জন্ম নিবন্ধন সনদ হারিয়ে গেলে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েন, তবে বর্তমান ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে এটি খুব সহজেই পুনরায় পাওয়া সম্ভব।
যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ হারিয়ে যায়, তবে ঘরে বসেই অনলাইনে এটি পুনরুদ্ধার করা যায়। প্রথমে, আপনি জন্ম নিবন্ধন নাম্বার বের করার উপায় জানতে পারেন, যা আপনাকে আপনার হারানো জন্ম সনদ পুনরায় সংগ্রহ করতে সাহায্য করবে।
যদি জন্ম নিবন্ধন নম্বর ভুলে যান, তখনও বাংলাদেশ জন্ম নিবন্ধন ওয়েবসাইট ব্যবহার করে আপনি আপনার তথ্য পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। জন্ম নিবন্ধন সকারকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি দ্রুত আপনার নাম্বার পুনরুদ্ধার করে হারানো সনদ পুনরায় পেতে পারেন।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন পুনর্মুদ্রণ আবেদন করা যায়, যা আপনার হারানো সনদের আরেকটি একটি নতুন কপি প্রদান করবে। আর এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অনলাইন হওয়ায়, এটি খুব সহজ এবং দ্রুত সমাধান প্রদান করা সম্ভব।
সেই সাথে, আপনি সহজেই হারিয়ে যাওয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ ডাউনলোড করতে পারবেন এবং জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউনলোড করে আপনার প্রয়োজনীয় সনদ সংরক্ষণ করতে পারবেন।
যারা ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন কপি চান, তারা জন্ম নিবন্ধন বাংলা ফরমেট pdf আকারে ডাউনলোড করে রাখতে পারবেন, যা ভবিষ্যতে যে কোন সময় প্রিন্ট করতে পারবেন।
এই প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই হারানো জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনরায় পেতে এবং অনলাইনে সকল সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
আমি এই আর্টিকেলে আপনাকে ধাপে ধাপে সহজ করে বুঝিয়ে দেবো জন্ম নিবন্ধন হারিয়ে গেলে কিভাবে পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, কিভাবে আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন হারিয়ে গেলে করণীয় কি
জন্ম নিবন্ধন সনদ হারিয়ে গেলে প্রথমে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। বর্তমান ডিজিটাল সেবার উন্নতির কারণে খুব সহজে হারানো সনদ পুনরুদ্ধার করা যায়।
প্রথম ধাপে, আপনাকে বাংলাদেশ জন্ম নিবন্ধন ওয়েবসাইট (https://everify.bdris.gov.bd) এ গিয়ে লগইন করতে হবে অথবা নতুন করে একাউন্ট তৈরি করতে হবে যদি আপনার একাউন্ট না থাকে।
সেখানে আপনি আপনার নাম, জন্ম তারিখ, পিতা-মাতার নাম, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করতে পারবেন।
যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর (ID) ভুলে যান বা হারিয়ে ফেলেন, তাহলে অনলাইনে বা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আপনার হারানো নম্বর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। যদি সনদ পুনর্মুদ্রণ করতে চান, তাহলে জন্ম নিবন্ধন পুনর্মুদ্রণ আবেদন জমা দিতে হবে
অন্যদিকে, যদি আপনার নিকটবর্তী ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভায় যেতে চান, তাহলে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা অন্যান্য পরিচয় প্রমাণপত্র সঙ্গে নিয়ে গিয়ে নতুন কপি সংগ্রহ করতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় কিছু ফি প্রযোজ্য হতে পারে।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউনলোড করাও সম্ভব, যা আপনি ভবিষ্যতে সংরক্ষণ করতে পারবেন। এতে করে আপনার সনদ হারিয়ে গেলে আবার নতুন কপি পেতে সহজ হবে।
জন্ম নিবন্ধন নম্বর না জানা থাকলে করণীয়
হারানো জন্ম নিবন্ধন নম্বর জানা না থাকলে যা করতে হবে। তা হচ্ছেযদি আপনার জন্ম নিবন্ধনের ১৭ ডিজিটের নম্বর মনে না থাকে এবং কোনো ফটোকপি না থাকে, তবে অনলাইনে কপি ডাউনলোড বা যাচাই করা সম্ভব নয়।
