বর্তমান সময়ে কাজের ভিসায় অন্যান্য দেশে যাওয়ার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়াতে যাওয়ার চাহিদা ক্রমাগত ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে আপনারা অনেকেই জানতে চান যে, অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে।
তো যার আসলে এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান, তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল টি লেখা হয়েছে। কারণ একজন বাংলাদেশী নাগরিকের অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে।
আর কিভাবে আপনি আমাদের বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসার আবেদন করতে পারবেন। সে বিষয় গুলো নিয়ে আজকে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করব।
তাহলে চলুন জেনে নেয় অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে জানি এবং তার সাথে আরোও অনেক তথ্য জানতে পারবেন।
অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা ২০২৪ কত টাকা লাগে?
আপনি চাইলে আমাদের বাংলাদেশ থেকে সরকারি ভাবে কাজের ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যেতে পারবেন। আর যদি আপনি সরকারী ভাবে কাজের ভিসায় অস্ট্রেলিয়ার যেতে পারেন। তাহলে আপনার ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মত খরচ হবে।
কিন্তু আপনি যদি বেসরকারি এজেন্সি গুলোর মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসায় যান, তাহলে আপনার খরচের পরিমাণ বেশি হবে।
কারণ বর্তমান সময়ে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে কাজের ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যেতে হলে আপনার প্রায় ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার মত খরচ করতে হবে।
তবে এজেন্সি ভেদে আপনার এই খরচের পরিমাণ কিছুটা কম অথবা কিছুটা বেশি হতে পারে। মূলত সেটা নির্ভর করবে আপনি কোন এজেন্সির মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসার আবেদন করবেন তার উপর।
অস্ট্রেলিয়া যেতে কত বছর বয়স লাগে?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের ভিসায় যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ বয়স থাকতে হয়। ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের বাংলাদেশ থেকে যারা কাজের ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যাবেন, তাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় লক্ষ্য করতে পারবেন।
কেননা আপনারা যারা আমাদের বাংলাদেশ থেকে কাজ করার জন্য অস্ট্রেলিয়া যাবেন তাদের সর্বনিম্ন বয়সের পরিমাণ ১৮ বছর হতে হবে। অর্থাৎ আপনার বয়স যদি ১৮ বছর এর কম হয়, তাহলে আপনি অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসায় যেতে পারবেন না।
অপরদিকে আপনার সর্বোচ্চ বয়স ৫৫ বছর এর মধ্যে হতে হবে। কেননা যদি আপনার বয়স ৫৫ বছর এর বেশি হয়, তাহলে আপনি অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসার জন্য অযোগ্য প্রার্থী বলে বিবেচিত হবেন।
সে ক্ষেত্রে বলা যায় যে, অস্ট্রেলিয়ার কাজের ভিসার জন্য আপনার সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স ৫৫ বছর হতে হবে।
কাজের ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যেতে কি কি লাগে?
কোন একটি দেশে প্রবেশ করার জন্য আপনি যখন ভিসা আবেদন করবেন। তখন আপনাকে বেশ কিছু ডকুমেন্টস প্রদান করতে হবে।
সেক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয়। আর আপনি যেহেতু কাজ করার জন্য অস্ট্রেলিয়া ভিসা আবেদন করবেন। সেহেতু অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে যে, কাজের বিষয় অস্ট্রেলিয়া যেতে কি কি লাগে।
তো বর্তমান সময়ে আপনারা যারা আমাদের বাংলাদেশ থেকে কাজের ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যাবেন। তাদের ভিসা আবেদন করার জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর দরকার হবে। সেই ডকুমেন্টস গুলোর তালিকা নিচে শেয়ার করা হলো। যেমন,
- করোনা ভ্যাজাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
- সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- স্বাস্থ্য বীমা।
- ব্যাংক সলভেন্সি স্টেটমেন্ট।
- আয়ের উৎসের প্রমাণপত্র।
- আইইএলটিএস (IELTS) সার্টিফিকেট।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
- মেডিকেল রিপোর্ট।
- কমপক্ষে ০৬ মাস মেয়াদী বৈধ পাসপোর্ট।
- পাসপোর্টে মোট তিন (০৩) টি পৃষ্ঠা ফাঁকা থাকতে হবে।
- অস্ট্রেলিয়ান ভিসা ফরম।
- অস্ট্রেলিয়াতে অবস্থান করার ঠিকানা।
- আপনার নিয়োগ কর্তার ঠিকানার তথ্য।
- নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্টস।
- অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকারী কোন আত্মীয় ভিসা প্রসেসিং করলে তার আমন্ত্রণ পত্র (যদি থাকে)।
আপনারা যারা অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসায় আবেদন করবেন, তাদের যে সকল ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হবে। সেই ডকুমেন্টস গুলোর তালিকা উপরে শেয়ার করা হয়েছে। আর আপনি অবশ্যই ভিসা আবেদন করার আগে এই ডকুমেন্ট গুলো সংগ্রহ করে রাখবেন।
অস্ট্রেলিয়া কাজের বেতন কত?
