আমরা সকলেই জানি যে, টিন সার্টিফিকেট হলো একজন করদাতার পরিচয় নম্বর (Taxpayer Identification Number)। এটি আমাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে দরকার হয়।
যদি আপনার টিন সার্টিফিকেট হারিয়ে যায় বা কোনো কারণে ডাউনলোড করার প্রয়োজন হয়, তাহলে কিভাবে অনলাইন থেকে টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করবেন তা নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।
Tin Certificate কিভাবে বের করতে হয় বা কিভাবে টিন সার্টিফিকেট পাবো এবং অনলাইনে কিভাবে ডাউনলোড করতে হয় (Rules for getting TIN certificate online) সেই সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
আপনি আরোও দেখতে পারেন…
- অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট যাচাই করার নিয়ম
- টিন সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম
- টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম
টিন সার্টিফিকেট কি? (What is TIN Certificate)
যখন আপনি বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে করযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবেন, তখন আপনাকে অবশ্যই প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ট্যাক্স বা কর প্রদান করতে হবে।
আর যখন আপনি কর প্রদান করবেন, তখন করদাতা হিসেবে আপনার একটি পরিচিতি নম্বর থাকবে। মূলত এই নম্বরযুক্ত বিশেষ সনদকেই বলা হয় টিন সার্টিফিকেট (TIN Certificate)।
টিন এর পূর্ণরূপ হলো ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (Taxpayer Identification Number)। এটি একটি ১২-সংখ্যার (বর্তমানে) বিশেষ পরিচিতি সংখ্যা, যা বাংলাদেশে করদাতাদের শনাক্তকরণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কর্তৃক প্রদান করা হয়।
টিন সার্টিফিকেট মূলত এই ১২-সংখ্যার নম্বরটিই বহন করে। এই নম্বরটির মাধ্যমেই একজন কর প্রদানকারী ব্যক্তিকে সহজে শনাক্ত করা যায়। অর্থাৎ, টিন বা টিন সার্টিফিকেট একজন করদাতার পরিচয়পত্রের মতোই কাজ করে।
টিন সার্টিফিকেট কেন প্রয়োজন? (Why TIN Certificate is needed)
টিন সার্টিফিকেট কেন প্রয়োজন, এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে এটি শুধু কর প্রদানের জন্যই নয়, বরং একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবন এবং বিভিন্ন আর্থিক ও আইনি কর্মকাণ্ডের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিচে এর কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:
- ব্যবসা পরিচালনায়: নতুন ব্যবসা নিবন্ধনের সময় টিন নম্বর আবশ্যক।
- ব্যাংক লেনদেনে: ব্যাংক ঋণ গ্রহণ, উচ্চ অঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিট বা অন্যান্য বড় লেনদেনের জন্য টিন নম্বর প্রয়োজন।
- সম্পত্তি কেনাবেচায়: জমি, ফ্ল্যাট বা বাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ে টিন নম্বর বাধ্যতামূলক।
- গাড়ি নিবন্ধনে: নতুন গাড়ি ক্রয়ের সময় এটি ব্যবহার করা হয়।
- ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে: বার্ষিক আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে টিন নম্বর প্রয়োজন।
সার্বিকভাবে, টিন সার্টিফিকেট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর নির্ধারণ ও আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনয়নে একটি অপরিহার্য নথি।
অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট বের করার নিয়ম
আজকের আর্টিকেলের মূল আলোচ্য বিষয় হলো, অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট বের করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো।
এবার আমি আপনাকে ধাপে ধাপে অনলাইন থেকে টিন সার্টিফিকেট বের করার প্রক্রিয়া বলবো। সেজন্য আপনাকে নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে হবে।
একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন
আপনি যদি অনলাইন থেকে টিন সার্টিফিকেট বের করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে বাংলাদেশ ইনকাম ট্যাক্স এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
আর আপনি চাইলে সরাসরি secure.incometax.gov.bd এই ওয়েবসাইটের মধ্যে প্রবেশ করতে হবে। তো যখন আপনি এই ওয়েব সাইটে প্রথমবার প্রবেশ করবেন। তখন আপনাকে টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
