বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য ভোটার আইডি কার্ড গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্টস। আর সে কারণে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের বয়স যখন ১৮ বছর পূর্ণ হয়। ঠিক তখনই তাকে ভোটার আইডি কার্ড প্রদান করা হয়। কিন্তু এই ভোটার আইডি কার্ড পাওয়ার পর যদি কার্ড এর মধ্যে কোন তথ্য ভুল থাকে। তাহলে আমাদের এই ভুল থাকার তথ্য গুলো সংশোধন করে নেওয়ার দরকার হয়।
আর যখন আপনারও ভোটার আইডি কার্ডের মধ্যে কোন ধরনের তথ্য ভুল থাকবে। এবং আপনি যখন সেই তথ্য গুলো সংশোধন করতে যাবেন। তখন আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে। মূলত এই ফি এর পরিমাণ কত সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। আর সে জন্যই অনেকে গুগলের মধ্যে সার্চ করি যে, ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে।
তো বিভিন্ন ভোটার আইডি কার্ড এর বিভিন্ন তথ্য সংশোধন করার ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ টাকার প্রয়োজন হয়। আর কোন ধরনের তথ্য গুলো সংশোধন করার জন্য কত টাকা দিতে হয়। সেই তালিকা টি নিয়েই আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব। তো চলুন সরাসরি মূল আলোচনাতে ফিরে যাওয়া যাক।
জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল থাকলে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি কত টাকা?
আমি আলোচনা শুরুতেই আপনাদের একটা কথা বলেছি। আর সেই কথাটি হল বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন তথ্য সংশোধন করার প্রয়োজন হয়। আর এই তথ্যের ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে কত টাকা খরচ করতে হবে তা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সে কারণে নিচে আমি একটি তালিকা প্রদান করলাম। যেখান থেকে আপনি বুঝতে পারবেন যে, কোন ধরনের সংশোধনী কাজের জন্য কত টাকা ফি দিতে হয়। যেমন,
- আপনি যদি জাতীয় পরিচয় পত্রের সাধারন তথ্য সংশোধন করতে চান। তাহলে আপনাকে ২৩০ টাকা দিতে হবে।
- কিন্তু আপনি যদি অন্যান্য তথ্য ও সংশোধন করতে চান। সে ক্ষেত্রে আপনাকে ১১৫ টাকা ফি দিতে হবে।
- তবে আপনি যদি উভয় তথ্য সংশোধন করতে চান। তাহলে আপনার মোট ফি এর পরিমাণ হবে ৩৪৫ টাকা।
- ভোটার আইডি কার্ড রি ইস্যু করার জন্য মোট ৩৪৫ টাকা ফি দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে।
- জরুরী ভিত্তিতে ভোটার আইডি কার্ড রি ইস্যু করার জন্য আপনার মোট খরচের পরিমাণ হবে ৫৭৫ টাকা।
আপনি যদি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংশোধন করতে চান। তাহলে আপনার আসলে কত টাকা ফি প্রদান করতে হবে। সেই ফি এর পরিমাণ গুলো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য সংশোধন বলতে কী বোঝায়?
উপরের আলোচনাতেই আমি আপনাদের বলেছি যে, আপনি যখন আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্য সংশোধন করবেন। তখন আপনার মোট ২৩০ টাকা খরচ করতে হবে। তো এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এই জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য সংশোধন বলতে কি বুঝায়।
আর আপনার মনে যদি এই ধরনের প্রশ্ন জেগে থাকে। তাহলে আমি আপনাদের বলব যে এমন অনেক বিষয় রয়েছে। যে বিষয় গুলো কে জাতীয় পরিচয় পত্র এর তথ্য সংশোধন হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। যেমন,
- আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের মধ্যে থাকা নাম বাংলা অথবা ইংরেজি,
- আপনার পিতা ও মাতার নাম,
- কিংবা আপনার জন্ম তারিখ এর তথ্য সংশোধন,
- জাতীয় পরিচয় পত্রের মধ্যে থাকা রক্তের গ্রুপ সংশোধন,
- এছাড়াও আপনার জন্মস্থান এর নাম পরিবর্তন,
- জাতীয় পরিচয় পত্রের মধ্যে থাকা বর্তমান ঠিকানা সংশোধন,
- ভোটার আইডি কার্ড এর মধ্যে থাকা লিঙ্গ অথবা জন্ম নিবন্ধন নম্বর এর সংশোধন,
তো আমাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের মধ্যে কোন ধরনের বিষয় গুলো কে তথ্য সংশোধন হিসেবে ধরা হয়। সেই বিষয় গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর বাইরেও যে সকল অন্যান্য তথ্য সংশোধনের বিষয় রয়েছে। সে গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
ভোটার আইডি কার্ড এর অন্যান্য তথ্য সংশোধন বলতে কি বুঝায় ?