কোনো দেশে কাজের ভিসায় যাওয়ার আগে আপনাকে সেই দেশের কাজের বেতন জানতে হবে। আর এবার আমি আপনাকে বলবো বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকদের অস্ট্রেলিয়াতে কেমন বেতন দেওয়া হয়।
আমাদের বাংলাদেশ থেকে যারা কাজের ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যায়। তারা বিভিন্ন ধরনের কাজে নিযুক্ত থাকে যেমন, কনস্ট্রাকশন, ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক্যাল সহো আরো অন্যান্য কাজ করে।
আর আপনার যদি এই ধরনের কাজে ভালো অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে আপনি স্বাভাবিক ভাবে অস্ট্রেলিয়া তে প্রতি মাসে প্রায় ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের পর্যন্ত বেতন পাবেন।
এছাড়াও যাদের ড্রাইভিং, ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি ও ক্লিনার কাজের অভিজ্ঞতা থাকবে তারা ১,৫০০ থেকে ২,০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার পর্যন্ত বেতন পাবেন। কিন্তুু আপনি যদি সাধারণ কাজ করেন, তাহলে আপনার বেতন কিছুটা কম হবে।
যেমন, আপনি যদি অস্ট্রেলিয়াতে কৃষিকাজ কিংবা গবাদি পশু পালন এর কাজ করেন। তাহলে আপনার বেতন প্রায় ৪৫,০০০ টাকা থেকে ৭০,০০০ টাকা পর্যন্ত হবে।
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায়
বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসার সুযোগ রয়েছে। আর নিচের আলোচনায় সেই ভিসার তালিকা দেওয়া হল:
- ভিজিটর ভিসা
- কাজের ভিসা
- শিক্ষা ভিসা
- ব্যবসায়ী ভিসা
আপনারা যারা আমাদের বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে চান। তারা উপরের ভিসার মাধ্যমে যেতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে অনলাইনে কিংবা অস্ট্রেলিয়া অ্যাম্বাসি তে গিয়ে ভিসা আবেদন করতে হবে। তারপর সেই ভিসা হাতে পাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়াতে যেতে পারবেন।
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে কত সময় লাগে?
আপনি জানলে অবাক হবেন কারণ, অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশের মোট দুরত্ব হলো প্রায় ৭ হাজার ১৭১ কিলোমিটার। আর এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে আপনার প্রায় (০৯ – ১০) ঘণ্টার মতো সময় লাগবে।
আবার কিছু কিছু এয়ারলাইন্স এর ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া যেতে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ ঘন্টা সময় লাগে। তবে এই সময় নির্ভর করবে আপনার বিমান সংস্থার উপর। এছাড়াও আপনি আসলে কোন রুটে ভ্রমণ করছেন তার উপরেও উক্ত সময় নির্ভর করবে।
অস্ট্রেলিয়া সর্বনিম্ন বেতন কত?
অস্ট্রেলিয়া একটি ধনী দেশ, যেখানে জীবনযাত্রার ব্যয়ও অনেক বেশি। তাই, এই দেশে কর্মজীবীদের জন্য একটি ন্যায্য বেতন নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অস্ট্রেলিয়ার সরকার এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে এবং প্রতি বছর সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন বেতন ঘণ্টায় ২১.৩৮ অস্ট্রেলীয় ডলার। এই বেতন প্রতি সপ্তাহে ৩৮ ঘণ্টার কাজের ভিত্তিতে গণনা করা হয়। অর্থাৎ, একজন কর্মচারী সপ্তাহে ৭৬৪.৪৪ অস্ট্রেলীয় ডলার এবং বছরে ৪০,২৬০.৫৬ অস্ট্রেলীয় ডলার পাবেন।
FAQs
অস্ট্রেলিয়া কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ব্যয়বহুল?
অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই উন্নত দেশ এবং উভয় দেশেই জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি। তবে, সাধারণভাবে বলতে গেলে, অস্ট্রেলিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কিছুটা বেশি ব্যয়বহুল।
অস্ট্রেলিয়া কৃষি কাজের বেতন কত?
বর্তমান সময়ে অস্ট্রেলিয়াতে কৃষিকাজের ব্যাপক চাহিদা আছে। আর আপনারা যারা আমাদের বাংলাদেশ থেকে কৃষি ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যাবেন। তারা সাধারনত কৃষিকাজ ও গবাদিপশু পালন করার কাজ করেন। আর এই ধরনের কাজের বিনিময়ে অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪৫,০০০ টাকা থেকে ৭০,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পাবেন।
অস্ট্রেলিয়া এর মুদ্রার নাম কি?
অস্ট্রেলিয়া এর মুদ্রার নাম “অষ্ট্রেলিয়ান ডলার”।
অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কিভাবে পাওয়া যাবে?
আমরা অধিকাংশ মানুষ অস্ট্রেলিয়া ভিসা পাওয়ার জন্য এজেন্সির শরনাপন্ন হই। তবে আপনি যদি আমাদের বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া ভিসা পেতে চান। তাহলে আপনাকে অস্ট্রেলিয়ার অফিশিয়াল ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইট থেকে ভিসা আবেদন করতে হবে। আর সেই ওয়েবসাইট এর মধ্যে প্রবেশ করতে এখানে ক্লিক করুন।
অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ ৫টি কৃষি শিল্প কোন গুলো?
শস্য এবং তৈলবীজ, মাংস শিল্প, চিনি, তুলা এবং ওয়াইন শিল্প, উল ও দুগ্ধজাত শিল্প।
অস্ট্রেলিয়া কি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয়বহুল?
আমাদের বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশোনা করতে যায়। তো সাধারনত অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশোনা করার খরচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার তুলনায় কিছুটা কম।
অস্ট্রেলিয়া কৃষি ভিসার দাম কত টা্কা?
যারা আমাদের দেশ থেকে কৃষি ভিসায় অস্ট্রেলিয়া যেতে চান। তাদের প্রায় ৭ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ করতে হবে। আর সময়ভেদে এই খরচের পরিমান কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।
আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে সে বিষয়ে আজকে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসার বেতন কত সে সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা দেওয়া হয়েছে।
তো আশা করি, আজকের এই আর্টিকেল টি আপনার জন্য অনেক হেল্পফুল হবে। আর আপনি যদি বিভিন্ন দেশের পাসপোর্ট ও ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান।
তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করবেন। আর এতক্ষন ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।