আর উক্ত ওয়েবসাইটের মধ্যে প্রবেশ করার সাথে সাথেই আপনি “Register” নামক একটি বাটন দেখতে পারবেন। আপনাকে সেই বাটনের মধ্যেই ক্লিক করতে হবে।
এরপর আপনি ঠিক নিচের পিকচারে দেখানো একটি ছোট ফরম দেখতে পারবেন। যেখানে আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো সঠিক ভাবে প্রদান করতে হবে।
উপরের ছবিটি তে যে সকল বিষয় দেখতে পাচ্ছেন। সেই বিষয় গুলো আপনি বাংলাদেশ ইনকাম ট্যাক্স এর ওয়েবসাইটে দেখতে পারবেন।
তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা উচিত। যখন আপনি একজন নতুন ব্যক্তি হিসেবে বাংলাদেশ ইনকাম ট্যাক্স এর ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরি করবেন।
তখন এই অ্যাকাউন্ট যাবতীয় তথ্য গুলো নিজের কাছে সংরক্ষণ করে রাখবেন। যেমন, আপনার একাউন্টের ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি।
একটিভেশন কোড ভেরিফিকেশন
যখন আপনি নতুন একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করবেন, তখন আপনাকে অবশ্যই একটি সচল মোবাইল নম্বর প্রদান করতে হবে।
মোবাইল নম্বর প্রদান করার পর, সঠিকভাবে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে, আপনার মোবাইলে একটি ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হবে।
আপনাকে সেই ভেরিফিকেশন কোডটি সঠিকভাবে প্রবেশ করাতে হবে। কোডটি সঠিকভাবে ইনপুট করার পর, আপনি বাংলাদেশ ইনকাম ট্যাক্সের মূল ওয়েবসাইটে সফলভাবে একটি নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারবেন।
টিন সার্টিফিকেট আবেদন ফর্ম পূরণ | টিন সার্টিফিকেট তৈরী
উপরের ধাপ গুলো সঠিক ভাবে সম্পন্ন করার পর আপনি যে ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন। সে গুলোর মাধ্যমে আপনাকে পুনরায় লগইন করতে হবে।
আর লগইন করার সাথে সাথেই আপনি নিচের পিকচারের মত একটি ইন্টারফেস দেখতে পারবেন। এবং সবার বাম পাশের ”TIN Application” নামক অপশন এর মধ্যে ক্লিক করবেন।
যখন আপনি উপরের ধাপগুলোর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট অপশনে ক্লিক করবেন, তখন আপনার সামনে একটি নতুন ইন্টারফেস প্রদর্শিত হবে। এখানে আপনাকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করতে হবে।
অথবা যদি আপনি উপরের মত ইন্টারফেস দেখতে পারেন। তাহলে এখান থেকে আপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে হবে।
Purpose of TIN (TIN-এর উদ্দেশ্য)
এখানে আপনি TIN আবেদন করার কারণ সিলেক্ট করবেন।
- Declaring Taxable Income: আপনার আয়কর জমা দেওয়ার জন্য।
- Obtaining a Credit Card: ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য TIN প্রয়োজন হলে এটি নির্বাচন করুন।
- Selling Land: জমি বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় হলে এটি নির্বাচন করুন।
- Others: যদি উপরের অপশনগুলোর মধ্যে আপনার উদ্দেশ্য না থাকে, তাহলে “Others” নির্বাচন করে নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করতে পারেন।
TIN Applying For (TIN-এর জন্য আবেদন করছেন)
প্রথমেই আপনাকে করদাতার ধরন সিলেক্ট করতে হবে।
- আপনি যদি একজন বাংলাদেশি হন, তাহলে অবশ্যই “Individual Bangladesh” নির্বাচন করবেন।
- যদি আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হন এবং আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) থাকে, তাহলে পরবর্তী ধাপে “Having NID” নির্বাচন করুন।
- তবে, যদি আপনার বয়স ১৮ বছরের কম হয়, তাহলে “Minor/Dependent” সিলেক্ট করতে হবে।
Income Category (আয়ের বিভাগ)
আপনার আয়ের ধরন বা পেশা অনুযায়ী সঠিক বিভাগ নির্বাচন করুন।
- Service: যদি আপনি চাকরিজীবী হন, তাহলে এই অপশনটি নির্বাচন করুন।
- Business: ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকলে এটি নির্বাচন করুন।
- Other Categories: অন্যান্য আয়ের উৎস থাকলে তা নির্ধারণ করুন।
District of Income Source (আয়ের উৎসের জেলা)
আপনার আয়ের উৎসের স্থান বা অবস্থান নির্বাচন করতে হবে।
- উদাহরণ: ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ইত্যাদি।
- এখানে সেই জেলার নাম নির্বাচন করতে হবে যেখানে আপনি আয়ের উৎস চালাচ্ছেন বা আয়ের কার্যক্রম রয়েছে।
Source of Income (আয়ের উৎস)
আপনার আয়ের উৎস নির্বাচন করুন। অর্থাৎ আপনি কিভাবে টাকা ইনকাম করেন। তার সঠিক ক্যাটাগরি সিলেক্ট করা।
