কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায় ; বর্তমান সময়ে ভ্রমন, চাকরি কিংবা পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ইউরোপ এর দেশ গুলোতে যেতে চায়।
কারণ আমরা সবাই জানি যে, ইউরোপের দেশ গুলো অন্যান্য দেশের থেকে অনেক উন্নত। আর ইউরোপের দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানও অনেক উন্নত।
তবে সমস্যা হলো ইউরোপ এর দেশ গুলো তে যেতে হলে আমাদের অনেক বেশি টাকা খরচ করার দরকার হয়। তাই আমরা অনেকেই জানতে চাই যে, কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায়।
তো সেই দেশ গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারনা দেওয়ার জন্যই আজকের এই আর্টিকেল টি লেখা হয়েছে। যদি আপনি সে গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে নিচের আলোচিত আলোচনায় চোখ রাখুন।
বাংলাদেশ থেকে কম খরচে ইউরোপ যাওয়া সম্ভব?
বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ এর দেশে যেতে হলে অনেক বেশি টাকা খরচ করার দরকার হয়। যে খরচের ভার সবার পক্ষে বহন করা সম্ভব হয়না।
তাই আমরা জানতে চাই যে, বাংলাদেশ থেকে কম খরচে ইউরোপ যাওয়া সম্ভব হবে কিনা। তো তাদের উদ্দেশ্যে বলবো যে, আপনি আমাদের বাংলাদেশ থেকে কম খরচেও ইউরোপ যেতে পারবেন।
আর বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের মূল যে খরচ গুলো করতে হয় সেগুলো হলো, বিমান ভাড়া, হোটেল ভাড়া, খাবারের খরচ এবং পরিবহনের খরচ।
আপনি আরোও দেখতে পারেন…
এখন আপনি যদি এই খরচ গুলোর পরিমান কিছুটা কমিয়ে নিয়ে আসতে পারেন তাহলে আপনার ইউরোপ যাওয়ার খরচও কম হবে। সেজন্য আপনাকে বেশ কিছু পদ্ধতি ফলো করতে হবে। যেমন,
০১ – সাশ্রয়ী এয়ারলাইন্স ব্যবহার করুন
আমরা সবাই জানি যে, বিদেশে যেতে হলে আমাদের অনেক টাকা ব্যয় করতে হয় এয়ারলাইন্স এর জন্য। তবে আপনি যদি কম খরচে ইউরোপের দেশ গুলোতে যেতে চান, তাহলে আপনাকে সস্তা এয়ারলাইনস এর মাধ্যমে ইউরোপ যেতে হবে।
যার ফলে আপনার ইউরোপ যাওয়ার খরচ কিছুটা কম হবে।
০২ – স্থানীয় খাবার খান
সাধারনত ইউরোপের খাবারের দাম কিছুটা বেশি হয়। তাই আপনি যদি স্থানীয় খাবার খেতে পারেন তাহলে আপনার ইউরোপের রেস্তোরাঁ এবং বাজার থেকে খাবার কেনার খরচ কিছুটা হলেও কম হবে।যা আপনার ইউরোপ যাওয়ার মোট খরচের পরিমান অনেকটা কমিয়ে দিবে।
০৩ – হোস্টেল বা ক্যাম্পিং করুন
যখন আপনি আমাদের দেশ থেকে অন্য কোনো দেশে যাবেন তখন আপনাকে সেই দেশে থাকার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি হোটেল ভাড়া করতে চান তাহলে আপনাকে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হবে।
কিন্তুু যদি আপনি সাস্তা হোস্টেল অথবা ক্যাম্পিং সাইট ব্যবহার করেন তবে আপনার ইউরোপ ভ্রমণ খরচ অনেক কমে যাবে।
০৪ – পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন
ইউরোপের দেশ গুলোতে পরিবহন খরচ কিছুটা বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তুু আপনার প্রয়োজন কম খরচে ইউরোপ ভ্রমন করা। তাই আপনি ইউরোপের দেশে যাওয়ার পর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।
এতে করে আপনার ভ্রমন খরচ অনেক কম হবে।
০৫ – সাশ্রয়ী ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন
যখন আপনি কোনো দেশে ভ্রমন করার পরিকল্পনা করবেন তখন সেই পরিকল্পনার উপরে খরচের পরিমান নির্ভর করবে। তাই যেহুতু আপনি কম খরচে ইউরোপ যেতে চান সেহুতু আপনার ভ্রমন করার পরিকল্পনাও সাশ্রয়ী হওয়া দরকার।
তো যদি আপনি উপরে দেখানো পদ্ধতি গুলো ফলো করেন। তাহলে আপনি বাংলাদেশ থেকে কম খরচে ইউরোপ এর বিভিন্ন দেশে যেতে পারবেন।
তবে বর্তমান সময়ে ইউরোপ এর এমন অনেক দেশ আছে যে দেশ গুলোতে আপনি তুলনামূলক কম খরচে যেতে পারবেন। আর এবার আমি আপনাকে সেই দেশ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো।
কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায়?
