মতো সাধারন মানুষ যখন পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করবে। তখন আমাদের এই ধরনের সবুজ কালারের পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।
পাসপোর্ট নিয়ে আমাদের শেষকথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা পাসপোর্ট সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জানতে পেরেছি। তো আশা করি, আজকের আলোচনা গুলো আপনি খুব সহজে বুঝতে পেরেছেন।
তবে এরপরও যদি আপনার মনে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে। তাহলে অবশ্যই তা কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।
আর পাসপোর্ট কিংবা ভিসা সম্পর্কে যদি আরো কোন অজানা তথ্য জানতে চান। তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করবেন। ধন্যবাদ এতক্ষন ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।