- Capital Gain: যদি আপনার আয়ের উৎস মূলধনের উপর লাভ থেকে আসে, তাহলে এটি নির্বাচন করুন।
- Salary: চাকরি থেকে প্রাপ্ত বেতন হলে এটি নির্বাচন করুন।
- Business Income: ব্যবসা থেকে আয়।
- Others: যদি আপনার আয়ের উৎস উল্লেখিত অপশনগুলোর বাইরে হয়, তাহলে “Others” নির্বাচন করুন।
যদি আপনার আয়ের উৎস সরাসরি তালিকায় না থাকে, তবে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। এমন পরিস্থিতিতে আপনার পেশার সঙ্গে সম্পর্কিত সবচেয়ে নিকটবর্তী অপশনটি সিলেক্ট করুন এবং Go to Next দিন।
ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা
উপরের ধাপ গুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করার পরে আপনাকে পুনরায় আরও একটি নতুন পেজে নিয়ে যাওয়া হবে। মূলত এই পেজে আপনি আরও একটি ফর্ম দেখতে পারবেন (Must write in English)।
যেখানে আপনার ব্যক্তিগত ঠিকানা গুলো উল্লেখ করে দিতে হবে। এবং উক্ত পেজটি দেখতে কেমন হবে তা আপনি নিচের পিকচারে দেখতে পারছেন।
তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা উচিত। আপনি এই ফর্ম এর মধ্যে যখন আপনার ঠিকানা গুলো উল্লেখ করবেন। তখন অবশ্যই আপনাকে ইংরেজি তে টাইপ করতে হবে।
এবং আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের মধ্যে যে ঠিকানা আছে। সে গুলোর সাথে মিল রেখে এই ফরমের মধ্যে আপনার স্থায়ী ঠিকানা এবং অস্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করে দিবেন।
আর আপনি যখন আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা গুলো সঠিকভাবে প্রদান করবেন। তারপর আপনাকে আবারো ”Go to Next” নামক বাটনের মধ্যে ক্লিক করতে হবে।
টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড
যখন আপনি উপরের সকল ধাপ গুলো ফলো করবেন। তারপর আপনি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য অনুযায়ী আপনার ব্যক্তিগত ডেটা গুলো দেখতে পারবেন।
আর যদি আপনি এমনটা দেখতে পারেন। তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে যে, আপনার টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার জন্য পুরোপুরি ভাবে তৈরি হয়ে গেছে।
এখন আপনাকে সবার নিচের ”I hereby affirm that all information given above is correct and complete and I have not taken any TIN”.
এই অপশনের মধ্যে টিক মার্ক দিবেন। আর সবশেষে আপনাকে “Submit Application” বাটন এর মধ্যে ক্লিক করতে হবে।
এরপর আপনি নতুন একটি পেজে প্রবেশ করবেন। সেই পেজটি হলো আপনার টিন সার্টিফিকেট এবং এই সার্টিফিকেট আপনি আপনার মোবাইল অথবা কম্পিউটারের মধ্যে পিডিএফ ফাইল হিসেবে ডাউনলোড করে রাখতে পারবেন।
আর সেই পিডিএফ ফাইল টি পরবর্তীতে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
Tin নিয়ে আপনার জন্য আরোও আছে…
- হারানো টিন সার্টিফিকেট বের করার নিয়ম
- টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি কর দিতে হবে?
- যেসব ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার প্রমাণ দেখাতে হবে]
কত টাকা আয় হলে আয়কর দিতে হবে?
আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা আসলে একটা ভুল ধারণা কে বিশ্বাস করে। আর সেটি হল, আমরা অনেকেই মনে করি যে টিন সার্টিফিকেট থাকলেই হয়তোবা কর প্রদান করতে হয়।
কিন্তু বিষয় টা আসলে এমন নয়। বরং আপনি যখন বাংলাদেশের কর কমিশন এর আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণ টাকা বছরে ইনকাম করবেন। ঠিক তখনই আপনাকে কর প্রদান করতে হবে।
তবে আপনার নিকট যদি টিন সার্টিফিকেট থাকে। তাহলে অবশ্যই আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
আর যদি আপনি একজন পুরুষ মানুষ হয়ে আপনার বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ ০৩ লাখ টাকা এর বেশি হয়। তাহলে অবশ্যই আপনাকে কর প্রদান করতে হবে।
এবং আপনি যদি একজন মহিলা মানুষ হয়ে থাকেন। এবং আর আপনার বাৎসরিক ইনকাম যদি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হয়। তাহলে আপনাকেও বাধ্যতামূলক আয়কর প্রদান করতে হবে।
কিন্তু আপনার ইনকাম যদি উপরে উল্লেখিত টাকা পরিমাণের চেয়ে কম হয়। সেক্ষেত্রে আপনাকে আর আয়কর দেয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
কিন্তু যদি আপনার কাছে টিন সার্টিফিকেট থাকে। তাহলে অবশ্যই আপনাকে জিরো রিটার্ন জমা দিতে হবে। মনে রাখবেন, এটা কিন্তু বাধ্যতামূলক একটি বিষয়।
টিন সার্টিফিকেট কেন দরকার?