এতক্ষনের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে কিভাবে আপনি আপনার ইউরোপ যাওয়ার খরচ কমিয়ে আনতে পারবেন।
তবে ইউরোপ এর এমন কিছু দেশ আছে যে দেশ গুলোতে যাওয়ার জন্য কিছু হলেও খরচ কম হয় অন্যান্য দেশের তুলনায়। আর এবার আমি আপনার সাথে সেই দেশ গুলো নিয়ে বিস্তারিত বলবো।
কম খরচে লাটভিয়া ভ্রমন করুন
লাটভিয়া হলো একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস সমৃদ্ধ এবং পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় একটি দেশ। যে দেশটির অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ লাটভিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।
তবে এটা মানতে হবে যে, লাটভিয়ার মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় কিছুটা বেশি। তাই আপনি যদি কম খরচে লাটভিয়া যেতে চান তাহলে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে।
যেমন আমাদের বাংলাদেশ থেকে লাটভিয়ার সরাসরি ফ্লাইট না থাকার কারণে আপনাকে অন্য ইউরোপীয় শহর থেকে লাটভিয়ায় যেতে হবে। তাই চেষ্টা করবেন স্বল্পমূল্যের এয়ারলাইন্স গুলো ব্যবহার করার জন্য।
এছাড়াও আপনি সেখানে যেসব হোস্টেলে থাকবেন, যেখানে খাওয়া করবেন সেগুলো তে চেষ্টা করবেন কম খরচে থাকা ও খাওয়ার চেস্টা করার।
কারন, লাটভিয়াতে আপনি যতো বিলাসবহুল ভাবে জীবন পার করবেন আপনার খরচের পরিমানও অনেক বেশি হবে।
কম খরচে লিথুনিয়া যেতে পারবেন
একটা বিষয় আমরা সকলেই বেশ ভালো করে জানি। সেটি হলো, ইউরোপের দেশ সুইডেন এর বিপরীত পাশে অবস্থিত দেশের নাম হলো লিথুয়ানিয়া। বর্তমানে, বাংলাদেশ থেকে লিথুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি স্টুডেন্ট ভিসায় সুবিধা পায়।
এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষার জন্য আবেদন করতে নিজেকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারবে। যে শিক্ষার মাধ্যমে আপনি নিজের সফল ক্যারিয়ার গড়ার যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা পাবেন।
তবে বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশ থেকে লিথুনিয়ার কাজের ভিসা পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
কম খরচে নেদারল্যান্ড
বর্তমান সময়ে অনেক মানুষ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে নেদারল্যান্ড যায়। তবে আমাদের দেশ থেকে নেদারল্যান্ড যাওয়ার খরচ অনেক বেশি। সচারচর যারা নিয়মিত নেদারল্যান্ডে ভ্রমন করার জন্য যান তারা একটি বিষয় ভালো করেই জানবেন।
সেটি হলো, গ্রীষ্মকাল নেদারল্যান্ডে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণের সময়। তাই এই সময়ে টিকিট এবং থাকার ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ব্যয়বহুল।
তো আপনি যদি অফ সিজনে নেদারল্যান্ড যেতে পারেন তাহলে আপনার খরচ কিছুটা কম হবে। সেজন্য আপনাকে শীতকালের সময়ে এই দেশে ভ্রমন করার জন্য যেতে হবে।
কিংবা আপনি বসন্তকালে গেলেও আপনার খরচ তুলনামূলক ভাবে কম হবে। এছাড়াও আপনি যদি নেদারল্যান্ডের হোস্টেলে থেকে নিজে রান্না করতে পারেন তাহলেও আপনার খরচ কম হবে।
কম খরচে ফ্রান্স যেতে পারবেন
আমরা সকলেই জানি যে, ফ্রান্স হলো ঐতিহাসিক এবং সংস্কৃতিক ধর্মশাস্ত্র এর একটি দেশ। আর এই দেশে আপনি আমাদের বাংলাদেশ থেকে ট্যুরিস্ট ভিসায় যেতে পারবেন।
তবে ইউরোপের মধ্যে থাকা অন্যান্য দেশ গুলোর তুলনায় কিছুটা কম খরচে ফ্রান্স যাওয়া যায়। কিন্তুু আপনি যখন পড়াশোনা কিংবা কাজের ভিসায় ফ্রান্স যাবেন।
তখন আপনাকে স্বাভাবিক খরচ করতে হবে। আর সময়ের সাথে সাথে যেমন আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে ফ্রান্স যাওয়ার আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। ঠিক তেমনি ভাবে পূর্বের তুলনায় ফ্রান্স যাওয়ার খরচের পরিমানও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পর্তুগাল ভ্রমন করুন