একটি ভোটার আইডি কার্ড এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংশোধন করার প্রয়োজন হয়। যদিও বা উপরে আমি আপনাকে বেশ কিছু বিষয় কে উল্লেখ করে দিয়েছি। তবে তারপরেও এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যে গুলো তথ্য সংশোধন হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এবং সে গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো। যেমন,
- মোবাইল নম্বর,
- ধর্ম,
- পাসপোর্ট নম্বর,
- শিক্ষাগত যোগ্যতা,
- ব্যক্তিগত পেশা,
- ভোটার আইডি কার্ডের স্বামী অথবা স্ত্রীর তথ্য,
- টিন নম্বর,
মূলত এই সব কিছুকে ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য সংশোধন হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। আশা করি, এই বিষয় টি সম্পর্কে আপনি একবারে পরিষ্কার ধারণা পেয়ে গেছেন।
জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য সংশোধন ফি হিসেব করার সহজ পদ্ধতি
আপনি চাইলে খুব সহজ একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য সংশোধন ফি হিসাব করে নিতে পারবেন। আর আপনি যখন সেই পদ্ধতি টি জানতে পারবেন ।তখন আর আপনাকে বারবার গুগল এর মধ্যে এসে জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য সংশোধন ফি সম্পর্কে জানার প্রয়োজন হবে না। আর সেই পদ্ধতি টি নিচে উল্লেখ করা হলো।
প্রথমে আপনি এখানে ক্লিক করুন আর। আপনি যখন এই লিংকে ক্লিক করবেন তারপর আপনাকে একটি ওয়েবসাইটে নিয়ে যাওয়া হবে। তো সেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আপনাকে মোট তিন (০৩) টি তথ্য দিতে হবে। আর সেই তথ্য গুলো হলো,
- আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর,
- আপনার আবেদন এর ধরন,
- এবং জাতীয় পরিচয় পত্র বিতরণ এর ধরন,
তো আপনি যখন উপরের এই তথ্য গুলো প্রদান করবেন। তখন আপনার সেই তথ্য সংশোধন করার জন্য মোট কত টাকা ফি হিসেবে দিতে হবে। সেই টাকার পরিমাণ টি আপনি দেখে নিতে পারবেন।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে?
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে। তো এই বিষয় টি জানার পরে এবার আপনাকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। সেটি হল, ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কতদিন লাগে।
তো একটি ভোটার আইডি কার্ড এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের সংশোধন করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময়ের প্রয়োজন হয়। কেননা ভোটার আইডি কার্ডের মধ্যে থাকা তথ্য সংশোধন করার বিষয় গুলো কে বেশ কয়েক টি ক্যাটাগরি তে বিভক্ত করা হয়ে থাকে।
আর সেই ক্যাটাগরি অনুযায়ী নির্ভর করবে যে, আপনার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে মোট কত দিন সময় লাগবে। যেমন,
- ”ক” ক্যাটাগরির সংশোধনের হিসেবে উপজেলা নির্বাচন অফিসার দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকবেন। আর এক্ষেত্রে আপনার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে মোট ০৭ দিন সময় লাগবে।
- এছাড়াও ”খ” ক্যাটাগরির সংশোধন হিসেবে জেলা নির্বাচন অফিসার দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকবেন। আর সে জন্য মোট ১৫ দিন সময় লাগবে।
- ”গ” ক্যাটাগরির সংশোধনের জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার দায়িত্ব প্রাপ্ত হিসেবে থাকবেন। এবং সে জন্য মোট ৩০ দিন সময় লাগবে।
- সবশেষে ”ঘ” ক্যাটাগরির সংশোধনের জন্য Nid wing এর মহাপরিচালক দায়ীত্ব প্রাপ্ত থাকবেন। সেক্ষেত্রে মোট ৪৫ দিন সময় লাগবে।
উপরের আলোচনা তে বিভিন্ন ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে সেটি উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন নিয়ে আমাদের শেষকথা
প্রিয় পাঠক, আজকে এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল এর মাধ্যমে। আমি আপনাদের ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে সে সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য জানিয়ে দিয়েছি। এর পাশাপাশি আপনি কিভাবে খুব সহজেই আপনার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগবে সেটি হিসাব করতে পারবেন। সে পদ্ধতি টি ধাপে ধাপে দেখিয়ে দিয়েছি।
আশা করি, আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল থেকে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। আর আপনি যদি এই ধরনের উপকারী তথ্য গুলো বিনামূল্যে পেতে চান। তাহলে অবশ্যই আমাদের সাথে থাকার চেষ্টা করবেন। ধন্যবাদ, এতক্ষণ ধরে আমার লেখা আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।