উপরের আলোচনা থেকে আমরা টিন সার্টিফিকেট কি এবং কত টাকা হলে আয়কর জমা দিতে হয় সে সম্পর্কে জানতে পারলাম।
তবে এই বিষয় গুলো জানার পাশাপাশি, আমাদের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। সেটি হল, কেন আমাদের টিন সার্টিফিকেট দরকার হয়।
তো আমরা অনেকেই মনে করি যে, শুধুমাত্র চাকরিজীবী কিংবা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেটের দরকার হয়।
কিন্তু বিষয়টা এমন নয় বরং আমাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে টিন সার্টিফিকেট এর দরকার হয়। আর সেই প্রয়োজন গুলো নিচের তালিকাতে উল্লেখ করা হলো। যেমন,
- আপনি যদি কোন ধরনের ব্যবসা শুরু করতে চান।
- যদি আপনি গাড়ির মালিক হয়ে থাকেন।
- নির্দিষ্ট কোন সিটি কর্পোরেশন এর আওতায় থাকা অঞ্চলে জমি, ফ্ল্যাট কিংবা ভবন নির্মাণ করতে চান।
- কোন কারনে আপনি যখন ক্রেডিট কার্ড করবেন।
- সঞ্চয়পত্র কেনার সময় টিন সার্টিফিকেটের দরকার হয়।
- যখন আপনার নিজের কোন কোম্পানি থাকবে। তখন সেই কোম্পানির নিবন্ধন করার সময়।
- আপনি যখন কোন নির্দিষ্ট একটি কোম্পানির শেয়ার কিনবেন।
- বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানির লাইসেন্স করার সময়।
- এছাড়াও আইনজীবী, চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলীদের পেশার চর্চা করার সময়।
- যখন আপনি কোন নির্বাচনী প্রার্থী হিসেবে নিযুক্ত থাকবেন।
- কোন ধরনের ব্যবসায়িক সংগঠন কিংবা সম্মতি নিবন্ধন করার সময়।
- রাইট শেয়ারিং এর মধ্যে নিজের গাড়ি দেওয়ার সময়।
আমি উপরে আপনাদের বলেছি যে, এমন অনেক ধরনের কারণ রয়েছে। যে কারণ গুলোর জন্য আমাদের টিন সার্টিফিকেট এর দরকার হয়।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ গুলো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। এর বাইরে আরো অনেক কারণ রয়েছে, যে গুলোর জন্য আমাদের টিন সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন হয়ে থাকে।
টিন সার্টিফিকেটের সুবিধাসমূহ
যদি আপনি ভেবে থাকেন যে, আপনার নিকট যদি টিন সার্টিফিকেট থাকে। তাহলে আপনার বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা পোহাতে হবে। তাহলে আপনার ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল।
কেননা যখন আপনার কাছে টিন সার্টিফিকেট থাকবে, তখন আপনি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। আর সেই সুবিধা গুলো হলো,
- আপনার নিকট যখন টিন সার্টিফিকেট থাকবে। তখন আপনি বিভিন্ন পেশাজীবী বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে সরকারের নিকট থেকে প্রণোদনা পাবেন।
- যখন আপনি ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করবেন। তখন আপনার টিন সার্টিফিকেট খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
- সঞ্চয়পত্র কেনার সময় আপনার ব্যাংকের অর্থের উপর ১০% কর কর্তন করা হবে। কিন্তু যদি আপনার নিকট টিন সার্টিফিকেট না থাকে। তাহলে আপনার ১৫% কর কর্তন করা হবে।
তো আপনার নিকট যখন টিন সার্টিফিকেট থাকবে। তখন আপনি যে সকল সুবিধা গুলো ভোগ করতে পারবেন।
সে গুলো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। আশা করি এ সম্পর্কে আপনি পরিষ্কার ধারণা পেয়ে গেছেন। চলুন এবার তাহলে টিন সার্টিফিকেট এর বেশ কিছু অসুবিধা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
টিন সার্টিফিকেট এর অসুবিধা গুলো কি কি?