পর্তুগালের আয়তন ৯২,৩৫৫ বর্গকিলোমিটার। এই দেশের রাজধানীর নাম হলো, লিসবন। পর্তুগালের অর্থনীতি মূলত পর্যটন, কৃষি ও শিল্পের উপর নির্ভরশীল।
কারণ সময়ের সাথে সাথে এই দেশটির পর্যটন শিল্প বেশ বিকাশ লাভ করেছে। এছাড়াও কৃষি ক্ষেত্রে পর্তুগালে আঙ্গুর, গম, মাছ, এবং শস্য উৎপাদন এর দিক থেকেও বিশেষভাবে পরিচিতি অর্জন করতে পেরেছে।
তবে আপনারা যারা আমাদের বাংলাদেশ থেকে ভ্রমন করার জন্য যাবেন তাদের কিছু কথা জেনে রাখা দরকার। সেটি হলো, পর্তুগালে যে সমুদ্র সৈকত আছে সেগুলো দেখলে আপনার খুব ভালো লাগবে।
এছাড়াও এই দেশের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ঐতিহাসিক শহর ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের ব্যাপক ভাবে আকর্ষণ করে।
আপনি আরোও পড়তে পারেন…
- পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ওমানের ভিসা চেক করার নিয়ম
- ইউরোপের কোন দেশে যেতে কত টাকা লাগে
- ব্যাংক থেকে ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করার নিয়ম
মাল্টা থেকে ঘুরে আসুন
আপনি জানলে অবাক হবেন কারণ মাল্টা হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো, ওআইসি, জাতিসংঘ এর সদস্য। এই দেশটির মোট আয়তন: ৩১৬ বর্গ কি.মি. ২০২১ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মাল্টার মোট জনসংখ্যার পরিমান হলো, ৫১৮,৫৩৬ জন।
এছাড়াও মাল্টার আরো মোট ০৩ টি দ্বীপপুঞ্জ আছে। সে গুলো হলো, মাইনোরকা, গুজ্জেরা, গোজো। তো আপনি যদি আমাদের বাংলাদেশ থেকে মাল্টায় যেতে চান তাহলে আপনার যে কোনো একটি ভাষা শিখে নেওয়া দরকার।
সেই ভাষা গুলো হলো, মাল্টি (সরকারি ভাষা) কিংবা ইংরেজি ভাষা। কারণ মাল্টার মানুষ এই ভাষা গুলোতে কথা বলে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ সুইজারল্যান্ড
বর্তমান সময়ে ইউরোপীয় দেশ সুইজারল্যান্ড একটি ধনী দেশের তালিকায় রয়েছে। আর এই দেশটির মোট অর্থনীতি ব্যাংকিং সেবা, বীমা, শিল্প, এবং পর্যটন খাত এর উপর নির্ভরশীল।
গোট বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত এবং সুরক্ষিত ব্যাংকিং খাতের মধ্যে সুইজারল্যান্ড হলো অন্যতম একটি দেশ। বর্তমান সময়ে সুইজারল্যান্ড এর মোট আয়তন হলো, ৪১,২৮৫ বর্গ কিলোমিটার।
আর অবাক করার মতো বিষয় হলো সুইজারল্যান্ড এর মানুষ বিভিন্ন প্রকার ভাষায় কথা বলে। কারণ সুইজারল্যান্ডের ভাষা হলো জার্মান, ফরাসি, ইতালিয়, এবং রোমান্স।
আপনি আরোও দেখে নিন…
ধনী দেশ হাঙ্গেরি যেতে পারবেন
আপনি চাইলে কম খরচে ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরি ঘুরে আসতে পারবেন। যে দেশটির মোট আয়তন হলো, ৯৩,০৩০ বর্গ কিলোমিটার।
বর্তমান সময়ে এই দেশের সরকারি ভাষার নাম হলো, হাঙ্গেরীয়। আর হাঙ্গেরীর রাজধানীর নাম হলো বুদাপেস্ট। যে শহরকে হাঙ্গেরির সবচেয়ে বৃহৎ শহর হিসেবে ধরা হয়।
হাঙ্গেরী নামক এই ইউরোপীয় দেশটি অর্থনৈতিক দিক থেকেও অনেক উন্নত। কারণ এই দেশের মূল অর্থনৈতিক আয় পর্যটন, কৃষি ও শিল্প থেকে আসে।
এগুলোর পাশাপাশি হাঙ্গেরী ইলেকট্রনিক, টেক্সটাইল এবং নির্মাণ সামগ্রী উৎপাদনেও অনেক উন্নতি করতে পেরেছে।
আপনার জন্য লেখকের কিছুকথা
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের দেশে যেতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। তবে আপনি কিছুটা কম খরচে ফ্রান্স, মাল্টা, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, হাঙ্গেরি, পর্তুগাল, লিথুনিয়া, লাটভিয়া যেতে পারবেন।
তবে স্বাভাবিক ভাবে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের দেশে যেতে ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ করার দরকার হয়। আর আপনি যদি বিভিন্ন দেশবিদেশের পাসপোর্ট কিংবা ভিসা সম্পর্কে আপডেট তথ্য পেতে চান।
তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করবেন। এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।