এ অবস্থায় আপনাকে সেই নিবন্ধন কার্যালয়ে যেতে হবে, যেখানে আপনার জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। সেখানকার রেকর্ড থেকে আপনার নাম, পিতার নাম এবং এলাকার তথ্য ব্যবহার করে জন্ম নিবন্ধন নম্বর খুঁজে বের করা হবে।
৩টি উপায়ে জন্ম নিবন্ধন নম্বর বের করা যায়;
১. জন্ম নিবন্ধন কার্যালয় থেকে পাবেন
আপনি যে জন্ম নিবন্ধন কার্যালয় থেকে নিবন্ধন করেছেন, সেখানে সরাসরি যোগাযোগ করুন। আপনার নাম, জন্ম তারিখ, এবং পিতামাতার নামের মতো প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে, কার্যালয়ের ডাটাবেজ থেকে আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
২. অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড থেকে পাবেন
আপনার ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করে জন্ম নিবন্ধন নম্বর পাওয়া সম্ভব। এ জন্য আপনাকে প্রথমে NID Account তৈরি করতে হবে এবং লগইন করতে হবে।
এনআইডি একাউন্টের মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর দেখতে পারবেন। এনআইডি একাউন্ট কিভাবে রেজিস্টার করবেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত দেখতে পারেন।
৩. পাসপোর্ট থেকে পাবেন
যদি আপনার পাসপোর্ট থাকে, তা থেকেও জন্ম নিবন্ধন নম্বর পাওয়া যেতে পারে। পাসপোর্ট সাধারণত জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়, এবং এতে Birth Certificate Number হিসেবে আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ থাকতে পারে।
এই পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
যখন আপনার জন্ম নিবন্ধন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাবে, তখন ফি পরিশোধের মাধ্যমে নতুন করে জন্ম নিবন্ধন সনদের পুনঃমুদ্রণ কপি সংগ্রহ করতে পারবেন। আলাদা করে আবেদন করতে হবে না, অফিস থেকেই তারা আপনাকে সনদ সরবরাহ করবে।
এই প্রক্রিয়ায়, হারিয়ে যাওয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনরুদ্ধার করা সহজ এবং দ্রুত হয়। আশা করি হারিয়ে যাওয়া জন্ম নিবন্ধন নাম্বার জানার উপায় সম্পর্কে আপনি জেনে গিয়েছেন।
জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন যাচাই কপি ব্যবহার করুন
জন্ম নিবন্ধন হারিয়ে গেলে আপনি অনলাইন যাচাই কপি ব্যবহার করতে পারেন। বর্তমান ডিজিটাল যুগে কাগজের সনদের পরিবর্তে তথ্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই যেকোনো ক্ষেত্রে কেবল আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে সনদের কপি জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তবে হাতে প্রতিলিপি না পাওয়া পর্যন্ত জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন যাচাই কপি ব্যবহার করতে পারবেন। এই কপি অনলাইনে যাচাই করে প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা যায়।
হারিয়ে যাওয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ ডাউনলোড করার নিয়ম
যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ হারিয়ে যায়, প্রথমে https://bdris.gov.bd/br/reprint/add লিঙ্কে যান। এখানে আপনার ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন নম্বর এবং জন্ম তারিখ প্রদান করুন। এরপর ক্যাপচা কোড পূরণ করে “অনুসন্ধান বাটনে” ক্লিক করুন এবং সনদের পুনঃমুদ্রণের জন্য আবেদন করুন।
যদি আপনি পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাসিন্দা হন, তবে স্থানীয় অফিসে গিয়ে সনদের পুনঃমুদ্রণ আবেদন করুন। বিদেশে বসবাস করলে, সংশ্লিষ্ট কনস্যুলেট বা এম্বাসীতে যোগাযোগ করে সনদের পুনরুদ্ধার করতে হবে।
এক্ষেত্রে আপনার দুইটি প্রধান করণীয় আছে:
- ১. জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনঃমুদ্রণের আবেদন করতে হবে।
- ২. আবেদন জমা দিয়ে নতুন সনদ সংগ্রহ করতে হবে।
নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কিভাবে জন্ম নিবন্ধন সনদের পুনঃমুদ্রণ আবেদন করবেন এবং নতুন সনদ সংগ্রহ করবেন।
#১. জন্ম নিবন্ধন পুনঃমুদ্রণের আবেদন
জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনঃমুদ্রণ করার জন্য প্রথমে এই লিঙ্কে যান: https://bdris.gov.bd/br/reprint/add। এখানে আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর এবং জন্ম তারিখ প্রদান করে সার্চ করুন। নিবন্ধন এন্ট্রিটি খুঁজে পাওয়ার পর, সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন কার্যালয় নির্বাচন করুন এবং আবেদনকারীর তথ্য পূরণ করে আবেদন সাবমিট করুন।
নিচে আবেদনের বিস্তারিত ধাপগুলো দেখানো হয়েছে।
স্টেপ ১: নিবন্ধন এন্ট্রি খুঁজে বের করুন
উপরের লিঙ্কে গিয়ে আপনি একটি ফর্ম দেখতে পাবেন। এখানে আপনার ১৭ ডিজিটের Birth Registration Number ইংরেজিতে লিখতে হবে এবং জন্ম তারিখ (DD-MM-YYYY) এই ফরম্যাটে লিখবেন।
ক্যাপচা কোডটি সঠিকভাবে নিচের বক্সে টাইপ করেন এবং তারপর “অনুসন্ধান” বাটনে ক্লিক করুন।
স্টেপ ২: জন্ম নিবন্ধন এন্ট্রি নির্বাচন করুন
অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করার পর, আপনি একটি তালিকা দেখাবে যেখানে আপনার নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখ, এবং আইডি নম্বর থাকবে। আপনার সঠিক তথ্য সিলেক্ট করে “নির্বাচন করুন” বাটনে ক্লিক করুন।
স্টেপ্ট ৩: নিবন্ধন কার্যালয় বাছাই করুন
এরপর, আপনাকে সেই নিবন্ধন অফিস নির্বাচন করতে হবে, যেখান থেকে আপনি জন্ম নিবন্ধন করিয়েছিলেন। এর জন্য প্রথমে বিভাগ, তারপর জেলা, এবং শেষে উপজেলা সিলেক্ট করে অফিসটি সঠিকভাবে বাছাই করুন।
স্টেপ ৪: আবেদনকারীর নাম ও মোবাইল নম্বর দিন
সবশেষে, আবেদনকারী ব্যক্তির তথ্য প্রদান করতে হবে। যদি আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হন, তাহলে নিজের তথ্য সিলেক্ট করে আপনার মোবাইল নম্বর দিন।
তবে, পিতা, মাতা, অভিভাবক, বা অন্য কোনো আত্মীয়ও এই আবেদন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে যিনি আবেদন করছেন, তার নাম এবং মোবাইল নম্বর দিয়ে সঠিক অপশনটি সিলেক্ট করুন।
স্টেপ ৫: মোবাইল নাম্বারে OTP ভেরিফিকেশন করুন
আবেদনকারী মোবাইল নম্বরে একটি OTP (One Time Password) পাঠানো হবে। আপনাকে ৫ মিনিটের মধ্যে এই OTP ব্যবহার করে আবেদনটি ভেরিফিকেশন যাচাই করতে হবে।
যাচাই করার পর, ডানপাশে থাকা সাবমিট বাটনে ক্লিক করে আবেদন জমা করুন।
স্টেপ ৬: আবেদনপত্র প্রিন্ট বা সংরক্ষণ করুন
আবেদন সাবমিট করার পর, আপনার সামনে আবেদনের একটি আইডি নম্বর এবং কাগজপত্র জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা প্রদর্শিত হবে। এই তথ্যগুলো অবশ্যই নোট করে রাখুন এবং উল্লেখিত সময়ের মধ্যেই আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
এরপর, আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করতে প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করুন। যদি প্রিন্টার না থাকে, তাহলে Save as PDF অপশনটি ব্যবহার করে ফাইলটি আপনার ডিভাইসে সংরক্ষণ করুন।
#২. জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করা
জন্ম নিবন্ধনের প্রিন্ট কপি পেতে আপনাকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, বা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরের কার্যালয়ে যেতে হবে। সেখানে আপনার আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি জমা দিন।
সাধারণত, সংশ্লিষ্ট অফিসাররা সম্ভব হলে সঙ্গে সঙ্গেই বা ২-১ দিনের মধ্যে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রিন্ট করে নিবন্ধকের স্বাক্ষর ও সীল সহ প্রস্তুত করবেন। এরপর, আপনি সেই সনদ সংগ্রহ করতে পারবেন।
হারানো জন্ম নিবন্ধন ডাউনলোড নিয়ে আমাদের শেষ কথা
জন্ম নিবন্ধন হারিয়ে গেলে প্রক্রিয়া একটু সময়সাপেক্ষ হলেও সহজ। সঠিক ধাপগুলি অনুসরণ করে এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিয়ে আপনি দ্রুত আপনার হারানো সনদ পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
অনলাইনে আবেদন থেকে শুরু করে স্থানীয় অফিসে গিয়ে প্রিন্ট কপি সংগ্রহ পর্যন্ত, প্রতিটি ধাপে সঠিকভাবে কার্যক্রম সম্পন্ন করলে আপনার সমস্যা সমাধান হবে।
মনে রাখবেন, যে কোনো জটিলতা এড়াতে আগে থেকেই সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ এবং যাচাই করে নিন।