আপনার নিকট টিন সার্টিফিকেট আছে এর মানে আপনি শুধুমাত্র সুবিধা ভোগ করবেন বিষয়টা কিন্তু এমন নয়।
বরং টিন সার্টিফিকেট থাকলে আপনাকে বেশ কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। আর এবার আমি আপনাকে টিন সার্টিফিকেট এর অসুবিধা গুলো সম্পর্কে জানিয়ে দিব।
যদি আপনার নিকট টিন সার্টিফিকেট থাকে। তাহলে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা টি হবে সেটি হল আপনাকে অবশ্যই আয়করর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
এখন আপনার করযোগ্য আয় থাকুক বা না থাকুক সেটা বড় বিষয় নয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হল আপনাকে বাধ্যতামুলক আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
এখন আপনি যদি মনে করেন যে, আপনি আয়কর দাখিল করবেন না। সে ক্ষেত্রে কিন্তু আপনি আরো বিপদে পড়বেন। সেই বিপদ টি হল, আপনি আয়কর রিটার্ন দাখিল না করে যে পরিমাণ টাকা আয় করবেন।
সে গুলো কে অবৈধ টাকা হিসেবে গণ্য করা হবে। অর্থাৎ সরকারের কাছে আপনার আয় করা টাকা গুলো কালো টাকা হিসেবে চিহ্নিত হবে।
তো বুঝতেই পারছেন যে, আপনার নিকট যখন টিন সার্টিফিকেট থাকবে। তখন আপনার আসলে কি কি অসুবিধা গুলো হবে। তবে আপনি যদি নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন।
সে ক্ষেত্রে কিন্তু আপনার কোন ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। তাই আপনার উচিত সময় মত আয়কর রিটার্ন দাখিল করা।
আমি টিন সার্টিফিকেট কিভাবে পাবো?
আলোচনার শুরুতেই আমি আপনাদের একটা কথা বলেছি। আর সেই কথাটি হল, এমন অনেক কারণ রয়েছে যে গুলোর জন্য আমাদের টিন সার্টিফিকেট এর দরকার হয়।
তো কোনো কারণে যদি আপনারও টিন সার্টিফিকেটের দরকার হয়। তাহলে আপনি খুব গসহজেই মাত্র কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করে টিন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন।
সেজন্য অবশ্যই আপনার বয়স ১৮ বছর হতে হবে। তারপর আপনাকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে। আর যখন আপনি বাংলাদেশ ইনকাম ট্যাক্স এর ওয়েবসাইটে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করবেন।
এবং আপনি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য গুলো দিয়ে টিন সার্টিফিকেট এর জন্য আবেদন করবেন। তারপরে মাত্র কয়েকটা মিনিট পরে আপনি আপনার টিন সার্টিফিকেট পেয়ে যাবেন।
আয়কর রিটার্ন দাখিল
যদি আপনার নিকট টিন সার্টিফিকেট থাকে। তাহলে কিন্তু অবশ্যই আপনাকে একটা নিয়ম মেনে যেতে হবে। আর সেই নিয়মটি হলো, প্রতি বছরের নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
আর বর্তমান সময়ে আপনি আমাদের বাংলাদেশ থেকে খুব সহজেই কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে কোন ধরনের জটিলতার মধ্যে পড়তে হবে না।
হারানো টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড
কোনো কারণে যদি আপনার টিন সার্টিফিকেট হারিয়ে যায়। তাহলে আপনি পুনরায় আপনার হারানো টিন সার্টিফিকেট ফেরত আনতে পারবেন।
- [হারানো টিন সার্টিফিকেট বের করার নিয়ম
- কিভাবে আয়কর কম দেয়া যায় সেগুলো জানুন
- বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম]
তবে তার জন্য আপনাকে E Return এবং e-tin Registration ওয়েবসাইট এর মধ্যে যেতে হবে। তারপর সেখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো দিয়ে আপনি পুনরায় আপনারা হারানোর টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
টিন সার্টিফিকেট নিয়ে আমাদের শেষকথা
প্রিয় পাঠক, আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট বের করার নিয়ম গুলো সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছি।
এর পাশাপাশি যদি আপনি আপনার টিন সার্টিফিকেট হারিয়ে ফেলেন। তাহলে কোন ওয়েবসাইট থেকে আপনার হারিয়ে যাওয়ার টিন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিয়েছি।
তো আশা করি, আজকের আলোচিত তথ্য গুলো সম্পর্কে আপনি পরিষ্কার ধারণা পেয়ে গেছেন।
আর এই ধরনের অজানা বিষয় গুলো খুব সহজ ভাষায় জানতে হলে, অবশ্যই আমাদের সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। এবং নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।